Thursday, January 24, 2008

বিশুদ্ধ জ্বালতন

আজকের দিনটা ভালোনা। ভিষন মন খারাপীয় একটা দিন। এদিনে কি করতে ভালো লাগে? জানিনা। এসব জানতে এখন আর ইচ্ছে করেনা। সকালে শ্রাবনী কিলঘুষি দিয়ে উঠিয়েছে যদিও, ফের ঘুমিয়ে যখন উঠলাম তখন সকাল ১১টা। জানলার বাইরের আলো দেখে মনে হলোনা সকাল। দরোজা খুলে ছাদে এসে দেখি বৃষ্টি কণা! চোখে, মুখে, অস্তিত্বে ঘুম লেপ্টে থাকায় ভাবলাম ভুল দেখছি কিন্তু শরীর জুড়ে বৃষ্টির ঝাপটা লাগতেই বিভ্রম কেটে যায়। তড়িগড়ি ফ্রেস হলাম। ড্রয়ার, ব্যাগ ঘেটেও মানিঅডার ফর্ম খুঁজে পেলাম না। আজ বৃহ:স্পতিবার খেয়াল আছে, পোষ্ট অফিস যেতে হবে সেটাও। পিসি বন্ধ করে ফ্লোরের এক কোনায় পড়ে থাকা ব্যাগটার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ক্ষনিক দম নিলাম। ভাল্লাগছে না একদম।

পোষ্ট অফিস থেকে বের হয়ে সিদ্ধান্ত যা নেবার নিলাম। কয়েকটা দিন আমার সবকিছু থেকে মুক্তি চাই। ব্যাস। ইদানিং অদ্ভুত সব শব্দ মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে। কেন তারা আসছে জানিনা। এইযে এখন একটা শব্দ বাজছে কানে, ধোলাইখাল! কেন এই অদ্ভুত শব্দটা মাথায় ঘুরছে জানিনা। তবে জানতে হবেই তেমনও কোনো উচ্ছ্বাশাও নাই। ধোলাইখালের রাস্তাঘাট ভুলে গেছি। তবে মনে আছে ওখানে সব জিনিসপত্রকে নিমিষেই বদলে দেয়া যায়। একটা ট্রাককে পাঁচ মিনিটে ভ্যানিস করে দেয়া যায়। দশ মিনিটেই উড়োজাহাজকে দু চাক্কার সাইকেল বানিয়ে দেয়া যায়!


মানুষওতো একটা যন্ত্র তাই না? ধোলাইখালে মানুষ নামক যন্ত্রটাকে মেরামত করে কিনা জানা নাই। করলে বেশ হতো। গিয়ে অর্ডার দেয়ার যেত খুব, এই যে, শুনেন- এইযে আমাকে দেখছেন, এই আমার ভেতর থেকে কেজি খানেক দু:খ বের করে এক পোয়া ওজনের সুখ ভরে দিন। অথবা। আমার মাথার ভেতর ইগো নামক এক মহা বদ লোক লুকিয়ে আছে ঐ ব্যাটাকে বের করে দিন চটজলদি।


তারপর? প্রশ্নই আসেনা। কে নিতে চায় আমার জমাট দু:খের দায়ভার?


ভাল্লাগছে না এই আমাকেই। আপাতত হাওয়া হতে চাই কয়েকদিন সবকিছু থেকে। কিন্তু কোন পথ দিয়ে পালিয়ে যাওয়াটা সহজ?

Monday, January 21, 2008

মানষের স্বপন ঘুনে ধরা বৈঠা যেন...

পরাজিত আমি। বহু কসরত করেও নিজের জীবনটাকে সাজাতে পারলাম না। কিছুতেই কিছু হলো না। অলৌকিকতায় বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে খুব। কিন্তু অবিশ্বাসের মরচে পড়া দাগ সেখানেও লেপ্টে গেছে। কিছুতেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। ধ্বসে গেলাম। নিঃশেষ হলাম। জানতাম, এমন একদিন আসবে যেদিন কান্নার সময়টুকুও পাবোনা। দরোজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে ‘সময়’ আজ।

ভিষন মায়াপাগল আমি। অথচ চিরটাকাল একা থেকে গেলাম। এর কারণ একটাই বেখেয়ালীপনা। কতোশতো ভাবে চেষ্টা ফিকির করেও নিজের এই বিদঘুটে স্বভাবটার পরির্বতন ঘটাতে পারলাম না। প্রিয় মানুষকে হারানোর মাঝেও যে কষ্ট পাইনি সে কষ্টটা আজ পেলাম। কতোযে না বলা কষ্ট... পাগল করে তুলছে আমায়। দিনরাত। অবিরত। আমি বলতে চাই, বলতে চাই এমন কিছু যা কোনোদিন কাউকে বলতে পারিনি।

আজ সংসার আমার কাছে কিছু চাইছে। সময় এসেছে একে কিছু দেবার। নিজের জীবনটাকে যেমন ইচ্ছে তেমন করার নাটাইটা এখন থেকে আর আমার কাছে থাকছে না। প্রতিদান বলছে কানে কানে ‘স্বপ্নদের ভুলে যাবার মৌসুম এসেছে তোমার। ভুলে যাও। ভুলে যাও’। প্রচন্ড রকম এলোমেলো হয়ে গেলাম। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ঝোলায় শূণ্য অবদান। জীবনটা নিয়ে এখন আর তেমন কোনো উচ্ছ্বাশা নেই আমার। শুধু একটা অতৃপ্তি, কাগুজের স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হলাম। নামের আগে পদবী থাকার সম্ভাবনাটা নেই একেবারেই। ভালো লাগছেনা। ভিষন, ভিষন কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

Friday, January 18, 2008

ছাগলের শিং

কিছুই ভালো লাগছে না। আমি নি:শেষ হয়ে গেলাম। আমার দ্বারা কিচ্ছু হবেনা। আমি একটা ঘোড়ার ডিম। ছাগলের শিং।

Monday, January 14, 2008

একবার এসে দ্যাখো আমায়...

১.

পাঁচটা টেস্ট করিয়েও রোগের নেজ খুঁজে পাওয়া গেলনা। ডাক্তারের সাথে কথোপকথনটা আমার বরাবর মজাদার হয়। আজকে হলো না।

ডা: ইদানিং কি করছো তুমি?

আ: কিছু করা হয়ে উঠছে না আসলে। কিছুই তেমন করছি না।
ডা: টেনশন করো?
আ: তেমন জোরালো টেনশন করিনা।
ডা: আমার ধারনা ছিলো তোমার টাইপয়েড হয়েছে। রিপোর্ট বলছে ভিন্ন কথা। তোমার কিছুই হয়নি।
আ: রিপোর্টে কি ভুল থাকতে পারেনা?
ডা: তোমার সমস্যাটা আবার খুলে বলো।
আ: রাতে দেরী করে ঘুম হয়। যখনই ঘুমাই তার কয়েক ঘন্টা পর জেগে উঠতে হয়। গায়ে প্রচন্ড জ্বর থাকে, একই সাথে মাথা ধরা, মাঝে মাঝে সর্দি। দিনের বেলায় শরীর গরম থাকে, মাথা ভার থাকে।
ডা: জ্বরের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিনা।

ডাক্তার মাথা ঝাঁকালেন। খচখচ করে কাগজে কিছু লিখে দিলেন, বললেন, দ্রুত কোনো কাজে কম্মে লেগে যাও। আর এই ঔষুধ দুটো প্রতি রাতে ১টা করে মোট পনেরো দিন খাবে। এরপর খাওয়া লাগবে না!

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে বুক ফুড়ে নিরবে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। আমি টেনশন করি নাকি? কই, তেমন টেনশনতো করিনা। ধুর ছাই আমার মাথা-টাথা গেছে। কি যে এক ঘোড়ারোগ হলো আমার। ঈশ্বর.....।


২.


রোদে বসে গিটার নিয়ে টুং টাং করছি। কিছুক্ষন পর জননী ছাদে উঠে এলেন, বললেন- শিক্ষিত ছেলেরা এসব করে? আয় খেতে আয়। আমি কিছু বললাম না। কেবল হাসলাম।

: পাগল হয়েছিস?
: মুচকি হেসে মাথা নাড়াই

মা কাছে এসে চুলে হাত বুলান। ঠিক করে দেন। তারপর, বসে থাকেন যক্ষ বুড়ির মতোন। আমি তার ভেতরের অবস্থাটা বেশ বুঝতে পারছি। তবু, উঠে যাই অকারনে। মায়া বাড়ানো ঠিক না।


৩.

