Tuesday, December 11, 2007

নিয়ে চলো দূরে, আরো দূরে, বহুদূরে...

আজ 'মিথ্যা' কে বিক্রি করলাম। মিথ্যা বিক্রি করা খুব সহজ। শুধু একটু ড্যাম কেয়ার ভাব চেহারায় আনতে হয়। ভাবছি আমার টি-শার্টের পেছনে একটা কথা সেঁটে দেবো-i sell lie। বাসায় ফিরেছি ভোর ৬টায়। ৮ টায় ফের উঠে মামার সামনে গিয়ে বললাম- আই।এল.টি.এস এর জন্য টাকা লাগবে। কিছু টাকা ধার না দিলেই নয় (আহহহ কতো টাকা যে ধার নিলাম!)। তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা চালালেন (পুরা বোকা পাবলিক, আমার মিথ্যে ধরা খুব সহজ) তারপর টাকা দিয়ে টো টো জীবনধারন না করা নিয়ে টানা ১০ মিনিট বক্তৃতা দিলেন। কে শুনে কার কথা, আমি তখন মনে মনে সপ্তষীতে চলে গেছি। রানাকে নিয়ে 'জেনুইটি সিস্টেম' এ গেলাম। তারপর 'ঘাস ফড়িং' টাকে ফের রি-নিউ করলাম। হায় আমার ছেঁড়া স্বপ্ন। আমি তোকে বাঁচিয়ে রাখবো, যতদিন বেঁচে আছি।

খুব ক্লান্তি শরীর-মন জুড়ে। টানা ৩ রাত জেগে থাকার দরুন চিন্তা-ভাবনায় ঘুম ঢুকে গেছে। বলার মতো তেমন কিছুই ঘটে নাই এই কয়দিন। তারপরো এখন, এই ভর দুপুরে কিছু লিখবো বলে চোখের দু'পাতা জোর করে খুলে লিখছি। চোখ বন্ধ থাকলেও সমস্যা ছিলনা। টাইপ করতে আমার চোখ খোলা না রাখলেও চলে। কিন্তু চিন্তা-ভাবনাটাতো ঠিক থাকতে হবে। সেটা থাকছেনা।

গতরাত সারারাত মসজিদে ছিলাম। আশ্চার্য্য হবে যেই শুনবে। আমি মসজিদে ছিলাম, তাও সারারাত! যে আমি বৎসরে একবারও যাইকিনা সন্দেহ আছে সেই আমি...! হা হা হা। হেসে লাভ নাই। ভ্রু কুঁচকেও না। মসজিদে ছিলাম দায়ে পড়ে। ওখানেই আমরা ত্রানের সব জিনিসপত্র রেখেছি। ত্রান প‌্যাকেজিং হচ্ছে। ৫০০ পরিবারের ১ সপ্তাহের খাবার, এবং শীতের গরম কাপড়। এটা পুরো ১৫ জন যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে টাকা উঠিয়েছে তাদের ভোটাভোটিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকালই তিনজন সদস্যকে পটুয়াখালীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা ওখানে গিয়ে সবচে' ক্ষতিগ্রস্ত ৫০০ পরিবারের হাতে টোকেন দিয়ে আসবে। তারপর আমরা ১৩ তারিখ থেকে সেখানে বিলি করবো। সম্ভবত ১৬ তারিখ সবাই ঢাকায় ব্যাক করবো।


আমার প্ল্যান ছিলো অন্যরকম। আমি বলেছি এই ২ লাখ টাকা দিয়ে অন্তত ২০ টা পরিবার যারা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের এ-টু-জেড পুনর্বাসন করা হোক। ঘর তোলা থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছু। কিন্তু আমার প্ল্যানে ভোট পড়ে নাই বেশি। গণতান্ত্রিক নিয়মেই এগুচ্ছি আমরা। আমার একার সিদ্ধান্ততো আর সলিড না। যেটা সবার কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হবে সেটাই করা হবে। এতে আমার কিঞ্চিত পরিমান মনক্ষুন্নতা নেই।

আমার প্ল্যানটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে একটা কারনে। সেটা হলো, মানুষ এখন খুব বেশি ত্রাণ নির্ভর হয়ে গেছে। তারা কাজ-টাজ ছেড়ে ছুঁড়ে ত্রানের জন্য উন্মুখ হয়ে বসে থাকে। কাজ করে ৩০০ টাকা ইনকামের চেয়ে ঘরে বসে ২০০ টাকা উপার্জন অনেক নিরাপদ এবং এতে খাটনীও নেই! অভাবী এবং নিরক্ষর মানুষগুলো শুধু জানে তিনবেলা পেট পুরে খেলেই জীবন চলে যাবে। বেশ আছেতো তারা। তো কাজ করে কি হবে? আমাদের সরকারের উচিৎ তাদের প্রয়োজানুসারে কিছু কর্মসংস্থান করা। যাতে কাজ করে জীবন ধারন করার মানসিকতা অভাবী সর্বহারা মানুষগুলোর মন থেকে না হারিয়ে যায়। যারা ত্রান দিচ্ছে, ঘর বাড়ি উঠিয়ে দিচ্ছে তারা অন্তত পক্ষে যেন পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের দিয়েই যাবতীয় কাজ করায়। এতে ওদের পারিশ্রমিকও দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

মনটা ভিষন খারাপ। কেবল ধু ধু শূন্যতা অস্তিত্ব জুড়ে। বন্ধু বান্ধবরা এতোদিন আমায় পেলো বুঝি। বুঝিনা কিছু। বেশি বাড়াবাড়ি করলে নাকের ডগায় সোজা ঘুষি হাঁকিয়ে দেব। এদিকে নির্ঝরের খুব কষ্ট হচ্ছে। আন্টি 'ট্রোমা সেন্টারে' এখানো ভর্তি রয়েছেন। অপারেশন করা লাগবে। প্রথম দিন সারারাত ছিলাম, পরের দুইরাত থাকতে পারলাম না। আম্মাটাও মোটামুটি অসুস্থ্য। বোনের পরীক্ষা। সেমিষ্টার ফি। নতুন চাকরীর অন্বেষন। কতোশতো ঝুটঝামেলা। কিযে সমস্যা। কিযে সমস্যা। মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে খুব- সামওয়ান প্লিজ আমার মাঝে লীন হও। আমাকে একটু ইন্সপায়ার করো। আমাকে জাগিয়ে তোলো। আমাকে বাঁচিয়ে রাখো। আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলো। দূরে। আরো দূরে। বহুদূরে। অনেক দূরে...।

1 comment:

Anonymous said...

amio sheta mone korlam .mosjide chile mane ki . porei uttor pelam .