Thursday, November 15, 2007

স্বপ্ন সবুজ

গ্রামে গেলে ভোঁতা নাকওয়ালা মানুষ হয়ে যাই। ছোটরা আমার ছায়া যেখানে দেখবে সেখান থেকে অন্ততপক্ষে ১০০ মাইল দূরে থাকবে। সকালে ভেজা বেড়ালের মতো চুপি চুপি মোক্তবে যাবে, তারপর চুপি চুপি এসে নাস্তা খেয়ে ফের স্কুলে যাবে। আমি ঘরে না থাকলে এক একজন তারা সম্রাট জাহাঙ্গীর হয়ে যায়। দুই ছেলে, এক মেয়ে ভাইয়্যার। তিনজন তিনরকম। বড় ছেলেটা ভাঙ্গচূড়ে দক্ষ, দানবীর, পড়াশুনায় হাবলচন্দ্র। মেঝোটা ভেজাবেড়াল, খুব হিসেবী, কম কথা বলে, স্কুলে নিয়মিত যায়। ছোটটা, যার নাম বৃষ্টি, প্রতিদিন ঘরের ভেতর কিছু না কিছু ভাঙ্গবেই। খুব রাগী। টনটন কথা বলবে। এই তিনপদের পুচকির দল আমি নিশ্চিত প্রতিদিন ওদের খোদার কাছে প্রার্থণা করে আমি যেন তাড়াতাড়ি ঢাকায় ফিরে যাই এবং এটাও সত্যি, ওদের খোদা শিঘ্রিরই তা কবুল করেন। আমি বাড়িতে বেশিদিন থাকতে পারিনা বিভিন্ন কারনে। গ্রামে গেলে সময় কাটতে চায়না, এটা সবচেয়ে বড় সমস্যা। বন্ধুরা গ্রামে থাকেনা, তাই ওদের নিয়ে আড্ডাবাজিও সম্ভব না। সবচেয়ে বড় সমস্যা মানুষজন খুব একটা চিনিনা। অথচ তারা সবাই কোনো কোনোভাবে আমার আত্মীয়। রাস্তায় বের হলেই বাবা কেমন আছো? বলে হয়তো কোনো বুড়ো দাঁড়িয়ে যাবে। অথবা মামা আসসালামুআলাইকুম বলে কেউ মাথা নিচু করে চলে যাবে। তুমি জাহাঙ্গীরের ভাইনা? বলে কেউ পথরোধ করে দাঁড়াবে। 'পড়াশুনা কেমন চলছে?' ইত্যাদি ইত্যাদি এসব মুহুর্ত খুব বোরিং। তবে এর মাত্রা কমই, এদের বেশির ভাগকে মেমোরাইজ করে চিনে নেয়া যায় কিন্তু নতুন আন্ডাবাচ্চা কাউকেইতো চিনিনা। কখনো কখনো কাউকে ডেকে বলি- এই এইদিকে আয়, তোর বাবার নাম কি? অনেক সময় দেখা যায় ওর বাবাকেও আমি চিনিনা! :( এখন থেকে ভাবছি বেশি বেশি গ্রামে যাবো। গ্রামের মানুষজনের সাথে খুব করে মিশবো। রবি ঠাকুরের কবিতটা এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হতে পারে...

বহুদিন ধরে, বহুক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি, বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে দু'পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপর
একটি শিশির বিন্দু।

No comments: