Thursday, November 1, 2007

আমার পথচলা

ইদানিং শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি হচ্ছে। অনাথ বৃষ্টি। শীত নামছে বেশ বুঝা যাচ্ছে। ঘুম ভাঙ্গলে আবিস্কার করি বিছানায় 'দ' হয়ে শুয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছি। দরজা খুলে ছাদে বেরিয়ে এলেই ফুরিয়ে যাওয়া বৃষ্টির আঁচ টের পাওয়া যায়। টবে লাগানো প্রায় প্রত্যেকটা গাছে নাল-নীল ফুলের মেলা। আমার লাল-নীল কিংবা রঙিন ফুল অতো ভালো লাগে না। দুইটা টবে ঘাসফুল লাগানো। শুভ্র সাদা। এদের আমি বিশেষ কদর করি। ওরা যখন ফোটে তখন আমি লাগামহীন দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকি। ঘুমের শেষ স্পর্শ এখানে বসেই ফুরিয়ে যায়। সাথে মাথার ভেতরের ঝিমঝিমানি। রেলিংয়ের এ কোনায় বসে কাটে আমার কিছু নির্ঘুম রাত, কিছু বিকেল। কখনো গিটারে টুংটাং শব্দ করে, কখনো একাকী, কখনো আড্ডা দিয়ে।

লামিয়া নিজেকে লুজার বলেছে, না বুঝেই বলেছে। আমিও নিজেকে লুজার বলি, এবং সেটা বুঝেই। জীবনটার রাস্তা পরিবর্তন করা অনেক সহজ কিন্তু সঠিক রাস্তায় নিজেকে পরিচালনা করা অনেক কঠিন। তোমাকে ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে, তোমাকে সাংসারিক দায়িত্ববোধ উপলব্ধি করতে হবে, তোমাকে প্রতিটি প্রদক্ষেপে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কথা স্মরণে রাখতে হবে। এসব ভাবলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। একটা ভালো চাকরী খুঁজছি। পেয়ে গেলে ভার্সিটি পরিবর্তন বাধ্যতামূলক। করবো। যেখানে যাবার ইচ্ছা সেখানে আবার 'ইয়াবা'র ছড়াছড়ি। ইয়াবা খেলে নাকি শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আমি অবশ্য শীতলগোষ্ঠীয় প্রাণী নই। প্রাকৃতিক ভাবেই মহিলা দেখলে আমার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। বন্ধুদের কেবল বলেছি ওখানে পড়ার ইচ্ছা আছে। কিন্তু প্রচুর খরচ। তবে ফুল টাইম চাকরী করলে এর কাছাকাছি যাওয়াটা কঠিন না।

ইদানিং পার্টিরা বাঁধ ভেঙ্গেছে। এসবের রাত্রি-দিন আমার অতো খারাপ লাগে না। নিজের মতো থাকি। বেসুরে গাই। তাল পৃথিবীকে আরো ঝাপসা করি। কিন্তু জগতের সব তাল গোষ্ঠির সমস্ত চিন্তাধারা এখানে এলে ভুল প্রমাণিত হয়। 'র' মেরেও তালকে আনায়ন করা সম্ভব হয় না, কখনো কখনো। কখনোই জোড়াজুড়ি কিংবা শব্দের তীর ছুঁড়েও নারুর প্রতি আসক্তি আমার ভেতরে ঢালা সম্ভব হয়না। ওরা হতাশ হয়, ওরা মাত্রারিক্ত তাল হয়। সভ্যতার এসব নাচানাচি অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। কোন বালে বলেছে এসবে দু:খবোধ হারিয়ে যায়, আমার বাড়ে।

নিজের অনেক স্বাদ-আহলাদ মাঠে মারা গেছে। স্বাধ-আহলাদকে জীবনের সাথে জুড়তে টাকা পয়সা লাগে। আমার সীমিত অর্থনৈতিক অবস্থান হিসেবী না হলেও বরাবর ট্যানটেনাটান। জীবনের প্রায়োগিক দিকগুলোর দিকে তাকিয়ে আমার অপরাধবোধ হয়। কারো জন্যই পারছি না ভালো করে কিছু করতে। পড়াশুনার ব্যাপারে স্পর্শকাতরতা আমার একটু বেশি সেটা মানি। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে এটা আমাকে যা দিবে তা দিয়ে ওদের জন্য আরো বিশাল ভাবে কিছু করার পথ খুলবে।

No comments: