Wednesday, November 28, 2007

হৃদয়হীন সিডর এবং মানুষের ভালোবাসা

আমি যেমন ভালো বন্ধু সার্কেল পেয়ে দারুন তৃপ্তির ঢেকুর তুলি, তেমনি ওদের নিয়ে আমার একটা লুকনো কষ্টও আছে। ওরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। জন্ম থেকেই। তাই ওরা ওদের চারপাশে যা দেখে তা সবই সৌন্দর্য্য নির্ভর। ওদের সমস্ত চিন্তা-ভাবনা ওদের কেরিয়ার আর ভালোবাসা ভালোবাসা খেলা-খেলি নিয়ে। মাঝে মাঝে যে ওরা অনাহারী মানুষ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেনা সেটাও ঠিক না। ওরাও অনাহারী, বিপদগামী মানুষ নিয়ে কথা বলে, ওরাও দূর্যোগ নিয়ে ভাবে এবং ওরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় কিন্তু নিজেরা কখনোই সক্রীয় ভূমিকা পালনে অগ্রগামী হয়না। ওরা আর্থিকভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত কিন্তু মাঠে নেমে একটা জোয়ার তুলে, মানুষের ভেতর মমতার এক জাগরণ সৃষ্টি করতে ওদের কোনো ইচ্ছা নেই।

এটাই স্বাভাবিক। দেশের উচ্চবিত্ত মানুষের দায় পড়েনি অনাহারী মানুষ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার। যারা ভালো অবস্থানে আছে তারা কখনোই চায়না শুধু শুধু কষ্টকে ডাক দিয়ে ঘরে আশ্রয় দেয়া। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা জন্ম থেকেই একটু অন্যরকম। ওদের নিয়ে লেখার সামর্থ্য আমার নাই। ওরা ওদেরই মতো। ওদেরকে শব্দের খাঁচায় আটকানো সহজ নয়।

ইতিমধ্যে মিরপুরবাসী একটা ঘটনা প্রতিদিন দেখছে। দুর্গত মানুষের দুর্দশার কথা ভরা প্লে-কার্ড গলায় ঝুলিয়ে কিছু উচ্ছ্বল তরুন একটা হলুদ বাক্স নিয়ে সাহায্যের আহবানে যাচ্ছে মানুষের বিবেকের দ্বারে দ্বারে। হাঁ বলছিলাম, বির্বতন বাংলাদেশ এর কথা। আমাদের সংগঠন এর কথা। কিছু সম-চিন্তাশীল কিশোর এই সংগঠনের সদস্য। ওরা সবাই বন্ধু নয়, একই পাড়ায়ও থাকেনা, একই কলেজেও পড়েনা। তবু ওরা আত্মীয়। আত্মার আত্মীয়।

প্রথম দিন শুধুমাত্র রেলী দিয়ে শুরু, মাইকিং করে এবং ব্যানার লাগিয়ে আমরা মার্চ করেছি প্রধান সড়কগুলোয়। ঐদিন অর্ধবেলা পর্যন্ত উঠেছে- ৪৬৭৩ টাকা। তারপরের দিন কৌশল বদলানো হলো। মিরপুর কাজী পাড়া থেকে সর্বোচ্চ বিজয় স্মরনী পর্যন্ত আমরা সিটিং গেটলক গাড়িগুলোতে (বিকল্প-১৭, ঢাকেশ্বরী-৩৬, ভলভো, ডিসকভারী, একুশে ইত্যাদি) ৭টা টীম করে ভীক্ষা (কারণ অনেক ভদ্র মানুষ 'মাপ' করতে বলেছেন!) করার জন্য সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করেছি। প্রতিটি বাসে ২জন করে। একজন পুরনো মেম্বার, একজন নতুন মেম্বার। পুরনো মেম্বার ব্রীফ দিবে, নতুন মেম্বার হলুদ বাক্সটা নিয়ে প্রতিটি যাত্রীর কাছে যাবে। ব্যাপারটা খুবই মজার। এসব বাসে আগে উঠতো নেশাখোড়রা, এখন উঠছি আমরা! ব্রিফিংয়ে কোনো মুখস্ত বিদ্যা ঝাড়তে হয়না আমাদের। বাস্তবে দেশের যা অবস্থা তাই বলেছি আমরা। সে যাইহোক, প্রথম দিন আমরা তুলেছি ২১ হাজারের মতো। দ্বিতীয় দিন উঠেছে ২৩ হাজার টাকা। তৃতীয় দিন উঠেছে ২১ হাজার ৯২টাকা। আমরা ডিসেম্বর ১০ তারিখ পর্যন্ত এই ত্রাণ সংগ্রহ করে যাবো। ইতিমধ্যে শীতবস্ত্র এবং আনুসাঙ্গিক পোষাক সংগ্রহ শেষ হয়েছে। আমাদের টার্গেট ২ হাজার ৫শ কেজি চাল বিতরণ করা, পাশাপাশি অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী। আশা করা যাচ্ছে আগামী দশ তারিখের আগে এই টার্গেট শেষ করা যাবে।

এই কাজ করতে করতে যা অভিজ্ঞতা হচ্ছে তা সবই পুরনো। কিছু তৈলাক্ত চেহারার মানুষ প্রায় প্রতিটি বাসে আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে। কেউ বলেছে তোমরা যে কলেজ/ভার্সিটির ছাত্র সেটার ডকুমেন্ট কি? তোমাদের আইডি দেখাও, কার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসব উঠাচ্ছো? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা সবই ওভারকাম করেছি। কমিশনারের অনুমতি, পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি, প্রতিটি সিটিং গেটলক বাসগুলোর হেড অফিসেই আগে থেকেই জানানো হয়েছে, আর আছে আমাদের পরিচয় পত্র। আবার এমনো হয়েছে, যাত্রীরা নিজেদের মধ্যে শুরু করে দিয়েছে ঝগড়া-ঝাটি। তবে সব ছাড়িয়ে মানুষের ভালোবাসাটা সবসময় জয়ী হয়েছে। তৈলাক্ত চেহারার মানুষগুলো কখনোই সঙ্গী পায়নি। যাত্রীরাই কেউ কেউ তাকে বলছে- মিষ্টার ওরাতো বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য পথে নেমেছে আপনি কি করেছেন? আপনি উল্টো তাদেরকে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন! কেউ বলছে- অশিক্ষিত বুঝেও না কারা ছাত্র, কারা নেশাখোড়!

