Monday, December 31, 2007

সৃষ্টি


প্রায় এক মাসের সফল কর্মসূচির পর বরগুনা থেকে যখন ঢাকায় ফিরলাম তখন শরীর/মনের অবস্থা যাচ্ছেতাই। মনে মনে ভাবছিলাম লম্বা এক ডুব দিবো। সবকিছু থেকে। খাবো, দাবো, ঘুমে ডোম হবো। তেমন কিছুই হতে দিলো না নিয়তি। জরুরী তলব, বাড়িতে কোরবানি করতে হবে। অবশেষে চাঁন রাতে শেষ টিকিট নিয়ে যখন সৌদিয়ার বাস সার্ভিসে চেপে বসলাম তখনই ফোন। জানানো হলো বড় চাচা মারা গেছেন। গাজীপুর, দেড় ঘন্টার পথ। আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হলো তড়িগড়ি। বাস ছেড়ে দিবে একটু পর। দশ-বিশ-ত্রিশ গুনতে হলোনা। কর্তব্য বলতে শুধু অ্যামেরিকায় এন্সারিং মেশিনে এক মিনিটের বক্তৃতা দিয়েই সিটে শরীর এলিয়ে গভির ঘুমে মগ্ন হলাম। লোকটার প্রতি আমার কোনো মায়া-মমতা ছিলোনা। এখনো নাই। আমার ভেতরে অনেক অনেক জ্বালা, কষ্ট, হতাশা জাগিয়ে লোকটা হুট করে চলে গেছে। এতে আমার হতাশা বেড়েছে বৈ কমেনি।

যাইহোক, নিজের গ্রামে কিছু একটা করার স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কিভাবে শুরু করবো। অবশেষে সেটা এবার দেখতে পেলাম। গ্রামের একটা অংশ বাকি অংশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিপার্শ্বিক সব দিক থেকে তারা পিছিয়ে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেলাম এখানে শিক্ষার হার অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক কম। বন্ধুরা বললো ল্যাদা-ফ্যাদাদের শিক্ষার দিকে নজর দিতে। তাহলেই উন্নয়ন সম্ভব। আমি সেদিকে হাঁটলাম না। মা'দের নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছে করলো। এখানে বয়স্ক/বিবাহিত মহিলাদের শিক্ষার হার অনেক কম। ভেবে দেখলাম যদি এদের কোনো ভাবে শিক্ষিত করতে পারি তাহলে বাজিমাত করা সম্ভব। একজন মা একটি পরিবারের মুল অভিভাবক। মা শিক্ষিত হলে ফ্যামিলি এমনিতেই ডেভেলপ করবে। একজন কর্মজীবি বাবা পরিবারে কতটুকু সময় দিতে পারে? মা পরিবারকে ২৪ ঘন্টা সময় দিয়ে থাকে। উপরোন্তু সন্তানরা বাবার চেয়ে মাকে খুব বেশি কাছে পায়। তারা মায়ের আদর, স্নেহ, ভালোবাসা পেয়ে বেড়ে উঠতে থাকে। তাই একজন মা যা বলেন সন্তানরা তাই আগ্রহ ভরে করার চেষ্টা করে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে মা'কে বুঝাতে পারলে পরিবেশের এমন ছ্যাঁড়াব্যাঁড়া অবস্থারও উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। তাই, মা'কে শিক্ষিত করতে পারলে সবকিছুকে শিক্ষিত করার একটা চান্স নেয়া যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো এই ঝানু মহিলাদের কিভাবে বোঝাবো। এর আগে এখানে সরকারীভাবে এমন উদ্যেগের কম চেষ্টা হয়নি। সবই শুরু হয়ে শেষ হয়ে গেছে। সুবিধে হলো এদের কাছে আমি মোটামুটি পরিচিত। আমার এই পরিচিত তাদের ভেতর বিপ্লব ঘটাতে পারে, তাই সুযোগটা কাজে লাগানোর জন্য উঠেপড়ে লেগে গেলাম।

৫ সদস্যের একটা কমিটি করলাম। এরা ডোনেট করবে। মাসিক যা খরচ হবে তার পুরোটাই এরা বহন করবে। স্কুল ঘর ঠিক করার পর ঘরের মালিক জানালো তাকে ভাড়া দিতে হবে না। কমিটির সবাই এতে ভিষণ খুশি। 'সৃষ্টি' নিয়ে আজম আর মিলনের আগ্রহ দেখে ভালো লাগলো। আমার অবর্তমানে এরা এই কাজটাকে এগিয়ে নিতে পারবে মোটামুটি। অবশেষে চারজন শিক্ষিকার ব্যবস্থা করতে পারা গেল। এদের ৩ জন কোনো টাকা নিবে না। ১ জনকে মাসিক ১০০০ টাকা দিলেই চলবে! পূর্বে দেখতে পেয়েছি প্রায় প্রতিটি প্রোজেক্টের আগে একটা অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে হয়। যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক অনেক কম অর্থনৈতিক প্রেসার 'সৃষ্টিতে' পেলাম। পুরোপুরি গোছগাছ করে সবাইকে নিয়ে স্কুল ঘরে একটা মিটিং এর আয়োজন করা হলো। শুধুমাত্র ছাত্রীদের নিয়ে মিটিং। যারা আসবে তাদেরকে প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে বই, চক, ডাস্টার দেয়া হবে। আমার ধারনা ছিলো লজ্জা-শরম দূরে হটিয়ে ৭/৮জন মতো হয়তো আসবে। সেই অনুযায়ী ১২ জনের জন্য জিনিসপত্র কিনে আনা হয়েছিল। বিপত্তি ঘটলো মিটিংয়ে মহিলাদের উপস্থিতির পর। ৩০/৩৫ জন ছাত্রী দেখে আমার মতই সবাই তাজ্জব! যাই-হোক, ২০ মিনিট টানা ব্রিফ দিলাম। সুবিধে হলো এদের চোখে সহজেই জল এনে ফেলা যায়। এদের একটু ভালোবাসা দেখাতে পারলে এরা মানুষের জন্য কি না করতে পারে? তাদেরকে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হলে :

১। ছাত্রীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাঠ্যেদান করা হবে।
২। সপ্তায় ৬ দিন ক্লাশ হবে। ক্লাশ শুরু হবে বিকেল ৩টায়।
৩। ১ জন শিক্ষক সপ্তায় ২টি করে ক্লাশ নিবেন।
৪। সপ্তাহের প্রতি বৃহ:স্পতিবার একটি করে মিটিং হবে। এখানে ছাত্রীদের প্রোগ্রেস, তাদের সমস্যা, অভিযোগ, পারিপার্শ্বিক বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা হবে। অভিযোগ, সমস্যাগুলো আজম লিপিবদ্ধ করে রাখবে। পরের ক্লাশ থেকে তা সংশোধনের চেষ্টা করা হবে।
৫। প্রত্যেক মাসে একটি করে বড় মিটিং হবে। সেখানে কমিটির সবাই উপস্থিত থাকবো। যাবতীয় সমস্যা সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হবে তখন। মজার মজার সব ইভেন্টের মাধ্যমে ছাত্রীদের শিক্ষার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হবে।
৬। কোনো কারণ ছাড়াই কেউ তিন দিন ক্লাশে অনুপস্থিত থাকলে পরবর্তী অনুপস্থিত ক্লাশের জন্য ২ টাকা হারে জরিমানা করা হবে।
৭। আরো কিছু...।

এর মানে হলো আমাকে প্রতি মাসে গ্রামে যেতে হবেই! আমি ত্যাক্ত বিরক্ত হবো না। বরং প্রোজেক্টটা দাঁড়িয়ে গেলে আমার চেয়ে সুখি মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া ভার হবে। 'সৃষ্টি' নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। সমস্যা হলো তেমন অরগানাইজ জনোবল নাই। যে চারজন কমিটিতে আছে তারা হাঁ হয়ে আমার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করে। আমার চাই অরগানাইজ জনোবল আর পাশে দাঁড়িয়ে আশ্বাস দেবার মতো প্রিয়জন। তেমন পাওয়া ভার। দাঁড়িয়াল ঠাকুরের কবিতাই এখন শেষ সম্বল, "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে..."

Friday, December 28, 2007

ডিসেম্বর শূণ্য সাত- কিছু ব্যর্থতা, অভিশাপ আর মুঠো মুঠো একাকিত্ব

গুমোট অন্ধকার ফুড়ে শিশির ঝরছে বৃষ্টির মতো। ঝাপসা পৃথিবী জমে গেছে সীমাহীন নিঃস্তব্ধতায়... নিঃসঙ্গতায়... রাশি রাশি ব্যর্থতায়...। ঘুম আসছেনা। বিছানায় শরীর এলানোর প্রশ্নই ওঠে না। চোখ মুদলেই নিজেকে চামড়া ছোলানো জীব মনে হয়। সেই ছোলানো অংশে অজস্র নোনা জল। মানুষের। অনেক অ-নে-ক জ্বালা ওতে। নিজেকে ছোট করে ফেলে, নিজের কাছে। ছোট ভাবতে একদম ইচ্ছে করেনা। তবু আমি ছোটো। স্পষ্ট করে বললে- নীচ।

এই সীমাহীন অসহনীয় অবস্থায় একটা ব্যপার খেয়াল করলাম। সেটা হলো এতো ঘনিষ্ট বন্ধু-বান্ধব থাকতেও আমি আমার যন্ত্রনাময় ব্যাপারগুলো নিয়ে কারো সাথে ডিসকাস করতে পারছি না। এক চিমটিওনা। এক বিন্দুও না। আবিস্কার করলাম, আদতেই আমি একজন নিঃসঙ্গ ব্যর্থ মানুষ। আমার কোনো বন্ধু নাই।

কোরবানি হচ্ছি প্রতিটি মূহুর্তে। গলায় ছোরা চালিয়ে জবাই করে মেরে ফেলার চেয়ে মনস্তাত্ত্বিক জবাইয়ে কতযে অসহনীয় যন্ত্রণা সেটা বোঝানো যাবে না। মরছি সমানে। এখানে-সেখানে। কতোশতো ভাবে। ঈশ্বর কেনোযে এতো এতো কাড়ি কাড়ি অপ্রাপ্যতা ঠেসে ঠেসে আমার লাইফে ইমপোর্ট করলো...। এতো কুমির-বোয়াল ফেলে আমাকেই কিনা গাধাটার পছন্দ হলো! আমি নিশ্চিত ঘাড়ের দারোয়ান দুটো কাঁদতে কাঁদতে এতোদিনে মারা-ই গেছে!

অনেক, অ-নে-ক দূর যেতে পারবো কিনা জানিনা। না যেতে পারলে সেটা হবে ব্যর্থতার উপর ব্যর্থতা। ব্যর্থতার ষোলকলা বলতে যা বুঝায় তা পূর্ণ হবে। স্বার্থপর মানুষের মতো কিছু অনৈতিক সিদ্ধান্ত আর কিছু মানুষকে অবমূল্যায়ণ আমার জীবনের চরম এক গোলকধাঁধা। যেখান থেকেই তুমি শুরু করোনা কেনো ঠিক ঠিক সেই আগের অবস্থানে। ঘুরে ফিরে তুমি আসবে। শুরু করবে নতুন করে। আমি সিদ্ধান্ত যা নেই তা সবই সলিড সেটা বলবো না। তবে ম্যাক্সিমাম সলিড। টেকশই। সে নিজের প্রয়োজনেই হোক কিংবা প্রিয় মানুষের। তবে নিজের জন্য যতোগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি সব বুঝে শুনে নিতে পারিনি। কোনো সফল মানুষও বলতে পারবে না তার সব সিদ্ধান্ত টেকশই ছিলো। সিদ্ধান্ত নেবার আগে আবেগ কাজ করবে। ক্ষোভ থাকবে। অজুহাতের পুঁজি থাকবে। আর একটা বাচ্চা ছেলে ছাড়া তেমন কিছুইতো নই আমি। বয়স কাঁড়ি কাঁড়ি বাড়ছে। তবু অনেক কিছুর ব্যবধানে জড়িয়ে নিজেকে ক্ষুদ্র জীব ছাড়া তেমন কিছু ভাবতে পারিনা। চাইনা। বাঁধনে জড়ানো মানে একটা সার্কেলে আবদ্ধ হওয়া। জমে যাওয়া। তুমি চাইলেই সেই সীমানা অতিক্রম করতে পারো না। তুমি শৃঙ্খলের নিয়মে বাঁধা তখন। তোমাকে অনেক কিছু বুঝে শুনে করতে হবে। বাইরের পৃথিবীকে তুচ্ছজ্ঞান করে চার দেয়ালে সুখের ছবি আঁকতে হবে। কাউকে নিয়ে মিছেমিছি নাটক করতে হবে। প্রতিদিন। এতোসব আমার জন্য নয়। ফেলে আসা জীবন আমার কাছে যতটুকু চায় ততটুকু যদি নাইবা দিতে পারি তো এই জীবনের কোনো মানে হয়না। আমি ফেলে আসা জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আজ থেকে ১ বছর, ১০ বছর, ২০ বছর পরেও আমার এই ধারনার পেখম রঙ হারাবে না। মানুষ সুখস্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। আমিও চাই। ব্যাস। আমার অভিলাস বলো, চাহিদা বলো, অভিসার বলো... তা এ-ই।

ডিসেম্বর শূণ্য সাত। ডিসেম্বর শূণ্য সাত। অসহনীয় যন্ত্রণা। অসহনীয় যন্ত্রণা...।


------------------------------
সময় : ২৬ ডিসেম্বরের কোনো এক মৃত রাত।
স্থান : পল্লবী, ঢাকা।

Tuesday, December 18, 2007

মানুষ দেখলে তবে আলো

কতোদিন হলো মিরাকল দেখিনা। আমি মিরাকল পেতে, দেখতে ভালোবাসি। কিন্তু মিরাকলতো আমাকে আর দশজন ভদ্র মানুষের মতো ভালোবাসেনা। তাই মানুষের মিরাকল দেখে যাই।

কখনো কাউকে মিরাকল দেই নাই। আজ একজনকে মিরাকল দিলাম।

আমি যে কষ্টটা এতোদিন ধরে লালন করে এসেছি, সেই একই কষ্ট আমার চোখের সামনে অন্য একজন পেতে পারেনা।
অন্তত আমি বেঁচে থাকতে, না। সামর্থ্য আমার তেমন একটা নেই। তবু...

Monday, December 17, 2007

আঁচলে তার অপেক্ষা খেলে

নদিকে দু'ভাগ করে তিরতির করে ছুটে চলছে যলযান। চলছে ছুটে আমার যাবতীয় যতোসব স্থাবর অস্থাবর যন্ত্রণা। উদাসী হলেম আজ। নতুন করে। নদি আমার প্রিয়জন। এর কাছে আবদার চাইতে আমার জড় লাগেনা। যখন ইচ্ছে তখন এতে আমি কল্পনার বসতি গড়ি। ভাঙ্গি। চুড়ি। যেমন ইচ্ছে তেমন গড়ি। এ আমার একান্ত আপনজন। একে দুর্গত করলে আমার ইগো ফুটো হয়না।

গুটগুটে অন্ধকার, চারপাশ। লক্ষ লক্ষ তারা আকাশে। শতো শতো ছেঁড়া তারার ভেলকি ঝলক দেখিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। বহুদূরে মিটমিট করে জ্বলছে ঝাপসা লোকালয়। দুভাগ হবার আগে শুভ্র ফেনা তুলে জলকনা নদিকে আলোড়িত করছে অদ্ভুতুড়ে আবেগের ত্রাস সৃষ্টি করে। যেন বলছে কোনো অনাহুত, নদিকে, প্রিয়তমা নি:শেষ হয়ে যাচ্ছি দ্যাখো, নি:শেষ, এই তোমার পরে।

রাত সাড়ে বারো। লঞ্চের চারতলা ছাদে বসে আছি। একা। নি:স্ব। কনকনে শীত ঝরছে ইচ্ছেমতো। এক্স-হান্ড্রেড বেজে উঠে বিশ্রি রকম সুরে। জানি সে বাজবে। বাজবে। বাজবে। যতোক্ষন না ধরি। ভুলিনি, আজ তার জন্মদিন। কিছু কিছু জন্মদিন ভুলে যাওয়া সম্ভব না। মাঝে মাঝে অসম্ভব রকম অসহায় লাগে। আমি মানুষটা আদতে সুবিধের নই। অনেক অনেক ফাঁকিবাজি, রঙচঙ, কেরামতি, ফক্করবাজি, টক্করবাজি, লক্করবাজি, নক্করবাজি, যেন-তেন যত্তোসব ঝুটঝামেলায় ভরা আমার আমি। মানুষকে ঠকাইনা বড় গলায় ক্যামনে বলি? মানুষকে ঠকাচ্ছিতো।

আমার মটো বলে কিছু নেই। হোপলেস এই আমি জীবনের যতোসব রসকষে ডুবে ডুবে ভেসে যাই। স্থিতি কিংবা বসতি কিংবা সংসার, ধর্ম, কর্ম, নিজের জন্য টুকটাক ভাবনা... আমার দ্বারা হবেনা। এসব জেনেও একজন, শুধু অপেক্ষায় থাকে। তাকে এখন আর বুঝাই না। বলিনা- দ্যাখ রাতের সুপ্ত ছেঁড়া তারারাও হঠাৎ হঠাৎ ভেলকি দেখায়। আমি সেটাও পারিনা।

তারপরও তোর এই জন্মদিনে, তোকে কাঁদিয়ে ভাসালেও একটা কথা না বলার জন্য মনটা আপসোসে ভরে আছে...

সখি, তোর জন্যও কিছু ভালোবাসা ভরে আছে বেদুইইন এই আকাশে। তোকেও হঠাৎ হঠাৎ প্রচন্ডরকম ভালোবাসি।

: রাত ২:১৪ মিনিট, ১৪ ডিসেম্বর, ২০০৭ইং

: ডাইরীর পাতা থেকে।

Tuesday, December 11, 2007

নিয়ে চলো দূরে, আরো দূরে, বহুদূরে...

আজ 'মিথ্যা' কে বিক্রি করলাম। মিথ্যা বিক্রি করা খুব সহজ। শুধু একটু ড্যাম কেয়ার ভাব চেহারায় আনতে হয়। ভাবছি আমার টি-শার্টের পেছনে একটা কথা সেঁটে দেবো-i sell lie। বাসায় ফিরেছি ভোর ৬টায়। ৮ টায় ফের উঠে মামার সামনে গিয়ে বললাম- আই।এল.টি.এস এর জন্য টাকা লাগবে। কিছু টাকা ধার না দিলেই নয় (আহহহ কতো টাকা যে ধার নিলাম!)। তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা চালালেন (পুরা বোকা পাবলিক, আমার মিথ্যে ধরা খুব সহজ) তারপর টাকা দিয়ে টো টো জীবনধারন না করা নিয়ে টানা ১০ মিনিট বক্তৃতা দিলেন। কে শুনে কার কথা, আমি তখন মনে মনে সপ্তষীতে চলে গেছি। রানাকে নিয়ে 'জেনুইটি সিস্টেম' এ গেলাম। তারপর 'ঘাস ফড়িং' টাকে ফের রি-নিউ করলাম। হায় আমার ছেঁড়া স্বপ্ন। আমি তোকে বাঁচিয়ে রাখবো, যতদিন বেঁচে আছি।

খুব ক্লান্তি শরীর-মন জুড়ে। টানা ৩ রাত জেগে থাকার দরুন চিন্তা-ভাবনায় ঘুম ঢুকে গেছে। বলার মতো তেমন কিছুই ঘটে নাই এই কয়দিন। তারপরো এখন, এই ভর দুপুরে কিছু লিখবো বলে চোখের দু'পাতা জোর করে খুলে লিখছি। চোখ বন্ধ থাকলেও সমস্যা ছিলনা। টাইপ করতে আমার চোখ খোলা না রাখলেও চলে। কিন্তু চিন্তা-ভাবনাটাতো ঠিক থাকতে হবে। সেটা থাকছেনা।

গতরাত সারারাত মসজিদে ছিলাম। আশ্চার্য্য হবে যেই শুনবে। আমি মসজিদে ছিলাম, তাও সারারাত! যে আমি বৎসরে একবারও যাইকিনা সন্দেহ আছে সেই আমি...! হা হা হা। হেসে লাভ নাই। ভ্রু কুঁচকেও না। মসজিদে ছিলাম দায়ে পড়ে। ওখানেই আমরা ত্রানের সব জিনিসপত্র রেখেছি। ত্রান প‌্যাকেজিং হচ্ছে। ৫০০ পরিবারের ১ সপ্তাহের খাবার, এবং শীতের গরম কাপড়। এটা পুরো ১৫ জন যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে টাকা উঠিয়েছে তাদের ভোটাভোটিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকালই তিনজন সদস্যকে পটুয়াখালীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা ওখানে গিয়ে সবচে' ক্ষতিগ্রস্ত ৫০০ পরিবারের হাতে টোকেন দিয়ে আসবে। তারপর আমরা ১৩ তারিখ থেকে সেখানে বিলি করবো। সম্ভবত ১৬ তারিখ সবাই ঢাকায় ব্যাক করবো।


আমার প্ল্যান ছিলো অন্যরকম। আমি বলেছি এই ২ লাখ টাকা দিয়ে অন্তত ২০ টা পরিবার যারা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের এ-টু-জেড পুনর্বাসন করা হোক। ঘর তোলা থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছু। কিন্তু আমার প্ল্যানে ভোট পড়ে নাই বেশি। গণতান্ত্রিক নিয়মেই এগুচ্ছি আমরা। আমার একার সিদ্ধান্ততো আর সলিড না। যেটা সবার কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হবে সেটাই করা হবে। এতে আমার কিঞ্চিত পরিমান মনক্ষুন্নতা নেই।

আমার প্ল্যানটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে একটা কারনে। সেটা হলো, মানুষ এখন খুব বেশি ত্রাণ নির্ভর হয়ে গেছে। তারা কাজ-টাজ ছেড়ে ছুঁড়ে ত্রানের জন্য উন্মুখ হয়ে বসে থাকে। কাজ করে ৩০০ টাকা ইনকামের চেয়ে ঘরে বসে ২০০ টাকা উপার্জন অনেক নিরাপদ এবং এতে খাটনীও নেই! অভাবী এবং নিরক্ষর মানুষগুলো শুধু জানে তিনবেলা পেট পুরে খেলেই জীবন চলে যাবে। বেশ আছেতো তারা। তো কাজ করে কি হবে? আমাদের সরকারের উচিৎ তাদের প্রয়োজানুসারে কিছু কর্মসংস্থান করা। যাতে কাজ করে জীবন ধারন করার মানসিকতা অভাবী সর্বহারা মানুষগুলোর মন থেকে না হারিয়ে যায়। যারা ত্রান দিচ্ছে, ঘর বাড়ি উঠিয়ে দিচ্ছে তারা অন্তত পক্ষে যেন পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের দিয়েই যাবতীয় কাজ করায়। এতে ওদের পারিশ্রমিকও দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

মনটা ভিষন খারাপ। কেবল ধু ধু শূন্যতা অস্তিত্ব জুড়ে। বন্ধু বান্ধবরা এতোদিন আমায় পেলো বুঝি। বুঝিনা কিছু। বেশি বাড়াবাড়ি করলে নাকের ডগায় সোজা ঘুষি হাঁকিয়ে দেব। এদিকে নির্ঝরের খুব কষ্ট হচ্ছে। আন্টি 'ট্রোমা সেন্টারে' এখানো ভর্তি রয়েছেন। অপারেশন করা লাগবে। প্রথম দিন সারারাত ছিলাম, পরের দুইরাত থাকতে পারলাম না। আম্মাটাও মোটামুটি অসুস্থ্য। বোনের পরীক্ষা। সেমিষ্টার ফি। নতুন চাকরীর অন্বেষন। কতোশতো ঝুটঝামেলা। কিযে সমস্যা। কিযে সমস্যা। মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে খুব- সামওয়ান প্লিজ আমার মাঝে লীন হও। আমাকে একটু ইন্সপায়ার করো। আমাকে জাগিয়ে তোলো। আমাকে বাঁচিয়ে রাখো। আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলো। দূরে। আরো দূরে। বহুদূরে। অনেক দূরে...।

Friday, December 7, 2007

প্রতিপক্ষহীন এই জীবন

তার এই অযাচিত উদ্ব্যেগটা আমার যে ভালো লাগছিলো না তা নয়। ভালো লাগছিলো, একই সাথে একটা ক্ষীন দু:খবোধ। এটা হবার কথা নয়। সময়ের প্যাঁচে মানুষ হারায়ে যায়... এটা ধ্রুব সত্য। একে নিয়ে দু:খবোধ করাটা ঠিক না। রিক্সায় বসেই ওকে দেখতে পেলাম। চোখে মুখে উদ্বেগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কতদিন পর গাজিপুর এলাম? সঠিক জানা নেই। তবে অনেক অনেক দিন পর এলাম। পথ ঘাটের কিছুই তেমন চিনি না। বিবর্ণ সবকিছু। মানুষগুলো কেমন তা ঈশ্বর ভালো জানেন। ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সাজবে। সাজেনি। এ মেয়ে কখনোই অতিরিক্ত প্রসাধন ব্যবহার করেনা। সাধারণ সালোয়ার কামিজ পরনে। গায়ে আকাশ রঙের ওরণা। অস্থির আর উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে এগিয়ে এলো। আমি তার চোখে কৈশোরকে জ্বলতে দেখলাম। হেসে বললো --এতো দেরী লাগে?
-- পথ ঘাটতো চিনি না। পরিচয় হও, আমার বন্ধু রানা।
শেষবার মাস চারেক আগে দেখা হয়েছিলো। তখন এরকম সুস্থির ভাব ছিলো না। সুখে আছে? দু:খবোধটা আরো শক্তপোক্ত অবস্থানে মোড় নেয়। অথচ দু:খবোধ করার কোনো মানে নেই। মানুষ সুখে থাকবেই। কথার ফাঁকে ফাঁকে ও মৃদু শব্দে হাসছিলো। অচেনা এই হাসিটা সম্পূর্ণ আনকোরা। আগে কখনো দেখিনি। মেয়েদের হাসিও তাহলে সময়ের সাথে পাল্টায়! হাঁটছি এলেবেলে কথাবার্তা বলতে বলতে। হঠাৎই, সেই আগের মতো করে আমার এক হাতে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে শুরু করেছে। মনে মনে ভিষন চমকে গেলেও কিছু বললাম না। হাত ছাড়িয়ে নিলাম কথার বাঁকে। যা চুকেবুকে গেছে তাকে জোর করে দৃশ্যপটে হাজির করাটা বোকামী। এ আমি জানি। এমনিতে অভিমান টবিমানের মতো লাল্লু মার্কা অনুভূতিজ্ঞান আমার ভোঁতা। তারপরেও কিছু ব্যাপার থেকে যায়। সেসব থেকে নিজেকে মুক্ত করা কঠিন। ঢাকায় এতোবার দেখা হয়েছে এমন কখনোই হয়নি। রানা পেছনে সরে যায়। গাছের পাতা নড়েছে। কোনো একটা কারণ অবশ্যই আছে। ধক করে ভ্রুটা কুঁচকে যায়। রানা হচ্ছে জীবন্ত বি.বি.সি। বন্ধু সার্কেলের কারো কিছু রানার জ্ঞাত হওয়া মানে সবার জ্ঞাত হওয়া। ঈশ্বর জানেন আমাকে নিয়ে ভবিষ্যতে কি ঘটাবে সে।

বড় চাচা'র বাড়ি যাচ্ছি ১২ থেকে ১৫ বছর বছর পর। এই একটা লোককে আমি চরম ঘৃনা করি। এক সময় দারুন প্রতাপ ছিলো। এখন তার কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই। মি. প্রতাপ মৃত্যুর প্রহর গুনছে আজ। তবু তার একটা বিষয় আমার ভালো লাগে, সেটা হলো লোকটা দারুন ঠোঁটকাটা। মুখের উপর শাট শাট কথা বলতে পারে। আমার ভেতর এ ধরনের লোকদের প্রতি একটা সফট কর্ণার আছে। তবু ভিলেনতো ভিলেনই। এ লোক আমার জীবনের অন্যতম এক ভিলেন। একে কিছু দেখানোর জন্য বহু কষ্ট করেছি। কিছুটা দেখিয়েছি, কিছুটা পারিনি। যখন বুঝতে শিখলাম যে, পৃথিবীতে কোনো কিছুই অবিনশ্বর নয় তখন হাল ছেড়ে দিলাম। স্বপ্ন ছিলো লোকটাকে নি:স্ব করে দেবার। পারলাম না। তার আগেই সে নি:স্ব হয়ে গেছে। একে নি:স্ব করার মতো কোনো কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই। কিছুদিন আগে কিছু জমি দখলে নিয়েছি বটে কিন্তু সেটা তার কাছ থেকে নয়, ফুফুর কাছ থেকে। এতেও লোকটা কম ক্ষ্যাপেনি। আমার জন্মদাতাকে ফোনে কয়েক লাইন শুনিয়ে দিয়েছে, কিন্তু আমিতো আমার জন্মদাতার মতো অতো সরল অংক নই। আমার বুদ্ধিজ্ঞান সুস্থির। যা করি ভেবেচিন্তে করি। ধীরে সুস্থ্যে ভাবি, ধীরে সুস্থ্যে করি। কোনো এক অদ্ভুত কারণে তারা আমাকে ফোন-টোন করেনা। সেটা নিয়ে আমি যে মাঝে মাঝে গবেষণা করিনা তাও না। আমার ঘৃনাটুকুর উত্তাপ তারা টের পায় বলেই আমাকে এড়িয়ে চলে, এ আমি ভালো জানি।

মানুষ বড় কালের স্মৃতিকে খুব একটা মনে রাখে না। মানুষের যতো ভাবনা চিন্তা তার শৈশোব কৈশোর নিয়েই। একটা শিশুকে কেউ চড় থাপ্পড় মারলে সে সেটা মনে রাখেনা। তার কাছে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু একটা শিশু যদি বুঝতে শেখে যে তার বাবা মা মানুষিকভাবে অত্যাচারিত; আত্মীয়রা তাদের নি:স্ব করার কুট চেষ্টা চালাচ্ছে, সে যখন বুঝতে পারে যে তার অগ্রজ নিজেকে উৎসর্গ করছে সংসার নামক ভাঙ্গা নৌকাকে টিকিয়ে রাখার জন্য তখন শতো চেষ্টা করেও তার মন থেকে চক্রান্তকারীদের প্রতি ঘৃনা মুছে ফেলতে পারেনা কেউ। আমি আজীবন ফুফু এবং বড় চাচাকে ঘৃনা করে এসেছি। ঘৃনা আমার বাপের পুরো গোষ্ঠির প্রতিই।

বড় চাচা'র সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি। হা হা হা হা হা, ইটস আ বিউটিফুল উইস। তিনি মরবেন, শিঘ্রির, ইহা চিরন্তন সত্য। তিনি মরলে আমার লাভ-ক্ষতিতে কোনো পরির্বতন ঘটবে না। তবু তিনি মরবেন ভেবে আমার আপসোস হচ্ছে। তার কারণ, এতে আমি আত্মতৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছি না। তারা সবাই যদি একে একে লেজ তুলে পালাতে শুরু করে তো কাকে দেখাবো এতো জ্বালা? প্রতিপক্ষহীন দাবা খেলায় কোনো মজা নেই।

ও আবার আমার হাত ধরেছে। আমি কথা বলার ছলে হাতটা মুক্ত করলাম, আবার। সামনে ছোট এক তলা বাড়ি। বাড়ির চারপাশে বড়ই গাছ, লিচু, পেপেঁ থেকে শুরু করে কয়েক পদের গাছ। গাজিপুরে গাছপালা ভালোই। তারপরেও চাটগাঁয়ের মানুষ এরা। গাছের প্রতি এদের বাড়তি আকর্ষন থাকবেই। গেট খুলে দিলেন বড় চাচী। আমি তাকিয়ে আছি, উনিও। তারপর বললেন- বড় লোকের ছেলে আসলি তাহলে?
কটাক্ষ করলেন, কিন্তু কিছু বললাম না। মৃদু হেসে বললাম- আসলাম।

তিনি বড় চাচার কাছে নিয়ে গেলেন। রুমটা খুব ঠান্ডা হয়ে আছে। চারপাশে ছড়িয়ে আছে অদ্ভুত এক গন্ধ। বিছানায় গরম চাদর দিয়ে ঢাকা একটা কঙ্কাল। চারদিকে চোখ বুলিয়ে কঙ্কালটার দিকে তাকালাম খুটিয়ে দেখবো বলে। আমি এর চোখে কিছু দেখতে চাই। বহু প্রত্যাশিত কিছু। দেখতে পেলাম না। তার বদলে মুখটায় বাসা বেধেছে অদ্ভুত এক শূণ্যতা। অদ্ভুত। কঙ্কালসার চোখে তার বোবা দৃষ্টি। কি ভাবছেন আমাকে দেখে, আমি রঙ্গ করতে এলাম নাকি প্রতিশোধ নিতে? কিছু টুকটাক খোঁজখবর যা না নিলেই নয়, নিলাম। দুই ছেলেই আলাদা থাকে। বড় ছেলে প্রবাসী। ছোট ছেলে দেখবাল করার প্রয়োজন অনুভব করেনা। মেয়েরাও দেখতে আসছেনা। এরা তাই প্রচন্ড একা। বুড়ো হলে সব মানুষ একা হয়না। একা হয় তারাই যারা মানুষকে একা করে। শুনলাম দিন ছয়েক আগে রাজ্যের আত্মীয়স্বজন এসে ভীড় করেছিলো। সে নাড়িতে টান পড়েছিলো বলে। মৃত্যুর সময় মৃত বাড়িতে থাকতে হয়। এটা এই সমাজের নিয়ম। মৃতের মৃত্যু নি:শ্বাসের পতনে এমন কি আছে যার জন্য পাবলিক উন্মুখ হয়ে থাকবে? ইশ্বর তা ভালো জানেন। কিছু কৌতুহল নিয়েও অনেকে আসে। অনেকে আসে অযথাই। অনেকে আসে লাভস্টোরীকে চমকপ্রদ করতে। এছাড়া কার কি ঠেলা পড়েছে এই স্বার্থপর কঙ্কালটাকে দেখার? এইযে এখন কাউকে দেখা যাচ্ছে না তারও কারণ আছে। সেটা হলো লোকটার মরার চান্স এখন কম। এই সমােজর মানুষরা ভাবে মৃত্যু কেবল আসে রাতেই। দিনের বেলায়ওযে মানুষের মৃত্যু হতে পারে এই চিন্তাটা এই সমাজের ৯০% মানুষ উপলব্ধি করেনা। তাদের মতে মৃ্ত্যু আসবে আধার রাতে। টুপ করে। সে মতে লোকটার মরার চান্স রাতে বেশি! 'রাতে বার বার নাকে আঙুল দিয়ে দেখি তিনি বেঁচে আছেন কিনা?' বড় চাচী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন। তিনি যে খুব একটা স্বামী পূজারী তাও না। তিনি স্বামীর সেবা করছেন দায়ে পড়ে। এই কঙ্কালটা ব্যতিত তার যে আর কোনো অবলম্বন নাই! এই কঙ্গালটা আজ মরে গেলেই কাল সবাই এসে সংসারটাকে ভেঙ্গেচুড়ে তাকে নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলায় ব্যস্ত হবে, তা এই বুদ্ধিমান মেয়ে মানুষটা ভালোই জানে। আমি তার কথা শুনে চুপ মেরে যাই। সময় বয়ে চলে। এখন মরে যাওয়া রোদ্রুরের খেলা চলছে বাইরে, তুখোড় সুন্দর বিকেল। অথচ সম্ভাব্য এই মৃতের ঘরে ওসব অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে। লোকটা কি জানে সে বাঁচবে না?

অবশেষে লোকটা পরাজিত হলো। কেঁদে উঠলেন হঠাতই। বাঁধা দিলাম না। সান্তনাও না। শুধু তাকিয়ে থাকলাম। এ অশ্রু মিথ্যে নয়। এ আকুতি, চোখের ভাষা মিথ্যে নয়। কোথাও পরাজয়ের গ্লানি নেই। সেখানে স্নেহ আর অনুশোষনা টলটল করছে। আমার হাত ধরে তিনি উষ্ণতা খুঁজতে থাকেন। আমি খুঁজতে দিলাম। 'তুই দেখতে ঠিক তোর দাদীর মত। তোর দাদী খুব সুন্দর ছিলেন। মানুষকে বড় ভালোবাসতেন। যখন রাগতেন তখন কান্ডজ্ঞান তার ঠিক থাকতো না। আমার ছেলে মেয়েরা তার কিছুই পায়নি। না গায়ের রঙ, না তার স্বভাব।' বড় চাচী দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। আকাশ কি পেয়েছে? প্রশ্ন করে রুনু। সে বসেছে বিছানায়, গুটিশুটি মেয়ে হয়ে। তাকিয়ে আছে অদ্ভুত এক দৃষ্টি সাথে নিয়ে। বড় চাচী ফের দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন- সব। আমি মুচকি হাসি। এরা তাহলে আমাকে ভালোও বলে!

বেরিয়ে এলাম শেষ বিকেলে। রানা খুব বোরড হয়ে গেছে বুঝতে পারলাম। রুনু আমাদের এগিয়ে দিতে এলো ষ্ট্যান্ড পর্যন্ত। শরীরে আলস্য এনে রিক্সায় ওঠলাম। রানার সাথে কৌশল বিনিময় করে সে বিদায় দিলো। আমি শেষবারের মতো তাকালাম। হুমমম। সে কিছু বললোনা। কিছু তার বলারও নেই। আমারওনা। রিক্সা চলতে শুরু করেছে। সে হয়তো দাঁড়িয়ে আছে। হয়তোবা না। এটা নিয়ে ভাবার প্রয়োজনবোধ করছিনা। সে সুখে আছে, ঢেড় ভালো আছে। চিরকাল সুখে থাকুক সে কামনা করি। আমার প্রতিটি একাকিত্বের জ্বালা আমি নিজের জন্য রেখেছি। এর ছোঁয়া অন্য কাউকে স্পর্শ করুক সেটা চাইনা। এদের কেউ কেউ হয়তো নিরবে খুব দরদ দেখায়। সেটা আমি কেয়ার করিনা। মানুষের সব ফাঁকিবাজি নি:শ্বাসের সামনে এলে বুঝা যায়। অন্য কোনো ভাবে জানা সম্ভব নয়। তাই কোন মানুষ কেমন সেটা আমি ভালো বুঝি।



-- ৫ ডিসেম্বর, ২০০৭ইং।

Monday, December 3, 2007

এক আকাশ, স্বপ্ন

মিথুন রাশির জাতকেরা কেমন হয়? আকাশ অবশ্য কখনো রাশি-টাশি নিয়ে অতো গভিরভাবে নাড়াচাড়ি করেনি। তবে নিজেকে দিয়ে সে যা বুঝে তা হলো- মিথুন রাশির জাতকেরা হয়- প্রচন্ড ঘাড়ট্যারা, আত্মভোলা এবং চাপা রোমান্টিক। অন্যকিছুও হতে পারে। তবে ওর ব্যাপারটা আলাদা। সে প্রিয় মানুষকে যেমন ভালোবাসতে পারে, তেমন ঘৃনা করতে পারেনা। ভালোবাসা সম্পর্কে তার যে ধ্যনধারনা সেটাও কিন্তু কমজোরী নয়। তার মতে, হাসনাহেনার সুভাশ ফুলে নাক ডুবিয়ে পাওয়া সম্ভব নয়। এ থেকে যতদূরে তুমি ছুটবে তত তুমি এর সুভাশ পাবে। আকাশ দূর থেকে সুভাশ নিতে ভালোবাসে। এ বয়সে অনেকেই এক-আধটু ভুলভাল করে থাকে। তবু, কারো জন্য উন্মুখ হয়ে অপেক্ষায় থাকা, দিবানিশি পরস্পর বিরোধী দুটো স্বত্ত্বার সাথে যুদ্ধ করা, নিজের সমস্ত ধ্যনধারনার ঘষামাজা করা... ভুলভালের মধ্যে পরেনা। যদিও আকাশ অপেক্ষাকে মনে-প্রাণে ঘৃনা করে। তারপরও সে কারো কারো জন্য হঠাৎ হঠাৎ অকারণে অপেক্ষা করে। কেন করে সে তা জানেনা।

মানুষের এক সহজাত প্রবৃত্তি হলো- যা সে পায়না তার জন্য সে ভিষন হায়-হুতাশ করে। যা সহজে পায় তা অবজ্ঞা ভরে দূরে সরিয়ে রাখে। আকাশ নিজেকে কম চেনেনা। তবু, মাঝে মাঝে তার নিজেরে নিদারুন করুন মনে হয়। প্রচন্ড অসহায় লাগে তখন। ভিষন একা আর ভিষন মুমূর্ষ মুহুর্ত্বে মানুষ প্রিয়জনের কাছে আশ্রয় চায়। সে চায়না। সে ভিষন মূর্খ পুজারী। সে ফুল দেখবে কিন্তু ছিঁড়বে না। সে ফুল নিজের করে চাইবে কিন্তু পাহারা দিবে না, গাছে পানি দেবে না।

মানুষই সম্ভবত একমাত্র জীব যে নিজেকে খুব দ্রুত বদলে ফেলতে পারে। আকাশ সেটা পারেনা। তার ধারনা মানুষ শুধুমাত্র তার বাইরের রূপটাই বদলাতে পারে, ভেতরটা নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে তার বেশ ধান্দা লাগে। যা সে জানছে কিংবা যা সে ভাবছে তার পুরোটাই মিথ্যে নয়তো? মানুষতো প্রতিটি সেকেন্ড মরছে। প্রতিটি সেকেন্ড মানুষ এক একটা নতুন মানুষরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। মানুষের ভেতরটাও বদলে যেতে পারে। মানুষের বাইরের পঁচন ভেতরে চলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আজকাল ওর চিন্তা-ভাবনারা বড্ড বেশি ঠোঁটকাটা হয়েছে। তবু তারা মানুষকে ভালোবাসে। কারণ মানুষকে তাদের যান্ত্রিক আর কৃত্রিম বলে মনে হয়না। প্রতিটি মানুষই রহস্যঘেরা এক আঁধার। ওদের ভেতরটা শতোমুখী ইচ্ছে, স্বপ্ন, ঘৃনা, ভালোবাসায় ঠাসা। কিছু মানুষ আদতেই একটু অন্যরকম হয়। তারপরও অন্যসব মানুষের মতইতো তারা। তারা মরছে। প্রতিটি সেকেন্ড। প্রতিটি সেকেন্ড তারা নতুন করে কিছু ভাবছে। প্রতিটি মুহুর্তে তারা স্বপ্ন দেখছে নতুন কিছু নিয়ে। প্রতিটি সেকেন্ড তারা নতুন করে ভাবনার ঘুড়ি উড়োচ্ছে। মানুষ তাই সাংঘাতিক এক রাহস্যিক বিষয়। একজন মানুষের সাথে অন্য এক মানুষের কোনো মিল মহব্বত থাকার কথা নয়। তবু অনেক কিছু মিলে যায়। সেটাতো অন্য সব ক্ষেত্রেও মিলবে। শামুককে তার শক্ত খোলস দেখে যেভাবে সনাক্ত করা যায় তেমন মানুষকেও চেনা কঠিন কিছু নয়। শামুকের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে ধীরালয়ে হেঁটে চলা, কোনো বিপদ দেখলে খোলশের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে ফেলা। তাই কোনো শামুক যদি মনে করে যে অমুক শামুকের সাথে তার বেশ মেলে সেটা কিন্তু যুক্তিহীন নয়। যুক্তিহীন হবে তখনই যখন কেউ বলবে- অমুক শামুককে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি, তখন। আকাশ অবশ্য এই ব্যাপারটা নিয়ে মনে মনে খুব হাসে। সে হয়তো কিছু মানুষকে হাড়ে হাড়েই চেনে। তার রহস্যঘেরা যন্ত্রণাময় জীবনে এ ব্যাপারটা একটা বিনোদন। পাখি যতই তুমি উড়ে বেড়াও, তোমায় আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। ইচ্ছে করলে তোমায় আমি উড়িয়ে দিতে পারি, ইচ্ছে করলে তোমায় খাঁচায় পুরতেও পারি... আকাশ মাঝে মাঝে খুব ভাবে উপেক্ষা সরিয়ে বুকে টেনে তাকে এসব শুনাতে। সে কয়েক সেকেন্ড। তারপর ভুলে যায়।

বর্ষা শেষ হয়েছে। বৃষ্টি নেই। বৃষ্টির টুপটাপটুপটাপ শব্দেরাও নেই। বেঁচে গেছি, আকাশ হাসে, একমনে। বৃষ্টির শব্দে তার বিয়ে করতে ইচ্ছে করে। এ ব্যাপারটা চিন্তা করলেই সে চুপসে যায়। তারপর নি:শব্দে হাঁটতে থাকে গন্তব্যহীন। বিয়ে করতে চাইলেতো আর করা যায়না। আকাশের নিজেরে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতা নাই। তবু আকাশ বিয়ে করবে, বুড়ো বয়সে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটার সময়। তার একটা ইচ্ছে আছে বিয়ের পর বুড়িকে প্রতিদিন একটি করে চিঠি লিখবে! কি লিখবে তাতে? আকাশ যেমন মানুষ- লিখবে, আজকে আলু-ভর্তা সবচে' ফালতু হয়েছে। এমন কান্না-কাটি রান্না করলে দেশান্তরে যাবো। কিংবা। কিংবা। কিংবা? হা হা হা। এমনই। আকাশের ভালোবাসা এবং স্বপ্নো তীরহিত মেঘের মতো। ও ছোঁয়া যায়, একটু অন্যরকম করে। সুপ্ত ভালোবাসাটাও কেড়ে নেয়া যায়... বিমূর্ত ভালোবেসে।

Sunday, December 2, 2007

ভুল

নেট দুনিয়ায় আমার সবচেয়ে বড় দুটো ভুলের মধ্যে একটি হলো- রাজিবকে ফেসবুকে এ্যাড করা এবং একজনের সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দেয়া।

Saturday, December 1, 2007

উপেক্ষা

উপেক্ষা
--নির্মলেন্দু গুণ


বিরহ চাই,
ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷
তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারি
সমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা প্রেম; যদি চাও
ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷


আমি কি ডরাই সখি,
ভালোবাসা ভিখারি বিরহে?

Friday, November 30, 2007

মৃত রাতের অসুস্থ্যতা

মশা এরোসোলকে থোড়াই কেয়ার করে। এ ছিটিয়ে কোনো ফায়দা হয়না। কিছু মশা অবশ্য ডিগবাজি খেয়ে এরোসোলের উপকারীতা জাহির করার চেষ্টা করে, কিন্তু ঐ পর্যন্তই। ডিগবাজি খাওয়া মশারা এমনিই মরে, এরোসোল ছিটালেই কি, না ছিটালে কি। আমার সাথে কমজোরী মশাদের কিছুটা মিল আছে। আমার উথান কি, আবার পতনই বা কি? আমিতো পতিত হয়েই আছি। পাহাড়াদারদের হুইশেল শুনতে পাচ্ছি। মৃত রাত। শরীরের সব স্নায়ু আরাম চাচ্ছে, মাথার প্রতিটি অনু-পরমানু ঘুম চাচ্ছে, কিন্তু ঘুম আসছে না। এ আমার দোষ না। এ এক ব্যামো। এ ব্যামোর কোনো চিকিৎসা নেই।

নিরাময়হীন ব্যামো নিয়ে সুখে আছি। সারাদিন কেটেছে ব্যস্ততায়। সকালেতো ঘুম থেকে উঠতে পারিনা। একজন ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলো। সাথে অবশ্য ফ্রি কিছু টিপস। ও আমার দ্বারা হবেনা। সাউন্ড হেলথ এবং মাইন্ড নিয়ে দিব্বি সুস্থ্য সবল একজন মানুষ আমি। আমার আবার বাড়তি কিছু করার প্রয়োজন কি? উঠেই পিসিটা অন করলাম। গান বাজছে- 'এই নীল মনিহার'। ভালো একটা গান। ঠিক নয়টায় আমরা পল্লবী বাসষ্ট্যান্ডে মিলিত হলাম। আজকে আমার সহকারী বাংলা কলেজের এক ছোট ভাই। ছেলেটা দারুন। কথা বলে টনটন এবং অবশ্য খুব সুন্দর সৎ ছেলে। আই লাইক হীম। ঘটনার মতো ঘটনা ঘটেছে অনেক। ওসব বলতে ইচ্ছে করছে না। নিজের কথা বলি। হরিবল। সবইতো নিজের কথা! শুরু করি তবে পরের কথা। বড় চাচা ইন্তেকাল ফরমাইবেন শিঘ্রির। ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আমায় বারবার ফোন করা হচ্ছে। বারবার বলেছি- আসছি। যাওয়া হচ্ছেনা। বুঝতে পারছিনা যাবো কি যাবো না। বউ থাকলে ভালো হতো। জোর করে অলস এই আমাকে ঐ বাড়িতে পাঠাতো। কাছেইতো। গাজীপুর অতো দূর না। কিন্তু আমি ঐ ব্যাটাকে প্রচুর ঘৃনা করি। প্রচুর। মরুক। উহু এখন অনুভূতিটা অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। আর যাইহোক, জ্ঞাতী গুষ্ঠিতো। রক্তের টান এই তবে! বুকটা একটু কাঁপলো কি? ধুররররর ওসবে আমি বিশ্বাস করিনা।

আম্মা ভালো নেই। সে আমি ভালো বুঝি। অপারেশন কবে করাবো? জবাব জানা নাই। সবাই নিশ্চুপ। কিন্তু আম্মা যেটা ভাবছে সেটা কখনোই হবেনা। সে আমি জানি। আমি আমার নিয়তি পরির্বতন করতে পারি। এসব ভাবতে গেলে সব জট পাকিয়ে যায়। ইসসস বউ থাকলে ভালো হতো। বউ আমাকে পিটুনি দিয়ে ঠিক করে দিতো। আম্মার ছেলে বানিয়ে ছাড়তোই ছাড়তো। কিইবা আর করার। বউ নেই। তাই সংসার দরদী হতে পারছিনে।

সে-যাইহোক, বেশি ভাবের কথা বলা শুরু হয়ে গেছে। ওসব বাদ। নতুন কিছু চিন্তা করা যাক। ভাবনারা অমনই, তুমি ওকে পাশে বসিয়ে আদর করবে, সে উঠবে তোমার কোলে। কোলে উঠিয়ে আদর করবে, ও উঠে যাবে তোমার ঘাড়ে, তারপর তোমার মাথায় উঠে হিসু করে দিবে। ভাবনারা অমনই। ভাবতে আমার ঘৃনা লাগেনা। আমি ভাবতে থাকি। কতো কিছু। এইযে ঘুম আসছেনা কেন সেটা নিয়েও ভাবছি। এতো শক্ত হৃদয় নিয়ে কিকরে বেঁচে আছি সেটা নিয়েও ভাবছি। সমানে ভাবছি ফালতু কিছু মানুষ নিয়ে মাঝে মাঝে কেনো ভাবি, সেটা নিয়েও। হুররর আমি কি ভাবের কারখানা নাকি? অতো ভাবনা ভেবে আমারই বা কি লাভ! উহু ভুল বললাম। লাভ আছে বৈকি এবং আমার সাথে যে পাড়ার নুনু পাগলার দারুন মিল সে খবরও আমি রাখি। হা হা হা হা হা হা।

ও-য়েল। বেশি আনন্দ করা ভালো না। বেশি চিনি দিয়ে চা বানালে সেটা ভালো লাগেনা। চায়ের সাথে থাকবে, পরিমান মতো চিনি, দুধ আর লিকার। যেকোন একটার উপস্থিতি বেড়ে গেলেই বাঁধবে বিপত্তি। আমার লাইফে অবশ্য বিপত্তিটাই বেশি। কখনো ভালোবাসা উথলে যায়, কখনো ঘৃনা। কখনো প্রাপ্তি সীমাহীন, কখনো অপ্রাপ্তি। কখনো বসন্ত, কখনো ধু ধু শূণ্যতা। ধুররর শালা মর তুই কলাগাছে ফাঁস দিয়ে। সবচেয়ে সিক্রেট একটা কথা বলি তোকে- আমি মানুষটা অবশ্যই খারাপ না। কিন্তু আবার ভালোও নই। আছেনা কিছু অসুস্থ্য মানুষ, পৃথিবীতে, যারা যতোসব অসুস্থ্য কথা ভাবে- আমি ঠিক তেমন একজন মানুষ। হুমমমম আমি অসুস্থ্য একজন মানুষ। আমার মতো মানুষের পৃথিবীতে না থাকাই বেটার। প্রশ্ন করিস না অসুস্থ্যটা আবার কেমনতর অসুস্থ্যতা। করে ফেলেছিস?! ঠি...ক আছে, তোকে বলতে পারি, কারণ তোকে আমি ভালো পাই। অসুস্থ্যতা বুঝতে হলে- আমার সামনে তোকে বসতে হবে। মুখোমুখি। আমার হাত ধরতে হবে। উহু এ হাতের পর নিরাপত্তা খুঁজিস না। ঐ জিনিসটা হৃদযন্ত্রের কাছাকাছি কোথাও তুলে রাখা আছে। এবার আমার চোখে তাকিয়ে তোকে বিশ্ব দেখতে হবে। আ-মা-র বিশ্ব। তোর মতো করে। আমার শ্বাস তোকে উপলব্ধি করতে হবে। আমার সবুজ তোকে অনুভব করতে হবে। আমার ভালো লাগা, তোর আঁচলে বাঁধতে হবে। তোর চোখের ঘন মায়ায় আলো রেখে আমায় ভালোবাসতে হবে... গভির ভাবে... কিছুটা আমার মতো করে... কিছুটা তোর মতো করে...।

চিৎকার-১ : 'তুই' শব্দের সাথে কোন জীবিত মানুষের সম্পর্ক নেই।
চিৎকার-২ : যন্ত্রণাটা লেখা হয়েছে ২৯ নভেম্বরের মৃত রাতে।

Wednesday, November 28, 2007

হৃদয়হীন সিডর এবং মানুষের ভালোবাসা

আমি যেমন ভালো বন্ধু সার্কেল পেয়ে দারুন তৃপ্তির ঢেকুর তুলি, তেমনি ওদের নিয়ে আমার একটা লুকনো কষ্টও আছে। ওরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। জন্ম থেকেই। তাই ওরা ওদের চারপাশে যা দেখে তা সবই সৌন্দর্য্য নির্ভর। ওদের সমস্ত চিন্তা-ভাবনা ওদের কেরিয়ার আর ভালোবাসা ভালোবাসা খেলা-খেলি নিয়ে। মাঝে মাঝে যে ওরা অনাহারী মানুষ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেনা সেটাও ঠিক না। ওরাও অনাহারী, বিপদগামী মানুষ নিয়ে কথা বলে, ওরাও দূর্যোগ নিয়ে ভাবে এবং ওরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় কিন্তু নিজেরা কখনোই সক্রীয় ভূমিকা পালনে অগ্রগামী হয়না। ওরা আর্থিকভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত কিন্তু মাঠে নেমে একটা জোয়ার তুলে, মানুষের ভেতর মমতার এক জাগরণ সৃষ্টি করতে ওদের কোনো ইচ্ছা নেই।

এটাই স্বাভাবিক। দেশের উচ্চবিত্ত মানুষের দায় পড়েনি অনাহারী মানুষ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার। যারা ভালো অবস্থানে আছে তারা কখনোই চায়না শুধু শুধু কষ্টকে ডাক দিয়ে ঘরে আশ্রয় দেয়া। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা জন্ম থেকেই একটু অন্যরকম। ওদের নিয়ে লেখার সামর্থ্য আমার নাই। ওরা ওদেরই মতো। ওদেরকে শব্দের খাঁচায় আটকানো সহজ নয়।

ইতিমধ্যে মিরপুরবাসী একটা ঘটনা প্রতিদিন দেখছে। দুর্গত মানুষের দুর্দশার কথা ভরা প্লে-কার্ড গলায় ঝুলিয়ে কিছু উচ্ছ্বল তরুন একটা হলুদ বাক্স নিয়ে সাহায্যের আহবানে যাচ্ছে মানুষের বিবেকের দ্বারে দ্বারে। হাঁ বলছিলাম, বির্বতন বাংলাদেশ এর কথা। আমাদের সংগঠন এর কথা। কিছু সম-চিন্তাশীল কিশোর এই সংগঠনের সদস্য। ওরা সবাই বন্ধু নয়, একই পাড়ায়ও থাকেনা, একই কলেজেও পড়েনা। তবু ওরা আত্মীয়। আত্মার আত্মীয়।

প্রথম দিন শুধুমাত্র রেলী দিয়ে শুরু, মাইকিং করে এবং ব্যানার লাগিয়ে আমরা মার্চ করেছি প্রধান সড়কগুলোয়। ঐদিন অর্ধবেলা পর্যন্ত উঠেছে- ৪৬৭৩ টাকা। তারপরের দিন কৌশল বদলানো হলো। মিরপুর কাজী পাড়া থেকে সর্বোচ্চ বিজয় স্মরনী পর্যন্ত আমরা সিটিং গেটলক গাড়িগুলোতে (বিকল্প-১৭, ঢাকেশ্বরী-৩৬, ভলভো, ডিসকভারী, একুশে ইত্যাদি) ৭টা টীম করে ভীক্ষা (কারণ অনেক ভদ্র মানুষ 'মাপ' করতে বলেছেন!) করার জন্য সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করেছি। প্রতিটি বাসে ২জন করে। একজন পুরনো মেম্বার, একজন নতুন মেম্বার। পুরনো মেম্বার ব্রীফ দিবে, নতুন মেম্বার হলুদ বাক্সটা নিয়ে প্রতিটি যাত্রীর কাছে যাবে। ব্যাপারটা খুবই মজার। এসব বাসে আগে উঠতো নেশাখোড়রা, এখন উঠছি আমরা! ব্রিফিংয়ে কোনো মুখস্ত বিদ্যা ঝাড়তে হয়না আমাদের। বাস্তবে দেশের যা অবস্থা তাই বলেছি আমরা। সে যাইহোক, প্রথম দিন আমরা তুলেছি ২১ হাজারের মতো। দ্বিতীয় দিন উঠেছে ২৩ হাজার টাকা। তৃতীয় দিন উঠেছে ২১ হাজার ৯২টাকা। আমরা ডিসেম্বর ১০ তারিখ পর্যন্ত এই ত্রাণ সংগ্রহ করে যাবো। ইতিমধ্যে শীতবস্ত্র এবং আনুসাঙ্গিক পোষাক সংগ্রহ শেষ হয়েছে। আমাদের টার্গেট ২ হাজার ৫শ কেজি চাল বিতরণ করা, পাশাপাশি অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী। আশা করা যাচ্ছে আগামী দশ তারিখের আগে এই টার্গেট শেষ করা যাবে।

এই কাজ করতে করতে যা অভিজ্ঞতা হচ্ছে তা সবই পুরনো। কিছু তৈলাক্ত চেহারার মানুষ প্রায় প্রতিটি বাসে আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে। কেউ বলেছে তোমরা যে কলেজ/ভার্সিটির ছাত্র সেটার ডকুমেন্ট কি? তোমাদের আইডি দেখাও, কার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসব উঠাচ্ছো? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা সবই ওভারকাম করেছি। কমিশনারের অনুমতি, পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি, প্রতিটি সিটিং গেটলক বাসগুলোর হেড অফিসেই আগে থেকেই জানানো হয়েছে, আর আছে আমাদের পরিচয় পত্র। আবার এমনো হয়েছে, যাত্রীরা নিজেদের মধ্যে শুরু করে দিয়েছে ঝগড়া-ঝাটি। তবে সব ছাড়িয়ে মানুষের ভালোবাসাটা সবসময় জয়ী হয়েছে। তৈলাক্ত চেহারার মানুষগুলো কখনোই সঙ্গী পায়নি। যাত্রীরাই কেউ কেউ তাকে বলছে- মিষ্টার ওরাতো বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য পথে নেমেছে আপনি কি করেছেন? আপনি উল্টো তাদেরকে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন! কেউ বলছে- অশিক্ষিত বুঝেও না কারা ছাত্র, কারা নেশাখোড়!

আজ আমার ছুটির দিন। আসলে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভ্রমন করা তারপর ব্রিফ দেয়া কম কষ্টসাধ্য নয়। দুপুরে লান্স করতে হয়েছে হোটেলগুলোতেই। ২টা করে নাল-রুটি আর সবজি ভাজি। দুইদিনেই সবাই মোটামুটি অর্ধেক। নতুন কিছু মেম্বার যুক্ত হয়েছে তারাই আজ কাজ করছে, আছে কিছু পুরনে মেম্বার।

সবশেষে বলতে পারি, বাংলাদেশের মানুষের মতো মমতা অন্য কোথাও নেই। যদিও আমি বাংলাদেশের সীমানা আজ পর্যন্ত ক্রশ করতে পারি নাই তবু বলছি কিছু ঘটনার মুখোমুখি হয়েই।

ঘটনা-১ :
আমি এবং আমার সহকারী বিজয় স্মরণীতে নেমে ফিরতি বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে (যেহেতু আমাদের বুকে বড় সাইজের প্লে-কার্ড ঝুলানো এবং বুকের বাম পাশে পরিচয়পত্র, এবং হলুদ বাক্স অবশ্যই একটা কারণ)। এমন সময় একটা হ্যাংলা লোক এসে বললো- ভাই আমার কাছে ১ টাকা আছে, আর কোনো টাকা পয়সা নাই। আমি কি আপনাদের এই এক টাকা দিতে পারি? তার কথা শুনে আমার এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো, তাকে খুব খুব আপন মনে হলো, এবং অবশ্যই তার কাছ থেকে ১ টাকা পরম মমতায় নেয়া হলো। লোকটা চলে গেলো।

ঘটনা-২ :
আমরা প্রতিটি বাসে যা উঠেছে তা বাস থেকে নেমে যাবার পর টোটাল অংকটা বলে যাই। ঠিক এভাবে- ধন্যবাদ যাত্রীমহোদয়গণ, বিপদগামী মানুষগুলো পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য। আমরা এই বাসে আপনাদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত সাহায্য পেয়েছি মোট- এতো টাকা। অনেক ধন্যবাদ আপনাদের। তো সেদিন আমি নিয়ম মাফিক এটা বলে ঘুরছি বাস থেকে নেমে যাবার জন্য, তখনি এক বৃদ্ধা পাশ থেকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে- বাবা, আল্লায় তোদের অনেক ভালো করবেন। তার চোখ অশ্রুসিক্ত। আমরা নেমে গেলাম।

ঘটনা-৩ :
শেওড়া পাড়ায় আমরা মিলিত হলাম, সব টীম। সব বাক্স ব্রীজের নিচের পিলারের পাশে একের পর এক সাজিয়ে রাখা হলো। সবগুলোই ভারী হয়ে গেছে। আমরা অপেক্ষা করছি অবশিষ্ট মেম্বারদের জন্য। টুকটাক কথা বলছি, এমন সময় এক বৃদ্ধা ভিক্ষুক এসে বললো- বাবা আমি টাকা দেবো, কার কাছে দেবো? আমরাতো সবাই রীতিমতো অবাক! আমাদের এক সহকর্মী হুড়োহুড়ি করে তার বাক্সটা বের করে বললো- আন্টি আমারটায় দেন, আমারটায় দেন, আমার বাক্সে আজ টাকা কম উঠেছে। বৃদ্ধার চোখে সেই কি মমতা, মুখে চির সুবজ হাসি। প্রাণ খোলা হাসি। বৃদ্ধা মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেলেন।

আসলে আমরা কাজ করার শক্তি পাচ্ছি এনাদের ভালোবাসা পেয়েই। তাঁদের ভালোবাসাই আমাদের কাজ করার অনুপ্রেরণা। তারা আজীবন ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, সে কামনা করি।

