Wednesday, October 31, 2007

ছেঁড়া মানুষের গল্প

তুখোড় অবিশ্বাসীও সময়ের কোনো এক কোনায় গিয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু তুখোড় বিশ্বাসী যখন বিশ্বাস ভঙ্গ করেন তখন সেটা কতটা মেরামতযোগ্য?

প্রেমে পড়লে পাবলিক ছাগল হয়। তখন লতা-গুল্ম, ঘাস, পাতা, কাকড়, বালি, অ্যাবসুলেট, শ্যান ইত্যাদি হেন জিনিস নাইযে সে খায়না।

ছাগল ছিলাম।

এটাও ঠিক যে, সাংসারিক টানাপোড়ন আর অস্থির ভবিষ্যত একাকী জীবনের দরজায় এসে কড়া নাড়লে রঙিন পৃথিবীও হয়ে যায় ধূসর।

আমার পৃথিবী এখন ধূসর।

আমি পোশাক পরিচ্ছদ, চিন্তা-ধারায়, চাল-চলনে একজন শহুরে মানুষ। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে খুব রক্ষণশীল। সামাজিক বিধি-নিষেধ আমাকে তেমন ড্রাইভার্ট করেনা। কেবলমাত্র আমার চোখে, মনে, বিবেক বুদ্ধিতে যেটা পরিশুদ্ধ মনে হয় সেটাকেই আমি ঠিক জিনিসের কাতারে রাখি। স্বভাবে আমি কিছুটা মুখচোরা টাইপ ছেলে। নিজের চিন্তাধারার বিকাশের সাথে সাথে আত্ম পরিচয় তুলে ধরার মানষিকতা আমার কম। একটু আড়ালে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। যারা ঢাকঢোল বাজিয়ে নিজেকে পণ্য বানায়, নিজেকে মহাজ্ঞানীরূপে সাজাতে ব্যস্ত তাদের বরবর এড়িয়ে চলি। গলাবাজি একদম ভালো লাগে না।

নেট ব্যবহার করি ৯৮ থেকে। এককালে প্রচুর চ্যাট-ফ্যাট করেছি। তখন বয়স কম ছিলো, নতুন কিছু নিয়ে গুতোগুতি করতে ভালো লাগতো, এখন লাগে না। নেট জীবন নিয়ে আমার ফিলোসপি তেমন জোড়ালো না। এ এমন এক জীবন যেখানে প্রতিনিয়ত প্রলোভন থাকে। শব্দে, বাক্যে লুকিয়ে থাকে প্রতারণা। যার প্রতি এই প্রতারণা সে ব্যাটা কিঞ্চিত পরিমান দু:খ পেলেও যিনি এই প্রতারনা সৃষ্টি করেন তিনি কখনো অনুশোষনায় দগ্ধ হন না। তার কাছে এটাই স্বাভাবিক, একটা বিনোদন। বড়জোড় সময়ের একটা ছোট ভুল।

নেট জীবনে যেসব মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে মনে হয়েছে তারা বেশির ভাগই ফেক। অথবা। তারা আদতেই অমন।

কিছু মানুষের কাছে বাড়তি কিছু পাবার আশা করেছিলাম। যার কাছে যতটা প্রেরণা, পথ চলার অনুপ্রেরণা পাবার প্রত্যাশা করেছিলাম, তার কাছ থেকে কখনোই সেটা পাইনি। এটা আমার জীবনের একটা অতৃপ্তি। বাস্তব জীবনে নিজের ব্যক্তিগত জীবন, চাকরীর জন্য দৌড়োদোড়ি, পড়াশুনাটা চালিয়ে যাওয়ার মতো ভারী কাজগুলোর ফাঁকে চিন্তাধারা শেয়ার আমি কখনোই কারো সাথে করিনা। আমার ভালো লাগেনা।

প্রিয় মানুষদের সাথে প্রচুর ঝগড়াঝাটি হয়। শাব্দিক কিংবা নিরোবিক। বন্ধুদের মাঝে আমার একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে। জগতে যে দুয়েকটা মিরাকল পেয়েছি আমার বন্ধুরা তেমন কিছু মিরাকলের একটি।

অনেক বার হারিয়ে গিয়েছি। বাস্তবে এটা বেশি ঘটেছে। অনেকদিন বাড়ি ফিরি নাই এমন ঘটনা ঘটেছে বহুবার। কিন্তু নেট লাইফে হারিয়ে যাওয়াটা অনেক কঠিন। তুমি নরকে গেলেও গুগল বেটায় তোমার ঠিকানা ঠিক ঠিক জানিয়ে দেবে। যদিনা তুমি ক্ষনে ক্ষনে রঙ না বদলানোর দলে থাকো। যদিনা তোমার নিজস্ব একটা ছায়া না থাকে।

ভালোবেসে মন খারাপ করেছি। এমনো হয়েছে অনেক অনেক দিন ধরে কিছু অর্থহীন আবদার, অনুনয়, ভালোবাসা, আহলাদ, অপেক্ষা কিংবা প্রতীক্ষাময় দিনগুলোর কথা বার বার স্মরন করেছি। সময়ের এ প্রান্তে এসে বুঝলাম, সবই ছিলো নিছক ছাগলামী।

আমার প্রেম গফুরের মহেশের মতই। এক কেন্দ্রিক আর মাথার উপর বোঝা। একে ফেলতে পারি না, একে অশ্রদ্ধা করতে পারিনা, একে রাখতেও পারিনা।

Monday, October 29, 2007

চলে যাচ্ছে দিন...

খুব অবষন্ন শরীর। ক্লান্ত আর পরিশ্রান্ত। তবে ঘন্টা খানেক শাওয়ারের সংগীত শুনে মনটা ফুরফুরে এখন। ফুরফুরে অলস মেছো বাঘ। উদম হয়ে গোসল করার বদ-স্বভাবটা কবে যাবে জানিনা, তবে এতে বিবাগী উল্লাস আর নিজেকে উৎসর্গ করার আত্মতৃপ্তি আছে। কাল গভীর রাতে ভাবলাম ব্লগিং করি, করা হয়ে উঠেনি। উইন্ডোজটা কেনযে খোলেনি তখন বুঝতে পারিনি, নিজের পিসি বলে কথা, প্রবলেম সপ্তাহের কোনো এক সময়ে ঠিকঠাক করি। গোসলটা সেরে খালি-গা নিয়ে পিসি অন করেই দেখি সবকিছু ঠিক ঠাক মত চলছে। অর্নবের 'রুপালি রৌদ' কে বাজিয়ে নিচে নেমে এলাম। অনেকদিন পর, অ-নে-ক দিন পর, দাদার লাইব্রেরীতে ঢু মারতে ইচ্ছে হলো। হালকা ময়লার আস্তর জমে আছে সেলফে, বইগুলোতে। শংকরের 'ছেলেবেলা' পড়তে ইচ্ছে করলো কিন্তু শেষে ওটার ধারে কাছেও গেলাম না। তসলিমা'র 'নিমন্ত্রণ'টা তুলে নিলাম। হাসি ফুটলো বাঁকা হয়ে। রেখে দিলাম জায়গা মত। জুলভার্নের এলাকায় এসে দেখলাম সবই পড়া। সমরেশ পড়তে ইচ্ছে হলো হঠাৎই। উত্তরাধিকারটা নিয়েও নিলাম না। সাতকাহনটা অনেক বার পড়বো পড়বো করেও পড়া হয়নি। আজ নিলাম, রুমে এসে সটাং শুয়ে পড়লাম। এবার হবে ম্যারাথোন বই পড়ার প্রতিযোগীতা। রাত ২টায় ১২৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এগিয়ে আবিস্কার করলাম আমার ভ্রু কুঁচকে আছে। মেজাজটা হয়ে আছে খিটখিটে। গল্পের বই পড়তে বসলে আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। গল্পের বই শুধু না, চটি থেকে পত্রিকা যা-ই পড়িনা কেন নাক-মুখ-মন ডুবিয়ে পড়ি। এসময় কেউ আমার পাশে বোম্বিং করলেও আমার কান অবদি সেটা পৌঁছাবে না।

সাতকাহন পড়ার আগ্রহ কমে গেছে, তাই এটাকে মাথার পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়াই শ্রেয়। সাতকাহনের মূল বিষয়বস্তু কি? একটা মেয়ে, যে কিনা ভবিষ্যতের কোনো এক চোরা পথে গিয়ে আধূনিকা নারী হবে! যে কিনা দুনিয়াদারি সম্পর্কে সব্বোজ্ঞানী হবে! যে কিনা সমাজের একটা ছেলে যা যা করে থাকে তা-ই করার চেষ্টা করে! লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত করবে! লেখকের গন্তব্য কি? অন্তত এটা জানার জন্য হলেও আমাকে সাতকাহন পড়তে হবে। হাঁ আমি জানি আমার ভ্রু কুঁচকে যাবে, আমি জানি আমার পক্ষে এ বই নূন্যতম ১৫ দিনেও শেষ করার সম্ভব না, তারপরও আমি এ বই পড়বো।

বন্ধুরা যখন ঈদের মার্কেটিং শেষে পুরান ঢাকায় ইফতারী করার অভিলাস নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে তখন আমি নীলক্ষেতে ৫ মিনিটের বিরতি নিয়ে একটা বই কিনেছিলাম। ঈদ মার্কেটিং! বইয়ের নামটা তেমন চমকপ্রদ না। তবে বিষয়বস্তু আর উপস্থাপনটাকে বলবো আমি, ব্রিলিয়ান্ট। হাঁ 'দা ভিঞ্চি কোডের' কথা বলছি। দারুন তৃপ্তি নিয়ে পড়েছি, কিন্তু শেষ করে বুঝলাম লেখক বেটায় সমঝোতা করে ফেলেছে। তিনি মোটেও তার সততা শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেননি। একে আমি খাটো করবো না, কারণ পাঠকদের আঁটকে রাখার দারুন কৌশল আর বিষয়বস্তু এতে বন্দি আছে, কিন্তু আমার কেন জানি এ বই এখন ভালো লাগছে না। এ আমি দ্বিতীয়বার পড়বো না মোটেও।

Friday, October 26, 2007

ভাবনাগুলো বেকার

ইদানিং ব্যস্ত থাকার মতো কোনো কাজ নাই। নাই পড়াশুনার ঝুটঝামেলা। কেবল শৌন্য ঠাকুরের মতন এলেবেলে ছোটোছুটি। আমার এসবে খারাপ লাগে না, আবার ভালোও লাগে না। জীবনটা চলছে জীবনের প্রয়োজনেই, ব্যাস, এটুকুইতো। স্পর্শকাতর বিষয়য়াদি মাঝে মাঝে ঘনকালো তুফান হয়ে লতাবৃক্ষের মতন মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে যায়। আমি প্রতিবাদহীন নত-মস্তক নিয়ে নির্জনতায় পড়ে থাকি। প্রাপ‌্যতাগুলো আমি জানি আমার জন্য বন্ধুসুলভ হয়না কখনোই।

মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার বিলাসীতা মরে গেছে শেষ ফাগুনে। এ নিয়ে মাঝে মাঝে দু:স্বপ্নের মতো একটা মৃত অভিলাস বুক ফুড়ে জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে। এ ঘন নোনা জল প্রত্যাশামত যা প্রমাণ করার চেষ্টা করে তা তেমন মূল্যবান নয় আর। কেউ আর আমার জন্য অপেক্ষায় নেই। আমিও নেই। কেউ আমার নয়, আমিও কারো নই। সহজ হিসেব নিকেশ। একে জটিল করে ভাবতে এখন আর ইচ্ছে করেনা।

Saturday, October 20, 2007

আজ আছি কাল নেই

রেষ্টুরেন্টে বসে পেট ভরছি সমানে। মাথার ভেতর নানান চিন্তা। খুব অস্থিরতায় যাচ্ছে দিন, ইদানিং। মহা বিরক্তি নিয়ে অনেকটা জোড় করেই খেতে হচ্ছে। এমন সময়, হঠাৎই রেস্টুরেন্টের ঘনকালো কাঁচ ফুরে চোখ চলে যায় রাস্তার ওপাশে ছোট্ট টি-স্টলের দিকে। ঠা রোদ্রুর বাইরে, এর মধ্যে