গান বাজাচ্ছি, গিটারে, যাত্রীর গান। আমার প্রিয় গান।

--> ভেবেছি তাই এবার যা কিছু হবে হবার
ভুল তবু করি স্বীকার
পরাজয় মেনে নিয়ে সব কিছু ভুলে গিয়ে
চাইবো আমার অধিকার
কপালে যা আছে লেখা, মনে যদি পাই-ও ব্যাথা
দ্যাখে নেবো আমার এর শেষ
মিথ্যে অভিনয় আর নয়, আর নয়
এই ভালো আছি এই বেশ...

মন... আঁধারের নীলিমায় তোমাকেই আজ খুঁজতে চায়
জানিনা কোথায় তোমায় পাবো তোমায়
একবার এসে দ্যাখো আমায়...।


৪।

হঠাৎ আদম হাওয়ার কথা মনে পড়ছে। আদম কি কখনো হাওয়াকে সন্দেহ করতো? করতো না। আমিও করতাম না। তাই বলে আমি আদম নই। আদম ভালো ছিলো। বছরের পর বছর ব্যাটায় হাওয়াকে পাবার জন্য কান্না-কাটি করেছিলো...। আমি পারিনা কেনো? আমার দ্বারা আসলে কিছু হয়না। হবেনা। আমার এখন এটাও মনে পড়ছে যে, আমার প্রচুর ঈর্ষা ছিলো। একসময়। এখন সেটা নেই ক্যানো? আমার এও মনে পড়ছে যে একসময় আমি তোকে খুব ভালোবাসতাম, এখন তোকে ভালোবাসি নাকি ঘৃনাবাসি সেটা বুঝতে পারছিনা কেনো? নাহ আমার মাথা পুরা আউলা হয়ে গেছে। আমি নি:শেষ হয়ে যাচ্ছি, তবু আগের মতো করে তোকে সব বলতে পারছি না...? একবার এসে দ্যাখে যাবি আমায়? চোখে মুখে গরম নিশ্বাস ঢেলে বলবি- ভালোবাসিস তুই আমায় সবচে বেশি!


Monday, December 31, 2007

সৃষ্টি


প্রায় এক মাসের সফল কর্মসূচির পর বরগুনা থেকে যখন ঢাকায় ফিরলাম তখন শরীর/মনের অবস্থা যাচ্ছেতাই। মনে মনে ভাবছিলাম লম্বা এক ডুব দিবো। সবকিছু থেকে। খাবো, দাবো, ঘুমে ডোম হবো। তেমন কিছুই হতে দিলো না নিয়তি। জরুরী তলব, বাড়িতে কোরবানি করতে হবে। অবশেষে চাঁন রাতে শেষ টিকিট নিয়ে যখন সৌদিয়ার বাস সার্ভিসে চেপে বসলাম তখনই ফোন। জানানো হলো বড় চাচা মারা গেছেন। গাজীপুর, দেড় ঘন্টার পথ। আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হলো তড়িগড়ি। বাস ছেড়ে দিবে একটু পর। দশ-বিশ-ত্রিশ গুনতে হলোনা। কর্তব্য বলতে শুধু অ্যামেরিকায় এন্সারিং মেশিনে এক মিনিটের বক্তৃতা দিয়েই সিটে শরীর এলিয়ে গভির ঘুমে মগ্ন হলাম। লোকটার প্রতি আমার কোনো মায়া-মমতা ছিলোনা। এখনো নাই। আমার ভেতরে অনেক অনেক জ্বালা, কষ্ট, হতাশা জাগিয়ে লোকটা হুট করে চলে গেছে। এতে আমার হতাশা বেড়েছে বৈ কমেনি।

যাইহোক, নিজের গ্রামে কিছু একটা করার স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কিভাবে শুরু করবো। অবশেষে সেটা এবার দেখতে পেলাম। গ্রামের একটা অংশ বাকি অংশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিপার্শ্বিক সব দিক থেকে তারা পিছিয়ে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেলাম এখানে শিক্ষার হার অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক কম। বন্ধুরা বললো ল্যাদা-ফ্যাদাদের শিক্ষার দিকে নজর দিতে। তাহলেই উন্নয়ন সম্ভব। আমি সেদিকে হাঁটলাম না। মা'দের নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছে করলো। এখানে বয়স্ক/বিবাহিত মহিলাদের শিক্ষার হার অনেক কম। ভেবে দেখলাম যদি এদের কোনো ভাবে শিক্ষিত করতে পারি তাহলে বাজিমাত করা সম্ভব। একজন মা একটি পরিবারের মুল অভিভাবক। মা শিক্ষিত হলে ফ্যামিলি এমনিতেই ডেভেলপ করবে। একজন কর্মজীবি বাবা পরিবারে কতটুকু সময় দিতে পারে? মা পরিবারকে ২৪ ঘন্টা সময় দিয়ে থাকে। উপরোন্তু সন্তানরা বাবার চেয়ে মাকে খুব বেশি কাছে পায়। তারা মায়ের আদর, স্নেহ, ভালোবাসা পেয়ে বেড়ে উঠতে থাকে। তাই একজন মা যা বলেন সন্তানরা তাই আগ্রহ ভরে করার চেষ্টা করে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে মা'কে বুঝাতে পারলে পরিবেশের এমন ছ্যাঁড়াব্যাঁড়া অবস্থারও উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। তাই, মা'কে শিক্ষিত করতে পারলে সবকিছুকে শিক্ষিত করার একটা চান্স নেয়া যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো এই ঝানু মহিলাদের কিভাবে বোঝাবো। এর আগে এখানে সরকারীভাবে এমন উদ্যেগের কম চেষ্টা হয়নি। সবই শুরু হয়ে শেষ হয়ে গেছে। সুবিধে হলো এদের কাছে আমি মোটামুটি পরিচিত। আমার এই পরিচিত তাদের ভেতর বিপ্লব ঘটাতে পারে, তাই সুযোগটা কাজে লাগানোর জন্য উঠেপড়ে লেগে গেলাম।

৫ সদস্যের একটা কমিটি করলাম। এরা ডোনেট করবে। মাসিক যা খরচ হবে তার পুরোটাই এরা বহন করবে। স্কুল ঘর ঠিক করার পর ঘরের মালিক জানালো তাকে ভাড়া দিতে হবে না। কমিটির সবাই এতে ভিষণ খুশি। 'সৃষ্টি' নিয়ে আজম আর মিলনের আগ্রহ দেখে ভালো লাগলো। আমার অবর্তমানে এরা এই কাজটাকে এগিয়ে নিতে পারবে মোটামুটি। অবশেষে চারজন শিক্ষিকার ব্যবস্থা করতে পারা গেল। এদের ৩ জন কোনো টাকা নিবে না। ১ জনকে মাসিক ১০০০ টাকা দিলেই চলবে! পূর্বে দেখতে পেয়েছি প্রায় প্রতিটি প্রোজেক্টের আগে একটা অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে হয়। যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক অনেক কম অর্থনৈতিক প্রেসার 'সৃষ্টিতে' পেলাম। পুরোপুরি গোছগাছ করে সবাইকে নিয়ে স্কুল ঘরে একটা মিটিং এর আয়োজন করা হলো। শুধুমাত্র ছাত্রীদের নিয়ে মিটিং। যারা আসবে তাদেরকে প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে বই, চক, ডাস্টার দেয়া হবে। আমার ধারনা ছিলো লজ্জা-শরম দূরে হটিয়ে ৭/৮জন মতো হয়তো আসবে। সেই অনুযায়ী ১২ জনের জন্য জিনিসপত্র কিনে আনা হয়েছিল। বিপত্তি ঘটলো মিটিংয়ে মহিলাদের উপস্থিতির পর। ৩০/৩৫ জন ছাত্রী দেখে আমার মতই সবাই তাজ্জব! যাই-হোক, ২০ মিনিট টানা ব্রিফ দিলাম। সুবিধে হলো এদের চোখে সহজেই জল এনে ফেলা যায়। এদের একটু ভালোবাসা দেখাতে পারলে এরা মানুষের জন্য কি না করতে পারে? তাদেরকে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হলে :

১। ছাত্রীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাঠ্যেদান করা হবে।
২। সপ্তায় ৬ দিন ক্লাশ হবে। ক্লাশ শুরু হবে বিকেল ৩টায়।
৩। ১ জন শিক্ষক সপ্তায় ২টি করে ক্লাশ নিবেন।
৪। সপ্তাহের প্রতি বৃহ:স্পতিবার একটি করে মিটিং হবে। এখানে ছাত্রীদের প্রোগ্রেস, তাদের সমস্যা, অভিযোগ, পারিপার্শ্বিক বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা হবে। অভিযোগ, সমস্যাগুলো আজম লিপিবদ্ধ করে রাখবে। পরের ক্লাশ থেকে তা সংশোধনের চেষ্টা করা হবে।
৫। প্রত্যেক মাসে একটি করে বড় মিটিং হবে। সেখানে কমিটির সবাই উপস্থিত থাকবো। যাবতীয় সমস্যা সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হবে তখন। মজার মজার সব ইভেন্টের মাধ্যমে ছাত্রীদের শিক্ষার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হবে।
৬। কোনো কারণ ছাড়াই কেউ তিন দিন ক্লাশে অনুপস্থিত থাকলে পরবর্তী অনুপস্থিত ক্লাশের জন্য ২ টাকা হারে জরিমানা করা হবে।
৭। আরো কিছু...।

এর মানে হলো আমাকে প্রতি মাসে গ্রামে যেতে হবেই! আমি ত্যাক্ত বিরক্ত হবো না। বরং প্রোজেক্টটা দাঁড়িয়ে গেলে আমার চেয়ে সুখি মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া ভার হবে। 'সৃষ্টি' নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। সমস্যা হলো তেমন অরগানাইজ জনোবল নাই। যে চারজন কমিটিতে আছে তারা হাঁ হয়ে আমার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করে। আমার চাই অরগানাইজ জনোবল আর পাশে দাঁড়িয়ে আশ্বাস দেবার মতো প্রিয়জন। তেমন পাওয়া ভার। দাঁড়িয়াল ঠাকুরের কবিতাই এখন শেষ সম্বল, "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে..."

Friday, December 28, 2007

ডিসেম্বর শূণ্য সাত- কিছু ব্যর্থতা, অভিশাপ আর মুঠো মুঠো একাকিত্ব

গুমোট অন্ধকার ফুড়ে শিশির ঝরছে বৃষ্টির মতো। ঝাপসা পৃথিবী জমে গেছে সীমাহীন নিঃস্তব্ধতায়... নিঃসঙ্গতায়... রাশি রাশি ব্যর্থতায়...। ঘুম আসছেনা। বিছানায় শরীর এলানোর প্রশ্নই ওঠে না। চোখ মুদলেই নিজেকে চামড়া ছোলানো জীব মনে হয়। সেই ছোলানো অংশে অজস্র নোনা জল। মানুষের। অনেক অ-নে-ক জ্বালা ওতে। নিজেকে ছোট করে ফেলে, নিজের কাছে। ছোট ভাবতে একদম ইচ্ছে করেনা। তবু আমি ছোটো। স্পষ্ট করে বললে- নীচ।

এই সীমাহীন অসহনীয় অবস্থায় একটা ব্যপার খেয়াল করলাম। সেটা হলো এতো ঘনিষ্ট বন্ধু-বান্ধব থাকতেও আমি আমার যন্ত্রনাময় ব্যাপারগুলো নিয়ে কারো সাথে ডিসকাস করতে পারছি না। এক চিমটিওনা। এক বিন্দুও না। আবিস্কার করলাম, আদতেই আমি একজন নিঃসঙ্গ ব্যর্থ মানুষ। আমার কোনো বন্ধু নাই।

কোরবানি হচ্ছি প্রতিটি মূহুর্তে। গলায় ছোরা চালিয়ে জবাই করে মেরে ফেলার চেয়ে মনস্তাত্ত্বিক জবাইয়ে কতযে অসহনীয় যন্ত্রণা সেটা বোঝানো যাবে না। মরছি সমানে। এখানে-সেখানে। কতোশতো ভাবে। ঈশ্বর কেনোযে এতো এতো কাড়ি কাড়ি অপ্রাপ্যতা ঠেসে ঠেসে আমার লাইফে ইমপোর্ট করলো...। এতো কুমির-বোয়াল ফেলে আমাকেই কিনা গাধাটার পছন্দ হলো! আমি নিশ্চিত ঘাড়ের দারোয়ান দুটো কাঁদতে কাঁদতে এতোদিনে মারা-ই গেছে!