আজ আমার ছুটির দিন। আসলে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভ্রমন করা তারপর ব্রিফ দেয়া কম কষ্টসাধ্য নয়। দুপুরে লান্স করতে হয়েছে হোটেলগুলোতেই। ২টা করে নাল-রুটি আর সবজি ভাজি। দুইদিনেই সবাই মোটামুটি অর্ধেক। নতুন কিছু মেম্বার যুক্ত হয়েছে তারাই আজ কাজ করছে, আছে কিছু পুরনে মেম্বার।

সবশেষে বলতে পারি, বাংলাদেশের মানুষের মতো মমতা অন্য কোথাও নেই। যদিও আমি বাংলাদেশের সীমানা আজ পর্যন্ত ক্রশ করতে পারি নাই তবু বলছি কিছু ঘটনার মুখোমুখি হয়েই।

ঘটনা-১ :
আমি এবং আমার সহকারী বিজয় স্মরণীতে নেমে ফিরতি বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে (যেহেতু আমাদের বুকে বড় সাইজের প্লে-কার্ড ঝুলানো এবং বুকের বাম পাশে পরিচয়পত্র, এবং হলুদ বাক্স অবশ্যই একটা কারণ)। এমন সময় একটা হ্যাংলা লোক এসে বললো- ভাই আমার কাছে ১ টাকা আছে, আর কোনো টাকা পয়সা নাই। আমি কি আপনাদের এই এক টাকা দিতে পারি? তার কথা শুনে আমার এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো, তাকে খুব খুব আপন মনে হলো, এবং অবশ্যই তার কাছ থেকে ১ টাকা পরম মমতায় নেয়া হলো। লোকটা চলে গেলো।

ঘটনা-২ :
আমরা প্রতিটি বাসে যা উঠেছে তা বাস থেকে নেমে যাবার পর টোটাল অংকটা বলে যাই। ঠিক এভাবে- ধন্যবাদ যাত্রীমহোদয়গণ, বিপদগামী মানুষগুলো পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য। আমরা এই বাসে আপনাদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত সাহায্য পেয়েছি মোট- এতো টাকা। অনেক ধন্যবাদ আপনাদের। তো সেদিন আমি নিয়ম মাফিক এটা বলে ঘুরছি বাস থেকে নেমে যাবার জন্য, তখনি এক বৃদ্ধা পাশ থেকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে- বাবা, আল্লায় তোদের অনেক ভালো করবেন। তার চোখ অশ্রুসিক্ত। আমরা নেমে গেলাম।

ঘটনা-৩ :
শেওড়া পাড়ায় আমরা মিলিত হলাম, সব টীম। সব বাক্স ব্রীজের নিচের পিলারের পাশে একের পর এক সাজিয়ে রাখা হলো। সবগুলোই ভারী হয়ে গেছে। আমরা অপেক্ষা করছি অবশিষ্ট মেম্বারদের জন্য। টুকটাক কথা বলছি, এমন সময় এক বৃদ্ধা ভিক্ষুক এসে বললো- বাবা আমি টাকা দেবো, কার কাছে দেবো? আমরাতো সবাই রীতিমতো অবাক! আমাদের এক সহকর্মী হুড়োহুড়ি করে তার বাক্সটা বের করে বললো- আন্টি আমারটায় দেন, আমারটায় দেন, আমার বাক্সে আজ টাকা কম উঠেছে। বৃদ্ধার চোখে সেই কি মমতা, মুখে চির সুবজ হাসি। প্রাণ খোলা হাসি। বৃদ্ধা মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেলেন।

আসলে আমরা কাজ করার শক্তি পাচ্ছি এনাদের ভালোবাসা পেয়েই। তাঁদের ভালোবাসাই আমাদের কাজ করার অনুপ্রেরণা। তারা আজীবন ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, সে কামনা করি।

2 comments:

Anonymous said...

hmmmz

Anonymous said...

Oi, achei seu blog pelo google está bem interessante gostei desse post. Gostaria de falar sobre o CresceNet. O CresceNet é um provedor de internet discada que remunera seus usuários pelo tempo conectado. Exatamente isso que você leu, estão pagando para você conectar. O provedor paga 20 centavos por hora de conexão discada com ligação local para mais de 2100 cidades do Brasil. O CresceNet tem um acelerador de conexão, que deixa sua conexão até 10 vezes mais rápida. Quem utiliza banda larga pode lucrar também, basta se cadastrar no CresceNet e quando for dormir conectar por discada, é possível pagar a ADSL só com o dinheiro da discada. Nos horários de minuto único o gasto com telefone é mínimo e a remuneração do CresceNet generosa. Se você quiser linkar o Cresce.Net(www.provedorcrescenet.com) no seu blog eu ficaria agradecido, até mais e sucesso. If is possible add the CresceNet(www.provedorcrescenet.com) in your blogroll, I thank. Good bye friend.