Monday, December 3, 2007

এক আকাশ, স্বপ্ন

মিথুন রাশির জাতকেরা কেমন হয়? আকাশ অবশ্য কখনো রাশি-টাশি নিয়ে অতো গভিরভাবে নাড়াচাড়ি করেনি। তবে নিজেকে দিয়ে সে যা বুঝে তা হলো- মিথুন রাশির জাতকেরা হয়- প্রচন্ড ঘাড়ট্যারা, আত্মভোলা এবং চাপা রোমান্টিক। অন্যকিছুও হতে পারে। তবে ওর ব্যাপারটা আলাদা। সে প্রিয় মানুষকে যেমন ভালোবাসতে পারে, তেমন ঘৃনা করতে পারেনা। ভালোবাসা সম্পর্কে তার যে ধ্যনধারনা সেটাও কিন্তু কমজোরী নয়। তার মতে, হাসনাহেনার সুভাশ ফুলে নাক ডুবিয়ে পাওয়া সম্ভব নয়। এ থেকে যতদূরে তুমি ছুটবে তত তুমি এর সুভাশ পাবে। আকাশ দূর থেকে সুভাশ নিতে ভালোবাসে। এ বয়সে অনেকেই এক-আধটু ভুলভাল করে থাকে। তবু, কারো জন্য উন্মুখ হয়ে অপেক্ষায় থাকা, দিবানিশি পরস্পর বিরোধী দুটো স্বত্ত্বার সাথে যুদ্ধ করা, নিজের সমস্ত ধ্যনধারনার ঘষামাজা করা... ভুলভালের মধ্যে পরেনা। যদিও আকাশ অপেক্ষাকে মনে-প্রাণে ঘৃনা করে। তারপরও সে কারো কারো জন্য হঠাৎ হঠাৎ অকারণে অপেক্ষা করে। কেন করে সে তা জানেনা।

মানুষের এক সহজাত প্রবৃত্তি হলো- যা সে পায়না তার জন্য সে ভিষন হায়-হুতাশ করে। যা সহজে পায় তা অবজ্ঞা ভরে দূরে সরিয়ে রাখে। আকাশ নিজেকে কম চেনেনা। তবু, মাঝে মাঝে তার নিজেরে নিদারুন করুন মনে হয়। প্রচন্ড অসহায় লাগে তখন। ভিষন একা আর ভিষন মুমূর্ষ মুহুর্ত্বে মানুষ প্রিয়জনের কাছে আশ্রয় চায়। সে চায়না। সে ভিষন মূর্খ পুজারী। সে ফুল দেখবে কিন্তু ছিঁড়বে না। সে ফুল নিজের করে চাইবে কিন্তু পাহারা দিবে না, গাছে পানি দেবে না।

মানুষই সম্ভবত একমাত্র জীব যে নিজেকে খুব দ্রুত বদলে ফেলতে পারে। আকাশ সেটা পারেনা। তার ধারনা মানুষ শুধুমাত্র তার বাইরের রূপটাই বদলাতে পারে, ভেতরটা নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে তার বেশ ধান্দা লাগে। যা সে জানছে কিংবা যা সে ভাবছে তার পুরোটাই মিথ্যে নয়তো? মানুষতো প্রতিটি সেকেন্ড মরছে। প্রতিটি সেকেন্ড মানুষ এক একটা নতুন মানুষরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। মানুষের ভেতরটাও বদলে যেতে পারে। মানুষের বাইরের পঁচন ভেতরে চলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আজকাল ওর চিন্তা-ভাবনারা বড্ড বেশি ঠোঁটকাটা হয়েছে। তবু তারা মানুষকে ভালোবাসে। কারণ মানুষকে তাদের যান্ত্রিক আর কৃত্রিম বলে মনে হয়না। প্রতিটি মানুষই রহস্যঘেরা এক আঁধার। ওদের ভেতরটা শতোমুখী ইচ্ছে, স্বপ্ন, ঘৃনা, ভালোবাসায় ঠাসা। কিছু মানুষ আদতেই একটু অন্যরকম হয়। তারপরও অন্যসব মানুষের মতইতো তারা। তারা মরছে। প্রতিটি সেকেন্ড। প্রতিটি সেকেন্ড তারা নতুন করে কিছু ভাবছে। প্রতিটি মুহুর্তে তারা স্বপ্ন দেখছে নতুন কিছু নিয়ে। প্রতিটি সেকেন্ড তারা নতুন করে ভাবনার ঘুড়ি উড়োচ্ছে। মানুষ তাই সাংঘাতিক এক রাহস্যিক বিষয়। একজন মানুষের সাথে অন্য এক মানুষের কোনো মিল মহব্বত থাকার কথা নয়। তবু অনেক কিছু মিলে যায়। সেটাতো অন্য সব ক্ষেত্রেও মিলবে। শামুককে তার শক্ত খোলস দেখে যেভাবে সনাক্ত করা যায় তেমন মানুষকেও চেনা কঠিন কিছু নয়। শামুকের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে ধীরালয়ে হেঁটে চলা, কোনো বিপদ দেখলে খোলশের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে ফেলা। তাই কোনো শামুক যদি মনে করে যে অমুক শামুকের সাথে তার বেশ মেলে সেটা কিন্তু যুক্তিহীন নয়। যুক্তিহীন হবে তখনই যখন কেউ বলবে- অমুক শামুককে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি, তখন। আকাশ অবশ্য এই ব্যাপারটা নিয়ে মনে মনে খুব হাসে। সে হয়তো কিছু মানুষকে হাড়ে হাড়েই চেনে। তার রহস্যঘেরা যন্ত্রণাময় জীবনে এ ব্যাপারটা একটা বিনোদন। পাখি যতই তুমি উড়ে বেড়াও, তোমায় আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। ইচ্ছে করলে তোমায় আমি উড়িয়ে দিতে পারি, ইচ্ছে করলে তোমায় খাঁচায় পুরতেও পারি... আকাশ মাঝে মাঝে খুব ভাবে উপেক্ষা সরিয়ে বুকে টেনে তাকে এসব শুনাতে। সে কয়েক সেকেন্ড। তারপর ভুলে যায়।

বর্ষা শেষ হয়েছে। বৃষ্টি নেই। বৃষ্টির টুপটাপটুপটাপ শব্দেরাও নেই। বেঁচে গেছি, আকাশ হাসে, একমনে। বৃষ্টির শব্দে তার বিয়ে করতে ইচ্ছে করে। এ ব্যাপারটা চিন্তা করলেই সে চুপসে যায়। তারপর নি:শব্দে হাঁটতে থাকে গন্তব্যহীন। বিয়ে করতে চাইলেতো আর করা যায়না। আকাশের নিজেরে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতা নাই। তবু আকাশ বিয়ে করবে, বুড়ো বয়সে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটার সময়। তার একটা ইচ্ছে আছে বিয়ের পর বুড়িকে প্রতিদিন একটি করে চিঠি লিখবে! কি লিখবে তাতে? আকাশ যেমন মানুষ- লিখবে, আজকে আলু-ভর্তা সবচে' ফালতু হয়েছে। এমন কান্না-কাটি রান্না করলে দেশান্তরে যাবো। কিংবা। কিংবা। কিংবা? হা হা হা। এমনই। আকাশের ভালোবাসা এবং স্বপ্নো তীরহিত মেঘের মতো। ও ছোঁয়া যায়, একটু অন্যরকম করে। সুপ্ত ভালোবাসাটাও কেড়ে নেয়া যায়... বিমূর্ত ভালোবেসে।

2 comments:

শাওন said...

bie bie r bie .
ami ekhon onek shukhe achi . onek oneeeeeeeeek shukhe .

Chart Smart said...

Nice Blog :)