অনেক, অ-নে-ক দূর যেতে পারবো কিনা জানিনা। না যেতে পারলে সেটা হবে ব্যর্থতার উপর ব্যর্থতা। ব্যর্থতার ষোলকলা বলতে যা বুঝায় তা পূর্ণ হবে। স্বার্থপর মানুষের মতো কিছু অনৈতিক সিদ্ধান্ত আর কিছু মানুষকে অবমূল্যায়ণ আমার জীবনের চরম এক গোলকধাঁধা। যেখান থেকেই তুমি শুরু করোনা কেনো ঠিক ঠিক সেই আগের অবস্থানে। ঘুরে ফিরে তুমি আসবে। শুরু করবে নতুন করে। আমি সিদ্ধান্ত যা নেই তা সবই সলিড সেটা বলবো না। তবে ম্যাক্সিমাম সলিড। টেকশই। সে নিজের প্রয়োজনেই হোক কিংবা প্রিয় মানুষের। তবে নিজের জন্য যতোগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি সব বুঝে শুনে নিতে পারিনি। কোনো সফল মানুষও বলতে পারবে না তার সব সিদ্ধান্ত টেকশই ছিলো। সিদ্ধান্ত নেবার আগে আবেগ কাজ করবে। ক্ষোভ থাকবে। অজুহাতের পুঁজি থাকবে। আর একটা বাচ্চা ছেলে ছাড়া তেমন কিছুইতো নই আমি। বয়স কাঁড়ি কাঁড়ি বাড়ছে। তবু অনেক কিছুর ব্যবধানে জড়িয়ে নিজেকে ক্ষুদ্র জীব ছাড়া তেমন কিছু ভাবতে পারিনা। চাইনা। বাঁধনে জড়ানো মানে একটা সার্কেলে আবদ্ধ হওয়া। জমে যাওয়া। তুমি চাইলেই সেই সীমানা অতিক্রম করতে পারো না। তুমি শৃঙ্খলের নিয়মে বাঁধা তখন। তোমাকে অনেক কিছু বুঝে শুনে করতে হবে। বাইরের পৃথিবীকে তুচ্ছজ্ঞান করে চার দেয়ালে সুখের ছবি আঁকতে হবে। কাউকে নিয়ে মিছেমিছি নাটক করতে হবে। প্রতিদিন। এতোসব আমার জন্য নয়। ফেলে আসা জীবন আমার কাছে যতটুকু চায় ততটুকু যদি নাইবা দিতে পারি তো এই জীবনের কোনো মানে হয়না। আমি ফেলে আসা জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আজ থেকে ১ বছর, ১০ বছর, ২০ বছর পরেও আমার এই ধারনার পেখম রঙ হারাবে না। মানুষ সুখস্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। আমিও চাই। ব্যাস। আমার অভিলাস বলো, চাহিদা বলো, অভিসার বলো... তা এ-ই।

ডিসেম্বর শূণ্য সাত। ডিসেম্বর শূণ্য সাত। অসহনীয় যন্ত্রণা। অসহনীয় যন্ত্রণা...।


------------------------------
সময় : ২৬ ডিসেম্বরের কোনো এক মৃত রাত।
স্থান : পল্লবী, ঢাকা।

Tuesday, December 18, 2007

মানুষ দেখলে তবে আলো

কতোদিন হলো মিরাকল দেখিনা। আমি মিরাকল পেতে, দেখতে ভালোবাসি। কিন্তু মিরাকলতো আমাকে আর দশজন ভদ্র মানুষের মতো ভালোবাসেনা। তাই মানুষের মিরাকল দেখে যাই।

কখনো কাউকে মিরাকল দেই নাই। আজ একজনকে মিরাকল দিলাম।

আমি যে কষ্টটা এতোদিন ধরে লালন করে এসেছি, সেই একই কষ্ট আমার চোখের সামনে অন্য একজন পেতে পারেনা।
অন্তত আমি বেঁচে থাকতে, না। সামর্থ্য আমার তেমন একটা নেই। তবু...