Monday, November 26, 2007

ভেবোনা মিছে কবি

আমি এখন ঘুমোতে পারিনা। রাতে ঘুম হয়না। কেন হয়না সেটা আমি নিজেও জানিনা। কিংবা হয়তো জানি। এ আমি বলতে পারবো না। বুঝাতে পারবোনা। কতো হাবিজাবি চিন্তা-ভাবনা... সব বিছানায় গেলে জেগে ওঠে। একটানা। আঠালো। বাংলা সিনেমার মতো দীর্ঘ। রাতের বেশির ভাগ সময় কাটে তাই ছাদে শুয়ে বসে। ইদানিং তাও হচ্ছে না। মশার ভৌ শব্দ আমার জঘন্য লাগে। তদোপরী শীত নেমে গেছে। আজ অবশ্য আকাশে পূর্ণিমা চাঁদ। চারদিক ঝলমল করছে। রুপোর মতো। বাড়ির সামনে বিরাট হাসনা-হেনাটা পৃথিবীকে সুরভিত করছে হালকাচালে। কোথাও কেউ নেই। নিরব। কাছে কোথাও আত্মনার্ধ করে কেঁদে ওঠে কোনো পথ কুকুর। তারপর আবার সেই ঘোর নিস্তব্ধতা। পূর্ণিমা নিয়ে আমি ক্লাশ নাইন/টেনে কয়েকটা কবিতা লিখেছি। ওসব হারিয়ে টারিয়ে গেছে। খুব অগোছানো মানুষ আমি। কোথাও গোছগাছ নেই আমার। না ভেতরে, না বাইরে। এখন কবিতা লিখতে ইচ্ছে করেনা, কিংবা এ নিয়ে দুয়েক লাইন ডায়রীর পাতা জুড়ে- লিখতে ইচ্ছে করেনা। বড় অলস আমি। এই আলসে মাখা মনে হঠাৎ হঠাৎ হা হা করে ওঠে, এখন। কেনো ওঠে জানিনা।

তুই কখনো কোনো মানুষকে মরতে দেখেছিস? আমি দেখেছি। কেমন অসহায় থাকে তখন সে। কেমন ঘোরতর এক শূণ্যতা থাকে তার সবকিছু জুড়ে। থাকে তার চারপাশে অদ্ভুত, অচেনা-অজানা এক ধোঁয়াটে গন্ধ। এসব যদিওবা সহ্য করা যায় কিন্তু মৃত মানুষের চেহারা আমি সহ্য করতে পারিনা, একদম। ওতে আমি আলো দেখিনা, হাসি দেখিনা, চোখের মায়াময় দৃষ্টি দেখিনা। প্রথম যাকে মরতে দেখেছিলাম তখন সেটা উপলব্ধি করার মতো বয়স ছিলোনা। দ্বিতীয়বার যাকে মরতে দেখলাম এবং যে আমার হাতের উপরই মারা গেলো তার ঘন্টা কয়েক আগ পর্যন্ত আমি তার ১শ মাইলের ভেতরো ছিলাম না। মাস দুই পর আমি যখন তার নিকট পৌঁছলাম তখন আমার বয়স যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান ছিলো এটা বুঝতে যে পুরুষ মানুষও কখনো সখনো কান্না-কাটি করে। আমি বুঝতে পারছিলাম না ঠিক আমি কি হারাচ্ছি। আমার দুচোখ ছুঁয়ে যে জল গড়িয়ে যাচ্ছিলো সেটা কতোটা বছর পর গড়াচ্ছে তার সঠিক ক্যালকুলেশন এতোটা বছর পর এতোটা তীহ্ম আর কৌশলী ব্রেন নিয়েও আমি সমাধা করতে ব্যর্থ।

আজ পূর্ণিমা। তাই মশার ভৌ শব্দের জ্বালাতন উপেক্ষা করে কিছু লিখতে বসা আমার। রুপোলী আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে আমার ঘরের চারপাশ এবং আমি। কোন ছাগল পূর্ণিমাকে ঝলসানো রুটি বলেছে সেটা মনে করতে পারছি না। এতো সুন্দর একটা মুখকে কেউ ঝলসানো রুটি বলতে পারে? কবিরা এমনিতেই মিথ্যুক হয়। মিথ্যে আর কল্পনা ছাড়া কবিতা লেখা সম্ভব না। আমি সাহিত্যিক না। কবি না। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার খুব লিখতে ইচ্ছে করে। নিলর্জ্বের মতো। লিখি না আমি। লিখতে ভাল্লাগে না।

যখন ডায়রী লিখতাম তখন অদ্ভুত সব বিষয় নিয়ে লিখতাম। কাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং নিয়ে আমার সুদূর প্রসারী গভেষনা থেকে শুরু করে স্বপ্নাকে লেখা কতোশতো কবিতা, প্রেমপত্র, প্রেম নিয়ে আবেগ টসটস কতোশত কথা... ভালোলাগা ছিলো ওতে। প্রথম ডাইরীটা আমি কয়েকটা চিঠির সাথে পুড়িয়ে ফেলেছি। ২য় ডায়রীটা পড়িনা। তার অক্ষত থাকাটা একটা বিস্ময়। তৃতীয় ডায়রীটা আমার পাগলাটে, অসমাপ্ত। ছেঁড়া ছেঁড়া, ভাসা ভাসা কতো কি ওতে ভরা। শার্ট, প্যান্ট, শর্ট, গ্যাঞ্জি, স্যান্ডেলের তালিকা থেকে ওতে প্রেমপত্র পর্যন্ত লেখা। আছে গিটারের কিছু কর্ড। কিছু নিজের লেখা গান। কিছু প্রিয় মানুষ নিয়ে মূল্যায়ন। আছে কিছু প্রিয় চেহারা আঁকার কতোশতো বাহারী প্রচেষ্টা। রাস্তায় কোনো ফকিরকে ভালো লেগেছে সে অনুভূতি নিয়েও কয়েক লাইন... এসব...।

এখন ডায়রী টাইরী লেখা হয়না। প্রযুক্তি মানুষকে খুব বদলে দিচ্ছে। অনলাইনেই এখন ভাব বিনিময় করা যায় হারহামেশা। জীবন কতো সহজ এখানে। বৃষ্টি বাদলের মতো কতো ঝরঝরে আবেগ এখানে, ঘুরোঘুরি করে। মানুষ কতো সহজে নিজেকে এখানে গোছগাছ করতে পারে...। আমি এখনো প্রযুক্তির সাথে নিজেকে মানিয়ে পারিনি অতো। খুব অগোছালো, আর খুব ঘাড় ট্যারারা হয়তো এসবে মানিয়ে নিতে পারেনা। আমার ওতে কোনো দাবী নেই। নিজের প্রতি স্লেশ কিংবা তিক্ততাও নেই। আমি যা দাবি করি, যা ভাবনা ভাবি তা সবই সবুজ সর্ম্পকীয়। আমার সাথে প্রযুক্তির একটা দন্দ্ব তৈরী হবে, এটা স্বাভাবিক। আমি মেনে নিয়েছি। নতমুখেই।

রাত কতো হলো জানিনা। চোখে ঘুম নামেনি এখনো। আদৌ নামবে কিনা বলা মুশকিল। বাসায় নেট লাইন বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি। নেট মানেই নিজের কমজোরী স্বভাবটার নেজ ধরে ঠুনকো টানাহ্যাঁছড়া। আমি ওসবে এখন আর বিশ্বাস করিনা। তবু কখনো সখনো খুব, খুব ইচ্ছে করলে ল্যান্ড ফোন দিয়ে ব্রাউজ করি। বেশি দূর যেতে পারিনা। আমার আঙুলের ডগায় খুব কম ওয়েব সাইট ঘুরোঘুরি করে। যেগুলো খুব চেনা। যখন খুব খুব ইচ্ছে করে কপালে ভাঁজ ফেলতে, সহসা রেগে ওঠতে, তখন কারো ডাহা মিথ্যে কথাগুলো পড়তে থাকি। যখন খুব লোনলী অনুভব করি তখন সোজা 'গুগলের' পেটে ঢু মেরে, কাউকে নিয়ে শুধু শুধু খুড়োখুড়ি করি। বরাবরের মতোই ওসব পানসে। তবু সময়তো কাটে। রাত বারে। চোখে ঘুম নামে।

** ২৪ নভেম্বর, ২০০৭ইং এর লেখা।

4 comments:

Anonymous said...

Aj maTha Ghure pore gelam . jokhon pore gelam tokhon college er nurse er shamne bosha . uthe ekhi ondhokar ghore shue achi . bam pashe holud alo . keno matha ghure porlam . rate ghum hoyna , na ghumie ghumie ei obostha . keno ghum hoyna ? hoytoba jani othoba na .

Anonymous said...

এইসবের কোন মানে হয় না। নিজেকে চিনেন আগে। তাছাড়া রাগ করা মানায় না একেবারেই। খুব, খুব বেমানান। দু:খবিলাসী।

ছেঁড়া মানুষের গল্প said...

ami confuse, kar comment konta? prothom ta kar, and second ta ba kar :-/

k matha ghure pore gelo, k e ba mathae haat bulailo...

anonymous er jalata ter paitachi :|

L said...

hahaha... apnar lekha o comment dutoi mojar.