Friday, November 30, 2007

মৃত রাতের অসুস্থ্যতা

মশা এরোসোলকে থোড়াই কেয়ার করে। এ ছিটিয়ে কোনো ফায়দা হয়না। কিছু মশা অবশ্য ডিগবাজি খেয়ে এরোসোলের উপকারীতা জাহির করার চেষ্টা করে, কিন্তু ঐ পর্যন্তই। ডিগবাজি খাওয়া মশারা এমনিই মরে, এরোসোল ছিটালেই কি, না ছিটালে কি। আমার সাথে কমজোরী মশাদের কিছুটা মিল আছে। আমার উথান কি, আবার পতনই বা কি? আমিতো পতিত হয়েই আছি। পাহাড়াদারদের হুইশেল শুনতে পাচ্ছি। মৃত রাত। শরীরের সব স্নায়ু আরাম চাচ্ছে, মাথার প্রতিটি অনু-পরমানু ঘুম চাচ্ছে, কিন্তু ঘুম আসছে না। এ আমার দোষ না। এ এক ব্যামো। এ ব্যামোর কোনো চিকিৎসা নেই।

নিরাময়হীন ব্যামো নিয়ে সুখে আছি। সারাদিন কেটেছে ব্যস্ততায়। সকালেতো ঘুম থেকে উঠতে পারিনা। একজন ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলো। সাথে অবশ্য ফ্রি কিছু টিপস। ও আমার দ্বারা হবেনা। সাউন্ড হেলথ এবং মাইন্ড নিয়ে দিব্বি সুস্থ্য সবল একজন মানুষ আমি। আমার আবার বাড়তি কিছু করার প্রয়োজন কি? উঠেই পিসিটা অন করলাম। গান বাজছে- 'এই নীল মনিহার'। ভালো একটা গান। ঠিক নয়টায় আমরা পল্লবী বাসষ্ট্যান্ডে মিলিত হলাম। আজকে আমার সহকারী বাংলা কলেজের এক ছোট ভাই। ছেলেটা দারুন। কথা বলে টনটন এবং অবশ্য খুব সুন্দর সৎ ছেলে। আই লাইক হীম। ঘটনার মতো ঘটনা ঘটেছে অনেক। ওসব বলতে ইচ্ছে করছে না। নিজের কথা বলি। হরিবল। সবইতো নিজের কথা! শুরু করি তবে পরের কথা। বড় চাচা ইন্তেকাল ফরমাইবেন শিঘ্রির। ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আমায় বারবার ফোন করা হচ্ছে। বারবার বলেছি- আসছি। যাওয়া হচ্ছেনা। বুঝতে পারছিনা যাবো কি যাবো না। বউ থাকলে ভালো হতো। জোর করে অলস এই আমাকে ঐ বাড়িতে পাঠাতো। কাছেইতো। গাজীপুর অতো দূর না। কিন্তু আমি ঐ ব্যাটাকে প্রচুর ঘৃনা করি। প্রচুর। মরুক। উহু এখন অনুভূতিটা অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। আর যাইহোক, জ্ঞাতী গুষ্ঠিতো। রক্তের টান এই তবে! বুকটা একটু কাঁপলো কি? ধুররররর ওসবে আমি বিশ্বাস করিনা।

আম্মা ভালো নেই। সে আমি ভালো বুঝি। অপারেশন কবে করাবো? জবাব জানা নাই। সবাই নিশ্চুপ। কিন্তু আম্মা যেটা ভাবছে সেটা কখনোই হবেনা। সে আমি জানি। আমি আমার নিয়তি পরির্বতন করতে পারি। এসব ভাবতে গেলে সব জট পাকিয়ে যায়। ইসসস বউ থাকলে ভালো হতো। বউ আমাকে পিটুনি দিয়ে ঠিক করে দিতো। আম্মার ছেলে বানিয়ে ছাড়তোই ছাড়তো। কিইবা আর করার। বউ নেই। তাই সংসার দরদী হতে পারছিনে।