Monday, November 26, 2007

ভেবোনা মিছে কবি

আমি এখন ঘুমোতে পারিনা। রাতে ঘুম হয়না। কেন হয়না সেটা আমি নিজেও জানিনা। কিংবা হয়তো জানি। এ আমি বলতে পারবো না। বুঝাতে পারবোনা। কতো হাবিজাবি চিন্তা-ভাবনা... সব বিছানায় গেলে জেগে ওঠে। একটানা। আঠালো। বাংলা সিনেমার মতো দীর্ঘ। রাতের বেশির ভাগ সময় কাটে তাই ছাদে শুয়ে বসে। ইদানিং তাও হচ্ছে না। মশার ভৌ শব্দ আমার জঘন্য লাগে। তদোপরী শীত নেমে গেছে। আজ অবশ্য আকাশে পূর্ণিমা চাঁদ। চারদিক ঝলমল করছে। রুপোর মতো। বাড়ির সামনে বিরাট হাসনা-হেনাটা পৃথিবীকে সুরভিত করছে হালকাচালে। কোথাও কেউ নেই। নিরব। কাছে কোথাও আত্মনার্ধ করে কেঁদে ওঠে কোনো পথ কুকুর। তারপর আবার সেই ঘোর নিস্তব্ধতা। পূর্ণিমা নিয়ে আমি ক্লাশ নাইন/টেনে কয়েকটা কবিতা লিখেছি। ওসব হারিয়ে টারিয়ে গেছে। খুব অগোছানো মানুষ আমি। কোথাও গোছগাছ নেই আমার। না ভেতরে, না বাইরে। এখন কবিতা লিখতে ইচ্ছে করেনা, কিংবা এ নিয়ে দুয়েক লাইন ডায়রীর পাতা জুড়ে- লিখতে ইচ্ছে করেনা। বড় অলস আমি। এই আলসে মাখা মনে হঠাৎ হঠাৎ হা হা করে ওঠে, এখন। কেনো ওঠে জানিনা।

তুই কখনো কোনো মানুষকে মরতে দেখেছিস? আমি দেখেছি। কেমন অসহায় থাকে তখন সে। কেমন ঘোরতর এক শূণ্যতা থাকে তার সবকিছু জুড়ে। থাকে তার চারপাশে অদ্ভুত, অচেনা-অজানা এক ধোঁয়াটে গন্ধ। এসব যদিওবা সহ্য করা যায় কিন্তু মৃত মানুষের চেহারা আমি সহ্য করতে পারিনা, একদম। ওতে আমি আলো দেখিনা, হাসি দেখিনা, চোখের মায়াময় দৃষ্টি দেখিনা। প্রথম যাকে মরতে দেখেছিলাম তখন সেটা উপলব্ধি করার মতো বয়স ছিলোনা। দ্বিতীয়বার যাকে মরতে দেখলাম এবং যে আমার হাতের উপরই মারা গেলো তার ঘন্টা কয়েক আগ পর্যন্ত আমি তার ১শ মাইলের ভেতরো ছিলাম না। মাস দুই পর আমি যখন তার নিকট পৌঁছলাম তখন আমার বয়স যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান ছিলো এটা বুঝতে যে পুরুষ মানুষও কখনো সখনো কান্না-কাটি করে। আমি বুঝতে পারছিলাম না ঠিক আমি কি হারাচ্ছি। আমার দুচোখ ছুঁয়ে যে জল গড়িয়ে যাচ্ছিলো সেটা কতোটা বছর পর গড়াচ্ছে তার সঠিক ক্যালকুলেশন এতোটা বছর পর এতোটা তীহ্ম আর কৌশলী ব্রেন নিয়েও আমি সমাধা করতে ব্যর্থ।

আজ পূর্ণিমা। তাই মশার ভৌ শব্দের জ্বালাতন উপেক্ষা করে কিছু লিখতে বসা আমার। রুপোলী আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে আমার ঘরের চারপাশ এবং আমি। কোন ছাগল পূর্ণিমাকে ঝলসানো রুটি বলেছে সেটা মনে করতে পারছি না। এতো সুন্দর একটা মুখকে কেউ ঝলসানো রুটি বলতে পারে? কবিরা এমনিতেই মিথ্যুক হয়। মিথ্যে আর কল্পনা ছাড়া কবিতা লেখা সম্ভব না। আমি সাহিত্যিক না। কবি না। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার খুব লিখতে ইচ্ছে করে। নিলর্জ্বের মতো। লিখি না আমি। লিখতে ভাল্লাগে না।

যখন ডায়রী লিখতাম তখন অদ্ভুত সব বিষয় নিয়ে লিখতাম। কাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং নিয়ে আমার সুদূর প্রসারী গভেষনা থেকে শুরু করে স্বপ্নাকে লেখা কতোশতো কবিতা, প্রেমপত্র, প্রেম নিয়ে আবেগ টসটস কতোশত কথা... ভালোলাগা ছিলো ওতে। প্রথম ডাইরীটা আমি কয়েকটা চিঠির সাথে পুড়িয়ে ফেলেছি। ২য় ডায়রীটা পড়িনা। তার অক্ষত থাকাটা একটা বিস্ময়। তৃতীয় ডায়রীটা আমার পাগলাটে, অসমাপ্ত। ছেঁড়া ছেঁড়া, ভাসা ভাসা কতো কি ওতে ভরা। শার্ট, প্যান্ট, শর্ট, গ্যাঞ্জি, স্যান্ডেলের তালিকা থেকে ওতে প্রেমপত্র পর্যন্ত লেখা। আছে গিটারের কিছু কর্ড। কিছু নিজের লেখা গান। কিছু প্রিয় মানুষ নিয়ে মূল্যায়ন। আছে কিছু প্রিয় চেহারা আঁকার কতোশতো বাহারী প্রচেষ্টা। রাস্তায় কোনো ফকিরকে ভালো লেগেছে সে অনুভূতি নিয়েও কয়েক লাইন... এসব...।

এখন ডায়রী টাইরী লেখা হয়না। প্রযুক্তি মানুষকে খুব বদলে দিচ্ছে। অনলাইনেই এখন ভাব বিনিময় করা যায় হারহামেশা। জীবন কতো সহজ এখানে। বৃষ্টি বাদলের মতো কতো ঝরঝরে আবেগ এখানে, ঘুরোঘুরি করে। মানুষ কতো সহজে নিজেকে এখানে গোছগাছ করতে পারে...। আমি এখনো প্রযুক্তির সাথে নিজেকে মানিয়ে পারিনি অতো। খুব অগোছালো, আর খুব ঘাড় ট্যারারা হয়তো এসবে মানিয়ে নিতে পারেনা। আমার ওতে কোনো দাবী নেই। নিজের প্রতি স্লেশ কিংবা তিক্ততাও নেই। আমি যা দাবি করি, যা ভাবনা ভাবি তা সবই সবুজ সর্ম্পকীয়। আমার সাথে প্রযুক্তির একটা দন্দ্ব তৈরী হবে, এটা স্বাভাবিক। আমি মেনে নিয়েছি। নতমুখেই।

রাত কতো হলো জানিনা। চোখে ঘুম নামেনি এখনো। আদৌ নামবে কিনা বলা মুশকিল। বাসায় নেট লাইন বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি। নেট মানেই নিজের কমজোরী স্বভাবটার নেজ ধরে ঠুনকো টানাহ্যাঁছড়া। আমি ওসবে এখন আর বিশ্বাস করিনা। তবু কখনো সখনো খুব, খুব ইচ্ছে করলে ল্যান্ড ফোন দিয়ে ব্রাউজ করি। বেশি দূর যেতে পারিনা। আমার আঙুলের ডগায় খুব কম ওয়েব সাইট ঘুরোঘুরি করে। যেগুলো খুব চেনা। যখন খুব খুব ইচ্ছে করে কপালে ভাঁজ ফেলতে, সহসা রেগে ওঠতে, তখন কারো ডাহা মিথ্যে কথাগুলো পড়তে থাকি। যখন খুব লোনলী অনুভব করি তখন সোজা 'গুগলের' পেটে ঢু মেরে, কাউকে নিয়ে শুধু শুধু খুড়োখুড়ি করি। বরাবরের মতোই ওসব পানসে। তবু সময়তো কাটে। রাত বারে। চোখে ঘুম নামে।

** ২৪ নভেম্বর, ২০০৭ইং এর লেখা।

Friday, November 23, 2007

বদল

যে চোখে থাকে আলো
সেই চোখে আসে জল
একই চেহারায় কতো বদল,
কখনো নকল
কখনো সে আসল...

Wednesday, November 21, 2007

গাভাস্কার আমার চেয়েও ছোটো?

জুনের তিন তারিখ, 2000। বঙ্গবন্ধু ষ্ট্যাডিয়াম। চির প্রতিদ্বন্দী ভারত বনাম পাকিস্তানের খেলা, তাই ক্রিকেট দুনিয়া চরম গরম। পুরো ষ্ট্যাডিয়াম এলাকা চিৎকার ছ্যাছাম্যাছিতে গমগম করছে। প্রতিবারের মতো দেরী করে ষ্ট্যাডিয়ামে প্রবেশ করলাম। সি।এম. কে সাইন দেখালাম, কিছু বলতে গিয়েও সে কিছু বললো না। রোবার মেট বলে কথা! আমাকে বলা হলো তড়িগড়ি করে যেন হসপিটালী বক্সে ডিউটিতে চলে যাই। ডিউটি পড়েছে নন-এসি দিয়ে হসপিটালী বক্সে যাবার গেটে। জায়গামতো গিয়ে পেলাম আমার সহকারী বন্ধুকে। নন-এসিতে প্রধানমন্ত্রীর/ প্রধান অতিথির জন্য একটা বিশেষ আসন রয়েছে। তার আশে পাশে অতিথিদের আসন। বিশেষ কোনো উপলক্ষ্য ব্যতীত এখানে খুব একটা লোক সমাগম হয়না। এর মধ্যে আমার সহকারী বন্ধুটি মহাসুখে নন-এসির আসনে বসে খেলা দেখায় ব্যস্ত হয়ে গেছে। আমি হসপিটালী বক্সের টিকেটধারীদের কাছ থেকে টিকেট চেক করে ছেড়ে দিচ্ছি। এখানে বলে রাখা ভালো নন-এসির ঠিক পেছনে ছোট এক গেট। এটায় সবসময় তালা ঝোলানো থাকে, চাবি ডিউটিরত স্কাউটদের হাতেই থাকে। দর্শক যারা আসবে তারা ওয়েষ্টার্ণ গ্যালারী হয়ে আসবে। এই গেটটা সম্ভবত ইমাজেন্সির জন্য রাখা হয়েছে। হসপিটালী বক্সের পেছনে, উপরের প্রধান ক্যামেরার ডান পাশে পেপসীর জন্য আলাদা রুম রয়েছে। হসপিটালী বক্সে এখান থেকেই লান্চ দেয়া হয়। পেপসীর কর্মচারীরা অতো ঘুরপথে না যেয়ে আমাদের তেলিয়ে ইমাজেন্সি গেটটা খুলে পেপসী নিয়ে যায়। আমরা বিরক্ত হলেও খুলে দেই। স্কাউটদের জন্য পেপসী পানে কোনো লিমিটেশন নেই! কেনো নেই সেটা বুঝতে অতোটা বুদ্ধিমান না হলেও চলে ;)

খেলার ১৫ মিনিট পর ওয়েষ্টার্ণ গ্যালারী ঘুরে এক লোক হসপিটালী বক্সের দিকে এগিয়ে এলেন। আমি নড়েচড়ে দাঁড়াই। শ্যুট টাই পড়া লোক। আমার নাক বরাবর লম্বা! তাকে টিকিট দেখাতে বলি- তিনি বিড়বিড় করে কি বললেন বুঝলাম না। মিনিট খানেক তাকে দাঁড় করিয়েই রাখলাম। পরে সহকারীকে হাঁক দেই, এই রাসেল এইদিকে আয়তো। উনার টিকিট নাই, টিকিট ছাড়া উপরে যেতে চায়। ও এসেই চোখ বড়বড় করে বলে- স্যার যাইয়ে, যাইয়ে। আমি হতভম্ব।
-- ঐ ব্যাটা তুই তাকে যেতে দিলি কেন?
-- তার মাথা ঠিক আছে?
-- আমার মাথা ঠিক আছে, তোর ঠিক নাই। তুই উনাকে যেতে দিলি কেন?
-- ছাগল উনি কে জানিস?
-- কে?
-- গাভাস্কার
-- গাভাস্কার! যাহ বেটা উনিতো আমার চেয়েও ছোটো!

সেদিন এটা নিয়ে অনেক হাসিঠাট্টা হলো। মাইক্রোতে বসে আমার বার্থডে পালন করা হলো এভাবে- হ্যাপী বেড ডে, হ্যাপী বেড ডে!

Tuesday, November 20, 2007

আমার মতো পাগোল প্রায়!

এখানকার সবকিছুই সবুজ। আমার শৈশোব সবুজ, আমার প্রেম সবুজ, আমার ভাঙ্গচুড় স্বপ্নেরা সবুজ। সবুজের বুক ছিঁড়ে যোগ চিহ্নের মতো দুটো রেখা চলে গেছে দুইদিকে চারটি গ্রামকে বিভক্ত করে। এই মিলনস্থলে বছর দুয়েক আগেও কিছু ছিলো না। ফসলের মাঠ আর নি:সঙ্গ এক ছোট ব্রীজ ছাড়া। বর্তমানে বসতবাড়ি গজিয়ে আমাদের ছোট বেলার স্বপ্নবুনার সেই আড্ডাটাকে মেরে ফেলেছে। ব্রীজে পা ঝুলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সূর্য্য ডোবা দেখাটা আর ফিরে পাবোনা কোনোদিন। কতো নিষ্ঠুর ভাবে সবকিছু বদলে যায়...।

-- দে
গভির হুংকারে চমকে উঠি খুব। কাছেই দাঁড়িওয়ালা এক লোক বসে আছে। আমি তার দিকে এগিয়ে যাই, কাঁধে ঝোলানো ক্যামটা হাতে নিয়ে টিউন করতে করতে প্রশ্ন করি- 'কি দেবো?' সে কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়। চোখের তারা ব্যতিত অন্য কোথাও সেটা দেখা যাচ্ছে না। মুখটা ভাবলেশহীন। আমার এগিয়ে যাওয়াটা তার কাছে প্রত্যাশিত না সেটা বুঝা যাচ্ছে। গম্ভির শব্দটা হঠাৎ করে নিচু হয়ে যায়, 'পাঁচ টাকা'। উহু কথার ধারটা একটুও কমেনি।

-- কেনো দেবো পাঁচ টাকা, চোখে আমার কৌতুক ঝরে। সে চুপ হয়ে যায় হঠাৎ। এর মধ্যে দুটো ছবি তুলে ফেলেছি। তার পকেটে ৩/৪টা কলম দেখা যাচ্ছে। 'এই কলম দিয়ে কি করা হয়?' সে নিরুত্তর থাকে। 'ঠিক আছে। পাঁচ টাকা দিতে পারি যদি বলেন এই পাঁচ টাকা দিয়ে কি করবেন।' সে কিছুক্ষন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ না নামিয়েই বলে- 'লাগবো না'। আমি ক্যামটা ফের কাঁধে ঝুলিয়ে সামনের গ্রামের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। এ পাগোল না। আবার স্বাভাবিক মানুষও না। অনেকটা যেন আমারই মতোন। হা হা হা। ওয়েট, একটা প্রশ্ন, সে খেলছেটা কার সাথে? আই ডোন্ট নো, আই ডোন্ট নো। অনেক ঋণ নেই বেটার। ঋণী থাকলে পাগোল হবার মজাটা টের পেতে সাধু! নি:শব্দে হাসতে থাকি লাগামহীন। ঠোঁট, চোখ, মুখ, ছায়া, সবখানেই অজানা এক উল্লাস। কেনো এতো উল্লাস আজ? উহু... অসুস্থ্য মরিচিকারা তা জানেনা। জানবেনা কোনোদিন।

Monday, November 19, 2007

জলছবি

মাঝে মাঝে নিজেকে ব্যবচ্ছেদ করি। কখনো দুভাগে, কখনো তিন, চার, পাঁচ, ছয় এমন অনেক অনেক ভাবে নিজেকে বিভাজন করি। আমি কি সেই, কিংবা আমি কি এই, এমন সব উদ্ভুত প্রশ্ন করি নিজেকে প্রায়শই। উত্তরগুলো কখনোই স্বাভাবিক হয়না। সময়ের সাথে বিকৃতির পাখা পুরনো দেয়ালের সবুজ শ্যাওলার মতো জীবনের সাথে সেঁটে যায়। এটাই নিয়ম। ঘড়ির কাটায় ব্যস্ততা ভর করবে আর তুমি ব্যস্ত নগরীর বুকে তোমার সুগভীর পাগলাটে ধ্যনধারনার আবেগী মারপ্যাঁচ ফলানোর চেষ্টা করবে। অবশেষে অসহনীয় ব্যার্থতা। ক্লান্ত আঁধারে, তুমি, হাঁ অনেক তুমির তুমি ফের হাত পা ছুঁড়ে নৈশব্দিক চিৎকার, ছ্যাঁছামেছি করবে, কখনো রেলিংয়ের কোনে হাঁটুর ভাঁজে মাথা গুজে নোনতা জল লুকোবে, ফের তুমি নি:সঙ্গ হবে... ফের এলোমেলো হয়ে সপ্তর্ষীর বুকে আলগা ভালোবাসা আঁকবে... এমনই সব অবাস্তব ওঠা-বসার সাথে সাখ্য গড়ে তুমি মাঝরাতে তোমার তুমিকে বিভাজন করবে। কখনো স্মৃতির পাখনায় নতুন জলছবি, কখনো পুরোনোকে টেনে ঘষামাজা... তারপর ফের সেই পুরনো চটি পাড়ি দিবে মাইলের পর মাইল, দু' কপি তুমি আর অক্ষরের ভাঁজে পেট চালানোর সায়েন্সের ফর্মুলা উপহাস করবে তোমাকে ক্ষনে ক্ষনে, লোকাল বাসের ভরাট নিশ্বাসে খ্যাপবে তোমার ভিশন প্রচন্ড আক্রোশে, তুমি হয়তো ভিষন এলোমেলো হয়ে এক তুমুল আশ্বাসের জন্য স্মৃতিকে খুড়ে খুড়ে পুকুর, পুকুর থেকে নদি, নদি থেকে সাগর... বানিয়ে নিজেকে প্রবোধ দিবে, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিবে, নতুন করে কিছু সুখস্বপ্ন...দ্যাখবে হয়তো... তারপর প্রচন্ড নি:স্ব হয়ে নিজেকে হয়তো তুমি ফের প্রশ্ন করবে- এ্যাই তুই কি বেঁচে আছিস?

Thursday, November 15, 2007

স্বপ্ন সবুজ

গ্রামে গেলে ভোঁতা নাকওয়ালা মানুষ হয়ে যাই। ছোটরা আমার ছায়া যেখানে দেখবে সেখান থেকে অন্ততপক্ষে ১০০ মাইল দূরে থাকবে। সকালে ভেজা বেড়ালের মতো চুপি চুপি মোক্তবে যাবে, তারপর চুপি চুপি এসে নাস্তা খেয়ে ফের স্কুলে যাবে। আমি ঘরে না থাকলে এক একজন তারা সম্রাট জাহাঙ্গীর হয়ে যায়। দুই ছেলে, এক মেয়ে ভাইয়্যার। তিনজন তিনরকম। বড় ছেলেটা ভাঙ্গচূড়ে দক্ষ, দানবীর, পড়াশুনায় হাবলচন্দ্র। মেঝোটা ভেজাবেড়াল, খুব হিসেবী, কম কথা বলে, স্কুলে নিয়মিত যায়। ছোটটা, যার নাম বৃষ্টি, প্রতিদিন ঘরের ভেতর কিছু না কিছু ভাঙ্গবেই। খুব রাগী। টনটন কথা বলবে। এই তিনপদের পুচকির দল আমি নিশ্চিত প্রতিদিন ওদের খোদার কাছে প্রার্থণা করে আমি যেন তাড়াতাড়ি ঢাকায় ফিরে যাই এবং এটাও সত্যি, ওদের খোদা শিঘ্রিরই তা কবুল করেন। আমি বাড়িতে বেশিদিন থাকতে পারিনা বিভিন্ন কারনে। গ্রামে গেলে সময় কাটতে চায়না, এটা সবচেয়ে বড় সমস্যা। বন্ধুরা গ্রামে থাকেনা, তাই ওদের নিয়ে আড্ডাবাজিও সম্ভব না। সবচেয়ে বড় সমস্যা মানুষজন খুব একটা চিনিনা। অথচ তারা সবাই কোনো কোনোভাবে আমার আত্মীয়। রাস্তায় বের হলেই বাবা কেমন আছো? বলে হয়তো কোনো বুড়ো দাঁড়িয়ে যাবে। অথবা মামা আসসালামুআলাইকুম বলে কেউ মাথা নিচু করে চলে যাবে। তুমি জাহাঙ্গীরের ভাইনা? বলে কেউ পথরোধ করে দাঁড়াবে। 'পড়াশুনা কেমন চলছে?' ইত্যাদি ইত্যাদি এসব মুহুর্ত খুব বোরিং। তবে এর মাত্রা কমই, এদের বেশির ভাগকে মেমোরাইজ করে চিনে নেয়া যায় কিন্তু নতুন আন্ডাবাচ্চা কাউকেইতো চিনিনা। কখনো কখনো কাউকে ডেকে বলি- এই এইদিকে আয়, তোর বাবার নাম কি? অনেক সময় দেখা যায় ওর বাবাকেও আমি চিনিনা! :( এখন থেকে ভাবছি বেশি বেশি গ্রামে যাবো। গ্রামের মানুষজনের সাথে খুব করে মিশবো। রবি ঠাকুরের কবিতটা এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হতে পারে...

বহুদিন ধরে, বহুক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি, বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে দু'পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপর
একটি শিশির বিন্দু।

Wednesday, November 14, 2007

শিশুর মতোই আমি-আপনি, তুমি-তুই

একজন আরব দার্শনিক শিশুদের ভালোবাসতেন, কারণ শিশুরা কিছু তৈরি করার পর তা ভেঙ্গে ফেলে। তারা নতুন কাপড় পরে খুশি হয়, তারপর সেটা নোংরাও করে ফেলে। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য বা কৌশল না ভেবেই নিজেদের মধ্যে তারা বিবাদ তৈরী করে।

Tuesday, November 13, 2007

ভালোবাসতে বাসতে ফতুর করে দেবো

রানা আজ জিজ্ঞাসা করলো কবে বিয়ে করবো আমি। কেন করেছে জানিনা, তবে উত্তর দিতে যতটা দেরী হবার কথা ততটা হলো না। বললাম, বিয়ে নিয়ে ভাবিনা অতো। অনেক জোড়াজুড়ি করায় বললাম, আসলে বিয়ে টিয়ে নিয়ে সত্যিই আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। বিয়ে করে হবে টা কি? আমার অনেক কাজ অসমাপ্ত হয়ে পড়ে আছে। সেগুলো সমাপ্ত করতে করতে বুড়োও হয়ে যেতে পারি। ও দাঁত কেলিয়ে হাসে, বলে, রাতে একা লাগে না? আমি না হেসে পারিনা, বলি- লাগেতো। আর কতদিন এভাবে কাটবে? ঘাড়ে হাত দিয়ে ও চোখ পিটপিট করে। ধুরররর মিয়া, ঐ ব্যাপার? আরে তাতে কি হইছে, যেদিন বেশি একা লাগবে সেদিন সুমনের ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে কাউকে না হয় জবাই করলাম :))

আচ্ছা, আমি কি আদৌ বড় হয়েছি? একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে তার গায়ের অদ্ভুত গন্ধ আর নব্য বুকের স্পর্শ নেয়া এবং অপর এক বিচ্ছিন্ন ঘটনায় টুকরো চুম্বন ছাড়া আমি বড়ত্বের কি প্রামাণ্যচিত্র জীবনের জন্য তুলে রেখেছি! অপর সব দিকের চেয়ে এই সাইডটা আমার আগাগোড়া ভাঙ্গাচুড়া। মাঝে মাঝে খুব কাটখোট্টা মনে হয় নিজেকে। যে যা চেয়েছে তাতো কখনোই দিতে পারিনি, বরঞ্চ বহুক্ষেত্রে খুব কষ্ট দিয়েছি। এসবক্ষেত্রে আমি নিজেও অনুতপ্ত হয়ে ভেতরে ভেতরে খুব পুড়েছি। দগ্ধ হচ্ছি রাতের পর রাত। এটা আমার রাতকে করাতের মতো ধারালো করে রেখেছে। মনটা অজস্রবার ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, তবু, ...কিচ্ছু করার নেই। কিচ্ছু না।

বিয়ের ক্ষেত্রে চাঁটগায়ের ছেলেদের একটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। তা হলো, তারা পাত্রী হিসাবে চাঁটগায়ের মেয়েদেরই পেতে চায়। আমি নিজেও এই চলিত ট্র্যাডিশনের উপর কয়েকটা পরীক্ষা চালিয়েছি। যতবার চালিয়েছি ততবারই ঐ একই ফল। এর কারণ চাঁটগায়ের মেয়েরা সুন্দর? না। এটা সেটা না। চাঁটগায়ের মেয়েরা এভারেজ সুন্দর। আমার কাছে চাঁটগায়ের মেয়েদের যে ব্যাপারগুলো ভালো লাগে তা হলো:

-তারা শান্তশিষ্ট। ধীরস্থির।
-বিয়ের পর তারা সংসারের বাইরে বাড়তি সময় ব্যয় করে না। পুরোপুরি সংসারী হয়ে যায়।
-তারা শ্রদ্ধাশীল।
-তারা অতিথিপরায়ন।
-তারা অহংকারী নয়।
-তারা গভীর মায়াশীল।
-তারা সন্তানদের প্রতি অধিক যত্নবান।
-তারা যৌথ পরিবার নিয়ে চলতি সময়ের প্রগতির উন্নয়ন ভাবনা মনেতে লালন করে না।
-তারা ধার্মিক।
-তারা এভারেজ শিক্ষিত।
-তারা খুব পরিশ্রমী। খুব কম সংসারে কাজের লোক থাকে। নিজেদের সংসার নিজেদের হাতে তারা দেখবাল করে।
-সর্বোপরি তারা মাদার তেরেসা হবার স্বপ্ন কমই দেখে। খুব সাধারণ জীবন যাপন করে থাকে তারা। পৃথিবী নয়, তাদের কাছে মূলত তাদের সংসারই সব।

আমি ঢাকার ছেলে নাকি চট্টগ্রামের সেটা নিয়ে মাঝে মাঝে সমস্যা হয়। তবে আমি চট্টগ্রামের ছেলে বলতে যতোটা গর্ববোধ করি, অন্য এলাকার ছেলে বলতে ততটা হই না।
আমি চাঁটগাইয়া পোয়া।

সেদিন রাজিবকে উপদেশ দিয়েছিলাম (ওহ আমার ঈশ্বর, আমার উপদেশের ঠেলায় পুরো বন্ধু সার্কেল ত্যাক্তবিরক্ত। তাদের তুমি রক্ষা করো।) রাজিব নিয়ম মাপিক এখনো রাত জাগছে। আমার মেজাজ বিগড়ে যায়। শালা। বললাম, শুন যাদু সোনা- সব পাখির সংসার হয়না। কিভাবে বুঝবি কোন পাখি তোর জন্য আদর্শ? যে পাখি কম উড়বে, বুঝবি এ পাখিকে তুই খাচায় পুরে রাখতে পারবি। যে পাখি ছটফট করবে, বুঝবি এ ভবঘুরে। এরা মাদার তেরেসা হতে চায়। সো লীভ দেম। তোর চাই খাঁচায় ডিম পাড়ার মতোন পাখি। উড়ে উড়ে সংসার হয়না, তুমি বাড়ি গাড়ি আর একশ একতলায় ফ্ল্যাট কিনে এক মাদার তেরেসাকে (ক্ষমা করো মাদার তেরেসা, আমার সাহস দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে! একে তুমি বালকসুলভ দৃষ্টিতে দেখো) তার পূণ্য কাজে বাঁধা দিয়ে সম্পর্কের বন্ধনে বেঁধে উহার সহিত এক রাত এক শট দিয়ে সুখ স্বপ্ন দেখতে পারো বৈকি, কিন্তু বাকী তিনশত চৌষট্টি দিন দেখবে তুমি অন্ধকারে, অন্ধকারে...।

নাহ খুব ওল্ডিষ্ট আমি। রাজিব কি বুঝেছে আল্লায় মালুম। তবে যদি কখনো নিজের জন্য ভাবার ফুসরত পাই তো প্রমিজ করতাছি, বৌকে ভালোবাসতে বাসতে ফতুর করে ফেলবো। বৌ আমার আমি জানি, ভুলোমন আর কাঠখোট্টা এই আমাকে ভালোই দেখবাল করবে। আমাকে সংসারের মায়ায় বেঁধে রাখবে। যৌথ পরিবারটাকে নিজের মতো করে সাজাবে। আমাদের টুনটুনির মতোন বাচ্চাদুটোকে (!) পুরোপুরি সময় দিয়ে তাদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে বড় করে তুলবে। এমন বড়, যাতে তারা বড় হয়ে বলবে- আমি আব্বু আম্মুর ছেলে/মেয়ে। আমার খুব লোভ হয়, বৌকে কোনো চাঁদ জাগা রাতে পাশে বসিয়ে এই ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠে ভালোবাসার গান শোনাই। গভির অসময়ে তার কোলে মাথা রেখে সবুজের গন্ধ নেই। তাকে স্বপ্ন দেখাতে দেখাতে নিজের মাঝে বিলীন করি। বউ আমার মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বুকের ভেতরের 'কিছু করতে না পারার' আগুনটাকে নিভিয়ে আমাকে ইন্সপায়ার করবে, আমার উপর জোড় খাটিয়ে পৃথিবীকে রাঙাবে নতুন করে। কতো কি...। স্বপ্নতো স্বপ্নই! কেউতো আর বুড়ো বয়সে আমাকে বিয়ে করতে আসছে না! তবু স্বপ্ন দেখে যাই, কোনো বন্য অভিলাসে।

Saturday, November 10, 2007

উত্তর জানা নেই

আর কতো দূর বয়েস ডিঙোলে নিঃসঙ্গতার দানাগুলো ইনোকটিনের মতো কাজ করবে? আর কত্দুর দূরে সরে গেলে এভারেষ্ট ডিঙ্গিয়ে শৈত্যরা হৃদপিন্ডের কাছাকাছি এসে বসত গড়বে? আর কত্দুর চোখ-কান-মুখ বন্ধ করে পথ হাঁটলে ধোঁয়াশার মতোন ছায়ারা ঝাপসা হতে হতে মিলিয়ে যাবে?

আর কতদূর...?

Thursday, November 8, 2007

ইচ্ছে করে খুব...

আমি আসলে মানুষ চিনি না। যতই প্যাঁচগোজের বাঁধন এড়িয়ে সটকে আসিনা কেনো, এখন খুব করে নিজেকে বুঝ মানাতে কেনো জানি ভালো লাগে, মানুষ আমি চিনি না। মনে পড়ছে, সেই ছোটবেলার কথা। সুনীল স্যারের ছেলেকে পিটিয়ে তিন দিন স্কুল ফাঁকি দিয়েছিলাম, ৪র্থ দিন ক্লাশে গেলে স্যার আমাকে কাছে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে দুষ্টুমী করতে নিষেধ করেছিলেন শুধু। খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন, তিনি আমাকে মারেননি। মনে পড়ছে, স্যারের একমাত্র সাইকেলটি নষ্ট হয়ে গেলে অন্যদের মতো তিনিও দেড় মাইল পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতেন। আমরা দুষ্টুরা ব্যাপারটা দুচোখে দেখতে পেতাম না। প্রতিদিনের সেই আম, বড়ই, বাতাবি নেবু চুরি'টা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাবে... ব্যাপারটা মেনে নিতে পারিনি তখন। অবুঝ মন... সেদিনের সেই চুরি বিদ্যার যোগ-বিয়োগই করে যাচ্ছি, আজো। স্যারের গোপন কষ্টের মতন আরো কতো কিছু গোপনে থেকে যাচ্ছে প্রতিদিন, তা দেখেও দেখছি না। খুব স্পর্শকাতর ছিলাম না, হয়তো আমি। এখন খুব ইচ্ছে করে হাত ধরে কারো হারিয়ে যেতে, দিগন্ত বরাবর, পথের ধূলোয় ভালোবাসার ছাপ রেখে। আঙুলের ডগায় শিশিরবিন্দু রৌদে ধরলে ক্যামন লাগে তা উৎসুক আর চেনা গন্ধওয়ালা মানুষকে দেখাতে ইচ্ছে করে, খুব।

-------------------------------------------

Saturday, November 3, 2007

হেল্প মি মি. মিরাকল

মনটা ভিষন খারাপ। চোখ জ্বলছে, জল আসছে না। কিভাবে এটাকে ওভার কাম করবো? হেল্প মি মি. মিরাকল...

Friday, November 2, 2007

প্রশ্ন

দিনটা আজ স্মরণীয় হয়ে থাকলো। নানান কারনে। এর মধ্যে বিশেষ এক কারণ, মাঝির ফোনকল। সেই মাঝি, যে নিজের পড়াশুনাটা বিসর্জন দিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলো। আমার ছোট বেলাকার বন্ধুরা ভিষণ পরিশ্রমী। আমার মতই নানান অপ্রাপ্যতায় তারা জর্জরিত। ভুট্টো দুইদিনও গ্রামের বাড়িতে থাকতে পারেনা, ওর উপর ভর করে আছে বিশাল সংসার। তাই ব্যবসায় ফাঁকি দেবার কোনো অজুহাত নাই। নবী আছে নিজের মতো করেই, গ্রামে ফেরে বছরে দুয়েকবার, আর আমি? হুমমম। ভাগ্য বলিয়া যদি কিছু থাকিয়া থাকে তবে আমি নিশ্চিত আমাদের ভাগ্য সেট-আপ করার সময় ঈশ্বর মদ খেয়ে টাল ছিলো। ব্যাটায় উল্টা-সিদা কি যা তা লিখে রেখেছে কপালে।

মাঝি নামটা নকল নাম। এ নামের চমৎকারিত্বে ওর আসল নামটাই হারিয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলে যখন ফসলের মাঠ ভরে সমুদ্র হতো তখন আমরা ডুব সাঁতার দিয়ে হিন্দু পাড়া থেকে বড় বড় কলাগাছ কেটে ভেঙ্গুরা বানাতাম। এটা একটা শৈল্পিক কাজ। সহজে বানানো সম্ভব না। ৫/৬টা কলাগাছকে মাঝারী সাইজে কেটে পাশাপাশি রেখে এর ভেতরে বাঁশের গজাল ঢুকিয়ে জোড়া লাগানো হতো। ভেঙ্গুরা মাঝি খুব ভালো চালাতে জানতো, তখন থেকেই আমরা ওকে মাঝি বলে সম্বোধন করি। আমাদের একটা ছোট দল ছিলো। সেই দলের নিয়মানুযায়ী সবার একটা করে ছদ্ম নাম অপরিহায্য। মাঝির নামটা সেখানে বিনা বাক্যে টিকে যায়। ভেঙ্গুরা বানানোর দিন শেষ। দীঘির ঘন জলে ডুবাডুবির উচ্ছ্বাসটাও এখন আর নাই। তবু আমরা সেই গুপ্ত দলের সদস্যরা যখনই গ্রামে ফিরেছি, ঘরে ফেরার আগে দীঘির পাড়ে উঠে প্রথমে দিগন্ত ছুঁয়েছি। এটা আমাদের নিখাদ ভালোবাসা। এ আমাদের অনেক কিছু মনে করিয়ে দেয়।

মাঝি আরো একটি মাইল ফলক ছুঁয়েছে। ওর দ্বিতীয় বোনের বিয়ে হচ্ছে ৫ তারিখে। আমাকে যেতেই হবে। ভুট্টো এর মধ্যে চলে গেছে। আম্মাকে ফের ডাক্তার দেখানোর জন্য আমাকে শনিবার অবদি অপেক্ষা করতে হবে। লিটন, মিলন গ্রামেই আছে। নবীকে এখন পেলে হয়। চট্টগ্রামে বিয়েতে প্রচুর খরচ। আকডুম বাকডুম কত কি করে ওখানে। কয়েক দিন ধরে চলে উৎসব। সেসব উৎসবের মধ্যে রঙ ছুঁড়াছুঁড়িটা আমার বিশ্রি লাগে। মনে হয় হলি-খেলা হচ্ছে। কনে পক্ষ বর পক্ষকে কত বড় গরু উপহার দিলো, বর পক্ষ কনে পক্ষকে কি দিলো এমন সব হিসেব নিকেশে আমার অসহ্য লাগে। শুধুমাত্র প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি মহিলাদের বিয়ের গানের আসরটাকে আমার ভালো লাগে। ফাঁকে বিনোদনের জন্য প্রতিরাতেই এখানে মঞ্চ নাটকের ব্যবস্থা করা হয়। এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে গ্রামের উঠতি বয়েসী ছেলেরাই। ভালো তারা খুব একটা যে করতে পারে তা নয়, তবু চেষ্টা করছে ওরা এটাই বড় কথা। মঞ্চের সামনে উৎসুক মানুষের খিলখিল হাসি, অদ্ভুত মুখভঙ্গী, উৎসুক দৃষ্টি দেখতে আমার দারুন লাগে। আমি বেশ কিছু বিয়ের গান রেকর্ড করেছি বিচ্ছিন্ন ভাবে। এবার ইচ্ছা আছে সেসব স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার।

-> দুপুরে রাশেদের ওখানে হামলা চালালাম। রাশেদ এখন তার নতুন ভাবীকে দুচোখে দেখতে পারেনা। আমিও না। তবু অমন সুন্দর চেহারার দিকে না তাকিয়ে পারিনা। দারুন সুন্দর, ফিগার, চেহারা। স্বভাবটা ভালো না। আন্টি আমার খাবারের সাথে বিশেষ একটা জিনিস সবসময় রাখেন, তিনি জানেন এটা আমার খুব প্রিয়। খাবারের সাথে তিনি মজার এক আচার দেন। বিয়ের পর বৌকে আমি আন্টির কাছে পাঠিয়ে এ আচারের রেসিপি শেখাবো। খাবার বেড়ে দিয়ে বরাবরের মতই তিনি রাশেদের ক্রিয়াকর্মের বিস্তারিত বিবরণ শুনালেন। রাশেদকে ফোন করলাম, বললো রিক্সায় আছে বন্ধুর সাথে! অথচ আন্টি বললেন অন্য কথা- নতুন গাড়ি নিয়ে মেয়ে নিয়ে ঘুরছে সে! আন্টি জানলো কেমনে?!! ঝাড়ি দিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে আনালাম।
'সবতো মাটি করে দিলি?'
'হুমমম শুনলামতো সব'
'দোস্ত মা কিছু বলেছে নাকি?'
'হ শালা তোকে আদর করতে বলেছে' ও আমার বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।
'তারপর কি খবর তোর?' আমি ওর মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে বলি।
'কি খবর আর, সপ্তায তিনটারে এসপার ওসপার করতাছি'
'বলিস কি বেটা!'
'শুক্রবার সোনিয়া, মঙ্গলবার মিতু, বিৎস্যুতবার লাবনীকে ব্রাউজ করতাছি সমানে।'
'হুমমম''দোস্ত তারপরও রাইতে ঘুম আহে না :( দুইটা করে ট্যাবলেট খাওয়া লাগে'
'ট্যাবলেট খাসনা আর, অভ্যেস হয়ে গেলে সমস্যা'
'আমি নিজেও বুঝি। কিন্তু ঐ খা** মেয়েটা এমন করে...। দোস্ত কি করবো বুঝিনা। রাতে ঘুম আসে না। কিচ্ছু ভাল্লাগে না'
'এটা কেমন কথা, যা ফোট, সিভি রেডি করেছিস?'
'আররর সিভি... চাকরী করে কিচ্ছু হবে না। আর এখন নিজেদের অফিসেতো বসতাছিই, চাকরীর কি দরকার, টাকা দিয়ে কি হইবো?'
'টাকার দরকার নাই সেটা মানলাম, কিন্তু মানুষ সম্পর্কে তোকে জানতে হবে না? নিজেদের অফিসে থেকে একটা মাছিকে পর্যন্ত চিনতে পারবি না। এম.বি.এ তে ভর্তি হচ্ছিস কবে?'
'ভাইয়্যা বললো ইউ.কে যেতে।'
'তুই নির্ঘাত মারা যাবি'
'কেন কেন?'
'এখনো তুই দুধের শিশু। দেখলামতো ঘরের কি অবস্থা করে রেখেছিস? যে ছেলে পানি পর্যন্ত তুলে খেতে জানে না তার জন্য বৈদেশ বাস নিষিদ্ধ।'
'কি বলিস ব্যাটা, ঐটা একটা স্টাইল' বলেই ও মুচকি হাসে।

রাশেদের এই হাসিটা আমার দারুন ভালো লাগে। খুব সাদাসিদে আর লাজুক হাসি। অথচ এ লাজুক হাসির বাইরে ও অন্য মানুষ। কিছুদিন আগেও সে এতোটা ডেসপ্যারাডো ছিলোনা। ওর দাবী ও যেমন ঠকেছে তেমন করে সবাইকে ঠকাবে। ওকে আটকানো যাবে না। ঢাকার মেয়েরা অত্যাধিক প্রগতিশীল, ওরা এমনি এসে ওর কাছে ধরা দেয়। ওকে তাই আমি জোড়ালো ভাবে এসব থেকে বিরত রাখতেও পারিনা। যেখানে ও বিনা পরিশ্রমে পেয়ে যাচ্ছে সেখানে আমি বাঁধা দিতে যাবো কেন? গ্রামের বন্ধুদের সাথে শহুরে বন্ধুদের আমি কখনোই মিক্সিং করতে পারিনা। সম্ভব না। আকাশ পাতাল ব্যবধান। এখানে প্রতিদিন এক একটা ভার্জিন মেয়ে স্বেচ্ছায় বিসর্জিত হয়, প্রতিটি বিসর্জিত মেয়ে প্রতিদিন ভার্জিন সাজায় মগ্ন হয়। এরা এ ফুলে ঢু মেরে ও ফুলে উড়ে যায়। তবে, রাশেদ জীবনে একটা মেয়েকেই ভালোবেসেছে বাকীদের সাথে ও অভিনয় করছে।

একটা পারফেক্ট ছেলের যা যা থাকার দরকার তার সবই রাশেদের আছে, তবু কলি কেনো রাশেদের জন্য অপেক্ষা করেনি?
বিরাট প্রশ্ন।

যন্ত্রণা

'গ্যাস আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটা একদিন ফুরিয়ে যাবে। তাই অযথা চুলা জ্বালিয়ে রাখা ঠিক না। একটা ম্যাচকাঠী বাঁচানোর জন্য উনুন জ্বালিয়ে রাখা ঠিক না।' সকালেই উপদেশটা শুনলাম ৩ বার। যিনি বললেন বয়সের দিক থেকে তিনি সেঞ্চুরীর পথে। আমি নিজেও উপদেশটা বার কয়েক রিপিট করলাম, বাকিদের শুনালাম ভঙ্গী নকল করে। নকল করা সহজ, একহাত কোমরে রাখতে হবে, ঠোঁট দুটো টিয়া পাখির মতো সরু আর নাকটা কুঁচকে বলতে হবে। অ্যাঁ... গ্যাঁস আঁমাদের জাঁতীয় সঁম্পদ। এঁটা এঁকদিন ফুঁরিয়ে যাঁবে। টাই অঁযথা চুঁলা জ্বালিয়ে রাঁখা ঠিঁক না। এঁকটা ম্যাছকাঁঠী বাঁচানোর জন্য উঁনুন জ্বালিয়ে রাঁখা ঠিঁক না।"

নকলটা ভালো হয়েছে তা বেশ ভালো বুঝা যায়। যিনি শুনেছেন তিনি আঁচলে মুখ ঢেকে হেসেছেন। এদিকে আমার এক চোখ ট্যারা হয়ে গেছে নকলের ঠেলায়। হায় আগেতো চিন্তা করি নাই, দেখিও নাই। দাদী আমার মাশাল্লাহ সুন্দর। শুধু নাকটা একটু বোচা। বোচা নাঁকিরা নাকি হাঁদা হয়। দাদীকে দেখলে অবশ্য এর সত্যতা টের পাওয়া যায়।

আঁমাকে তিনি নতুন হাওয়াই ফ্যান কিনে দিবেন। পুরানটায় বাঁতাস কম দেয়। মনে মনে ভাবি, হায় তুমি যদি শীতের আগে আসিতে!
'এ জিনিস মাথার উপর পড়লে আমি নির্ঘাত মারা যাবো।'
'জগত ছেড়ে সবাইকে চলে যেতে হবে। আমাকেও যেতে হবে, তোকেও যেতে হবে'
'কো...কোথায় যাবেন?'
' সররর তুই জানিসনা মৃত্যুর পর মানুষ কোথায় যায়? তিনি আমাকে সরিয়ে মেহেদী গাছের পাতা থেকে ধুলো ঝাড়ছেন।
' কখনো ঐখানে যাই নাই, তবে আপনার এতো তাড়াতাড়ি সেখানে যাওয়া উচিৎ হবে না’
' কেন?'
'ফ্যান কে কিনে দেবে?' হো হো হো আমি বুড়ির পেছনে নৈ:শব্দিক উল্লাস করি। ঝানতাম না আমি ডান্স পারি!

সকালেই বুড়ি ঘুম ভাঙ্গাচ্ছেন ইদানিং। মুখ-চোখ-ভ্রু কুঁচকে ভাবি এ বুড়ি ছাদে উঠে ক্যামনে :(( প্রতিদিন সকালে এমন উটকো ঝামেলা, জানটার উপর ইদানিং খুব অনৈতিক হামলা চলছে।

Thursday, November 1, 2007

আমার পথচলা

ইদানিং শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি হচ্ছে। অনাথ বৃষ্টি। শীত নামছে বেশ বুঝা যাচ্ছে। ঘুম ভাঙ্গলে আবিস্কার করি বিছানায় 'দ' হয়ে শুয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছি। দরজা খুলে ছাদে বেরিয়ে এলেই ফুরিয়ে যাওয়া বৃষ্টির আঁচ টের পাওয়া যায়। টবে লাগানো প্রায় প্রত্যেকটা গাছে নাল-নীল ফুলের মেলা। আমার লাল-নীল কিংবা রঙিন ফুল অতো ভালো লাগে না। দুইটা টবে ঘাসফুল লাগানো। শুভ্র সাদা। এদের আমি বিশেষ কদর করি। ওরা যখন ফোটে তখন আমি লাগামহীন দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকি। ঘুমের শেষ স্পর্শ এখানে বসেই ফুরিয়ে যায়। সাথে মাথার ভেতরের ঝিমঝিমানি। রেলিংয়ের এ কোনায় বসে কাটে আমার কিছু নির্ঘুম রাত, কিছু বিকেল। কখনো গিটারে টুংটাং শব্দ করে, কখনো একাকী, কখনো আড্ডা দিয়ে।

লামিয়া নিজেকে লুজার বলেছে, না বুঝেই বলেছে। আমিও নিজেকে লুজার বলি, এবং সেটা বুঝেই। জীবনটার রাস্তা পরিবর্তন করা অনেক সহজ কিন্তু সঠিক রাস্তায় নিজেকে পরিচালনা করা অনেক কঠিন। তোমাকে ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে, তোমাকে সাংসারিক দায়িত্ববোধ উপলব্ধি করতে হবে, তোমাকে প্রতিটি প্রদক্ষেপে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কথা স্মরণে রাখতে হবে। এসব ভাবলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। একটা ভালো চাকরী খুঁজছি। পেয়ে গেলে ভার্সিটি পরিবর্তন বাধ্যতামূলক। করবো। যেখানে যাবার ইচ্ছা সেখানে আবার 'ইয়াবা'র ছড়াছড়ি। ইয়াবা খেলে নাকি শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আমি অবশ্য শীতলগোষ্ঠীয় প্রাণী নই। প্রাকৃতিক ভাবেই মহিলা দেখলে আমার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। বন্ধুদের কেবল বলেছি ওখানে পড়ার ইচ্ছা আছে। কিন্তু প্রচুর খরচ। তবে ফুল টাইম চাকরী করলে এর কাছাকাছি যাওয়াটা কঠিন না।

ইদানিং পার্টিরা বাঁধ ভেঙ্গেছে। এসবের রাত্রি-দিন আমার অতো খারাপ লাগে না। নিজের মতো থাকি। বেসুরে গাই। তাল পৃথিবীকে আরো ঝাপসা করি। কিন্তু জগতের সব তাল গোষ্ঠির সমস্ত চিন্তাধারা এখানে এলে ভুল প্রমাণিত হয়। 'র' মেরেও তালকে আনায়ন করা সম্ভব হয় না, কখনো কখনো। কখনোই জোড়াজুড়ি কিংবা শব্দের তীর ছুঁড়েও নারুর প্রতি আসক্তি আমার ভেতরে ঢালা সম্ভব হয়না। ওরা হতাশ হয়, ওরা মাত্রারিক্ত তাল হয়। সভ্যতার এসব নাচানাচি অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। কোন বালে বলেছে এসবে দু:খবোধ হারিয়ে যায়, আমার বাড়ে।

নিজের অনেক স্বাদ-আহলাদ মাঠে মারা গেছে। স্বাধ-আহলাদকে জীবনের সাথে জুড়তে টাকা পয়সা লাগে। আমার সীমিত অর্থনৈতিক অবস্থান হিসেবী না হলেও বরাবর ট্যানটেনাটান। জীবনের প্রায়োগিক দিকগুলোর দিকে তাকিয়ে আমার অপরাধবোধ হয়। কারো জন্যই পারছি না ভালো করে কিছু করতে। পড়াশুনার ব্যাপারে স্পর্শকাতরতা আমার একটু বেশি সেটা মানি। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে এটা আমাকে যা দিবে তা দিয়ে ওদের জন্য আরো বিশাল ভাবে কিছু করার পথ খুলবে।

Wednesday, October 31, 2007

ছেঁড়া মানুষের গল্প

তুখোড় অবিশ্বাসীও সময়ের কোনো এক কোনায় গিয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু তুখোড় বিশ্বাসী যখন বিশ্বাস ভঙ্গ করেন তখন সেটা কতটা মেরামতযোগ্য?

প্রেমে পড়লে পাবলিক ছাগল হয়। তখন লতা-গুল্ম, ঘাস, পাতা, কাকড়, বালি, অ্যাবসুলেট, শ্যান ইত্যাদি হেন জিনিস নাইযে সে খায়না।

ছাগল ছিলাম।

এটাও ঠিক যে, সাংসারিক টানাপোড়ন আর অস্থির ভবিষ্যত একাকী জীবনের দরজায় এসে কড়া নাড়লে রঙিন পৃথিবীও হয়ে যায় ধূসর।

আমার পৃথিবী এখন ধূসর।

আমি পোশাক পরিচ্ছদ, চিন্তা-ধারায়, চাল-চলনে একজন শহুরে মানুষ। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে খুব রক্ষণশীল। সামাজিক বিধি-নিষেধ আমাকে তেমন ড্রাইভার্ট করেনা। কেবলমাত্র আমার চোখে, মনে, বিবেক বুদ্ধিতে যেটা পরিশুদ্ধ মনে হয় সেটাকেই আমি ঠিক জিনিসের কাতারে রাখি। স্বভাবে আমি কিছুটা মুখচোরা টাইপ ছেলে। নিজের চিন্তাধারার বিকাশের সাথে সাথে আত্ম পরিচয় তুলে ধরার মানষিকতা আমার কম। একটু আড়ালে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। যারা ঢাকঢোল বাজিয়ে নিজেকে পণ্য বানায়, নিজেকে মহাজ্ঞানীরূপে সাজাতে ব্যস্ত তাদের বরবর এড়িয়ে চলি। গলাবাজি একদম ভালো লাগে না।

নেট ব্যবহার করি ৯৮ থেকে। এককালে প্রচুর চ্যাট-ফ্যাট করেছি। তখন বয়স কম ছিলো, নতুন কিছু নিয়ে গুতোগুতি করতে ভালো লাগতো, এখন লাগে না। নেট জীবন নিয়ে আমার ফিলোসপি তেমন জোড়ালো না। এ এমন এক জীবন যেখানে প্রতিনিয়ত প্রলোভন থাকে। শব্দে, বাক্যে লুকিয়ে থাকে প্রতারণা। যার প্রতি এই প্রতারণা সে ব্যাটা কিঞ্চিত পরিমান দু:খ পেলেও যিনি এই প্রতারনা সৃষ্টি করেন তিনি কখনো অনুশোষনায় দগ্ধ হন না। তার কাছে এটাই স্বাভাবিক, একটা বিনোদন। বড়জোড় সময়ের একটা ছোট ভুল।

নেট জীবনে যেসব মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে মনে হয়েছে তারা বেশির ভাগই ফেক। অথবা। তারা আদতেই অমন।

কিছু মানুষের কাছে বাড়তি কিছু পাবার আশা করেছিলাম। যার কাছে যতটা প্রেরণা, পথ চলার অনুপ্রেরণা পাবার প্রত্যাশা করেছিলাম, তার কাছ থেকে কখনোই সেটা পাইনি। এটা আমার জীবনের একটা অতৃপ্তি। বাস্তব জীবনে নিজের ব্যক্তিগত জীবন, চাকরীর জন্য দৌড়োদোড়ি, পড়াশুনাটা চালিয়ে যাওয়ার মতো ভারী কাজগুলোর ফাঁকে চিন্তাধারা শেয়ার আমি কখনোই কারো সাথে করিনা। আমার ভালো লাগেনা।

প্রিয় মানুষদের সাথে প্রচুর ঝগড়াঝাটি হয়। শাব্দিক কিংবা নিরোবিক। বন্ধুদের মাঝে আমার একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে। জগতে যে দুয়েকটা মিরাকল পেয়েছি আমার বন্ধুরা তেমন কিছু মিরাকলের একটি।

অনেক বার হারিয়ে গিয়েছি। বাস্তবে এটা বেশি ঘটেছে। অনেকদিন বাড়ি ফিরি নাই এমন ঘটনা ঘটেছে বহুবার। কিন্তু নেট লাইফে হারিয়ে যাওয়াটা অনেক কঠিন। তুমি নরকে গেলেও গুগল বেটায় তোমার ঠিকানা ঠিক ঠিক জানিয়ে দেবে। যদিনা তুমি ক্ষনে ক্ষনে রঙ না বদলানোর দলে থাকো। যদিনা তোমার নিজস্ব একটা ছায়া না থাকে।

ভালোবেসে মন খারাপ করেছি। এমনো হয়েছে অনেক অনেক দিন ধরে কিছু অর্থহীন আবদার, অনুনয়, ভালোবাসা, আহলাদ, অপেক্ষা কিংবা প্রতীক্ষাময় দিনগুলোর কথা বার বার স্মরন করেছি। সময়ের এ প্রান্তে এসে বুঝলাম, সবই ছিলো নিছক ছাগলামী।

আমার প্রেম গফুরের মহেশের মতই। এক কেন্দ্রিক আর মাথার উপর বোঝা। একে ফেলতে পারি না, একে অশ্রদ্ধা করতে পারিনা, একে রাখতেও পারিনা।

Monday, October 29, 2007

চলে যাচ্ছে দিন...

খুব অবষন্ন শরীর। ক্লান্ত আর পরিশ্রান্ত। তবে ঘন্টা খানেক শাওয়ারের সংগীত শুনে মনটা ফুরফুরে এখন। ফুরফুরে অলস মেছো বাঘ। উদম হয়ে গোসল করার বদ-স্বভাবটা কবে যাবে জানিনা, তবে এতে বিবাগী উল্লাস আর নিজেকে উৎসর্গ করার আত্মতৃপ্তি আছে। কাল গভীর রাতে ভাবলাম ব্লগিং করি, করা হয়ে উঠেনি। উইন্ডোজটা কেনযে খোলেনি তখন বুঝতে পারিনি, নিজের পিসি বলে কথা, প্রবলেম সপ্তাহের কোনো এক সময়ে ঠিকঠাক করি। গোসলটা সেরে খালি-গা নিয়ে পিসি অন করেই দেখি সবকিছু ঠিক ঠাক মত চলছে। অর্নবের 'রুপালি রৌদ' কে বাজিয়ে নিচে নেমে এলাম। অনেকদিন পর, অ-নে-ক দিন পর, দাদার লাইব্রেরীতে ঢু মারতে ইচ্ছে হলো। হালকা ময়লার আস্তর জমে আছে সেলফে, বইগুলোতে। শংকরের 'ছেলেবেলা' পড়তে ইচ্ছে করলো কিন্তু শেষে ওটার ধারে কাছেও গেলাম না। তসলিমা'র 'নিমন্ত্রণ'টা তুলে নিলাম। হাসি ফুটলো বাঁকা হয়ে। রেখে দিলাম জায়গা মত। জুলভার্নের এলাকায় এসে দেখলাম সবই পড়া। সমরেশ পড়তে ইচ্ছে হলো হঠাৎই। উত্তরাধিকারটা নিয়েও নিলাম না। সাতকাহনটা অনেক বার পড়বো পড়বো করেও পড়া হয়নি। আজ নিলাম, রুমে এসে সটাং শুয়ে পড়লাম। এবার হবে ম্যারাথোন বই পড়ার প্রতিযোগীতা। রাত ২টায় ১২৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এগিয়ে আবিস্কার করলাম আমার ভ্রু কুঁচকে আছে। মেজাজটা হয়ে আছে খিটখিটে। গল্পের বই পড়তে বসলে আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। গল্পের বই শুধু না, চটি থেকে পত্রিকা যা-ই পড়িনা কেন নাক-মুখ-মন ডুবিয়ে পড়ি। এসময় কেউ আমার পাশে বোম্বিং করলেও আমার কান অবদি সেটা পৌঁছাবে না।

সাতকাহন পড়ার আগ্রহ কমে গেছে, তাই এটাকে মাথার পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়াই শ্রেয়। সাতকাহনের মূল বিষয়বস্তু কি? একটা মেয়ে, যে কিনা ভবিষ্যতের কোনো এক চোরা পথে গিয়ে আধূনিকা নারী হবে! যে কিনা দুনিয়াদারি সম্পর্কে সব্বোজ্ঞানী হবে! যে কিনা সমাজের একটা ছেলে যা যা করে থাকে তা-ই করার চেষ্টা করে! লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত করবে! লেখকের গন্তব্য কি? অন্তত এটা জানার জন্য হলেও আমাকে সাতকাহন পড়তে হবে। হাঁ আমি জানি আমার ভ্রু কুঁচকে যাবে, আমি জানি আমার পক্ষে এ বই নূন্যতম ১৫ দিনেও শেষ করার সম্ভব না, তারপরও আমি এ বই পড়বো।

বন্ধুরা যখন ঈদের মার্কেটিং শেষে পুরান ঢাকায় ইফতারী করার অভিলাস নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে তখন আমি নীলক্ষেতে ৫ মিনিটের বিরতি নিয়ে একটা বই কিনেছিলাম। ঈদ মার্কেটিং! বইয়ের নামটা তেমন চমকপ্রদ না। তবে বিষয়বস্তু আর উপস্থাপনটাকে বলবো আমি, ব্রিলিয়ান্ট। হাঁ 'দা ভিঞ্চি কোডের' কথা বলছি। দারুন তৃপ্তি নিয়ে পড়েছি, কিন্তু শেষ করে বুঝলাম লেখক বেটায় সমঝোতা করে ফেলেছে। তিনি মোটেও তার সততা শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেননি। একে আমি খাটো করবো না, কারণ পাঠকদের আঁটকে রাখার দারুন কৌশল আর বিষয়বস্তু এতে বন্দি আছে, কিন্তু আমার কেন জানি এ বই এখন ভালো লাগছে না। এ আমি দ্বিতীয়বার পড়বো না মোটেও।

Friday, October 26, 2007

ভাবনাগুলো বেকার

ইদানিং ব্যস্ত থাকার মতো কোনো কাজ নাই। নাই পড়াশুনার ঝুটঝামেলা। কেবল শৌন্য ঠাকুরের মতন এলেবেলে ছোটোছুটি। আমার এসবে খারাপ লাগে না, আবার ভালোও লাগে না। জীবনটা চলছে জীবনের প্রয়োজনেই, ব্যাস, এটুকুইতো। স্পর্শকাতর বিষয়য়াদি মাঝে মাঝে ঘনকালো তুফান হয়ে লতাবৃক্ষের মতন মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে যায়। আমি প্রতিবাদহীন নত-মস্তক নিয়ে নির্জনতায় পড়ে থাকি। প্রাপ‌্যতাগুলো আমি জানি আমার জন্য বন্ধুসুলভ হয়না কখনোই।

মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার বিলাসীতা মরে গেছে শেষ ফাগুনে। এ নিয়ে মাঝে মাঝে দু:স্বপ্নের মতো একটা মৃত অভিলাস বুক ফুড়ে জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে। এ ঘন নোনা জল প্রত্যাশামত যা প্রমাণ করার চেষ্টা করে তা তেমন মূল্যবান নয় আর। কেউ আর আমার জন্য অপেক্ষায় নেই। আমিও নেই। কেউ আমার নয়, আমিও কারো নই। সহজ হিসেব নিকেশ। একে জটিল করে ভাবতে এখন আর ইচ্ছে করেনা।

Saturday, October 20, 2007

আজ আছি কাল নেই

রেষ্টুরেন্টে বসে পেট ভরছি সমানে। মাথার ভেতর নানান চিন্তা। খুব অস্থিরতায় যাচ্ছে দিন, ইদানিং। মহা বিরক্তি নিয়ে অনেকটা জোড় করেই খেতে হচ্ছে। এমন সময়, হঠাৎই রেস্টুরেন্টের ঘনকালো কাঁচ ফুরে চোখ চলে যায় রাস্তার ওপাশে ছোট্ট টি-স্টলের দিকে। ঠা রোদ্রুর বাইরে, এর মধ্যে

Sunday, September 30, 2007

ধোপীকা কুত্তে

উর্দ্দুতে একটা প্রবাদ আছে, ধোপীকা কুত্তে। না ঘারকা, না ঘাটকা।
অনেকটা তেমন অবস্থা আমার।
একুল ওকুল কোনোকুলের নই আমি।

এজন্য কে দায়ী-
আমি?
পরিবার?
নাকি নিয়তি?

মৃত্যু খুব কাছে এলো, জবাব মিলবে না জেনে চলেও গেলো। বেচারা...।

এবং
দেখলাম, প্রত্যেকটা মানুষ নিতান্তই একা।

চলতি নিয়মে পথ চলছি, সেই একঘেয়ে জীবন, আবার। লম্বা লাইনের শেষে দাঁড়িয়ে থাকা, ঘুম ঘুম ক্লাশরুম, অফিস ডিঙ্গিয়ে ফের বাড়ি ফেরা, ঠুংঠাং যন্ত্রণা, গিটার, কীবোর্ড কিংবা গভির রাতে কান গরম করা, আমার পাগোল ভালোবাসা।

Monday, September 24, 2007

ইচ্ছেগুলো মিথ্যে ছিলো

জীবনটা গন্ধহীন শুকনো ঝরাপাতা। প্রয়োজন ফুরালে তুমি মূল্যহীন। কিংবা এমনো হতে পারে প্রয়োজনেই তুমি মূল্যহীন! প্রয়োজন তোমাকে মূল্যহীন করেছে। বসে ভাবি নির্জনে, অনেক হয়েছে, এবার সময় হয়েছে হারিয়ে যাবার। আবার সেই ঝাপসা ঝিরঝিরে একরঙি সংঘর্ষ, চোখের পর নেমে আসে রাঙা আঁধার হয়ে। গুটগুট অন্ধকার, চারপাশে। কিছু দেখি না মনে... চোখে... কেবল রিনিঝিনি সুর লাহরী। ভেসে যাচ্ছে নোনা জল হয়ে। আমি মৌন হয়ে শুনতে থাকি, নির্লজ্জ্ব প্রতীক্ষায়... শেষ বারের মতো তাকে দেখবো বলে।