সে-যাইহোক, বেশি ভাবের কথা বলা শুরু হয়ে গেছে। ওসব বাদ। নতুন কিছু চিন্তা করা যাক। ভাবনারা অমনই, তুমি ওকে পাশে বসিয়ে আদর করবে, সে উঠবে তোমার কোলে। কোলে উঠিয়ে আদর করবে, ও উঠে যাবে তোমার ঘাড়ে, তারপর তোমার মাথায় উঠে হিসু করে দিবে। ভাবনারা অমনই। ভাবতে আমার ঘৃনা লাগেনা। আমি ভাবতে থাকি। কতো কিছু। এইযে ঘুম আসছেনা কেন সেটা নিয়েও ভাবছি। এতো শক্ত হৃদয় নিয়ে কিকরে বেঁচে আছি সেটা নিয়েও ভাবছি। সমানে ভাবছি ফালতু কিছু মানুষ নিয়ে মাঝে মাঝে কেনো ভাবি, সেটা নিয়েও। হুররর আমি কি ভাবের কারখানা নাকি? অতো ভাবনা ভেবে আমারই বা কি লাভ! উহু ভুল বললাম। লাভ আছে বৈকি এবং আমার সাথে যে পাড়ার নুনু পাগলার দারুন মিল সে খবরও আমি রাখি। হা হা হা হা হা হা।

ও-য়েল। বেশি আনন্দ করা ভালো না। বেশি চিনি দিয়ে চা বানালে সেটা ভালো লাগেনা। চায়ের সাথে থাকবে, পরিমান মতো চিনি, দুধ আর লিকার। যেকোন একটার উপস্থিতি বেড়ে গেলেই বাঁধবে বিপত্তি। আমার লাইফে অবশ্য বিপত্তিটাই বেশি। কখনো ভালোবাসা উথলে যায়, কখনো ঘৃনা। কখনো প্রাপ্তি সীমাহীন, কখনো অপ্রাপ্তি। কখনো বসন্ত, কখনো ধু ধু শূণ্যতা। ধুররর শালা মর তুই কলাগাছে ফাঁস দিয়ে। সবচেয়ে সিক্রেট একটা কথা বলি তোকে- আমি মানুষটা অবশ্যই খারাপ না। কিন্তু আবার ভালোও নই। আছেনা কিছু অসুস্থ্য মানুষ, পৃথিবীতে, যারা যতোসব অসুস্থ্য কথা ভাবে- আমি ঠিক তেমন একজন মানুষ। হুমমমম আমি অসুস্থ্য একজন মানুষ। আমার মতো মানুষের পৃথিবীতে না থাকাই বেটার। প্রশ্ন করিস না অসুস্থ্যটা আবার কেমনতর অসুস্থ্যতা। করে ফেলেছিস?! ঠি...ক আছে, তোকে বলতে পারি, কারণ তোকে আমি ভালো পাই। অসুস্থ্যতা বুঝতে হলে- আমার সামনে তোকে বসতে হবে। মুখোমুখি। আমার হাত ধরতে হবে। উহু এ হাতের পর নিরাপত্তা খুঁজিস না। ঐ জিনিসটা হৃদযন্ত্রের কাছাকাছি কোথাও তুলে রাখা আছে। এবার আমার চোখে তাকিয়ে তোকে বিশ্ব দেখতে হবে। আ-মা-র বিশ্ব। তোর মতো করে। আমার শ্বাস তোকে উপলব্ধি করতে হবে। আমার সবুজ তোকে অনুভব করতে হবে। আমার ভালো লাগা, তোর আঁচলে বাঁধতে হবে। তোর চোখের ঘন মায়ায় আলো রেখে আমায় ভালোবাসতে হবে... গভির ভাবে... কিছুটা আমার মতো করে... কিছুটা তোর মতো করে...।

চিৎকার-১ : 'তুই' শব্দের সাথে কোন জীবিত মানুষের সম্পর্ক নেই।
চিৎকার-২ : যন্ত্রণাটা লেখা হয়েছে ২৯ নভেম্বরের মৃত রাতে।

No comments: