Wednesday, November 21, 2007

গাভাস্কার আমার চেয়েও ছোটো?

জুনের তিন তারিখ, 2000। বঙ্গবন্ধু ষ্ট্যাডিয়াম। চির প্রতিদ্বন্দী ভারত বনাম পাকিস্তানের খেলা, তাই ক্রিকেট দুনিয়া চরম গরম। পুরো ষ্ট্যাডিয়াম এলাকা চিৎকার ছ্যাছাম্যাছিতে গমগম করছে। প্রতিবারের মতো দেরী করে ষ্ট্যাডিয়ামে প্রবেশ করলাম। সি।এম. কে সাইন দেখালাম, কিছু বলতে গিয়েও সে কিছু বললো না। রোবার মেট বলে কথা! আমাকে বলা হলো তড়িগড়ি করে যেন হসপিটালী বক্সে ডিউটিতে চলে যাই। ডিউটি পড়েছে নন-এসি দিয়ে হসপিটালী বক্সে যাবার গেটে। জায়গামতো গিয়ে পেলাম আমার সহকারী বন্ধুকে। নন-এসিতে প্রধানমন্ত্রীর/ প্রধান অতিথির জন্য একটা বিশেষ আসন রয়েছে। তার আশে পাশে অতিথিদের আসন। বিশেষ কোনো উপলক্ষ্য ব্যতীত এখানে খুব একটা লোক সমাগম হয়না। এর মধ্যে আমার সহকারী বন্ধুটি মহাসুখে নন-এসির আসনে বসে খেলা দেখায় ব্যস্ত হয়ে গেছে। আমি হসপিটালী বক্সের টিকেটধারীদের কাছ থেকে টিকেট চেক করে ছেড়ে দিচ্ছি। এখানে বলে রাখা ভালো নন-এসির ঠিক পেছনে ছোট এক গেট। এটায় সবসময় তালা ঝোলানো থাকে, চাবি ডিউটিরত স্কাউটদের হাতেই থাকে। দর্শক যারা আসবে তারা ওয়েষ্টার্ণ গ্যালারী হয়ে আসবে। এই গেটটা সম্ভবত ইমাজেন্সির জন্য রাখা হয়েছে। হসপিটালী বক্সের পেছনে, উপরের প্রধান ক্যামেরার ডান পাশে পেপসীর জন্য আলাদা রুম রয়েছে। হসপিটালী বক্সে এখান থেকেই লান্চ দেয়া হয়। পেপসীর কর্মচারীরা অতো ঘুরপথে না যেয়ে আমাদের তেলিয়ে ইমাজেন্সি গেটটা খুলে পেপসী নিয়ে যায়। আমরা বিরক্ত হলেও খুলে দেই। স্কাউটদের জন্য পেপসী পানে কোনো লিমিটেশন নেই! কেনো নেই সেটা বুঝতে অতোটা বুদ্ধিমান না হলেও চলে ;)

খেলার ১৫ মিনিট পর ওয়েষ্টার্ণ গ্যালারী ঘুরে এক লোক হসপিটালী বক্সের দিকে এগিয়ে এলেন। আমি নড়েচড়ে দাঁড়াই। শ্যুট টাই পড়া লোক। আমার নাক বরাবর লম্বা! তাকে টিকিট দেখাতে বলি- তিনি বিড়বিড় করে কি বললেন বুঝলাম না। মিনিট খানেক তাকে দাঁড় করিয়েই রাখলাম। পরে সহকারীকে হাঁক দেই, এই রাসেল এইদিকে আয়তো। উনার টিকিট নাই, টিকিট ছাড়া উপরে যেতে চায়। ও এসেই চোখ বড়বড় করে বলে- স্যার যাইয়ে, যাইয়ে। আমি হতভম্ব।
-- ঐ ব্যাটা তুই তাকে যেতে দিলি কেন?
-- তার মাথা ঠিক আছে?
-- আমার মাথা ঠিক আছে, তোর ঠিক নাই। তুই উনাকে যেতে দিলি কেন?
-- ছাগল উনি কে জানিস?
-- কে?
-- গাভাস্কার
-- গাভাস্কার! যাহ বেটা উনিতো আমার চেয়েও ছোটো!

সেদিন এটা নিয়ে অনেক হাসিঠাট্টা হলো। মাইক্রোতে বসে আমার বার্থডে পালন করা হলো এভাবে- হ্যাপী বেড ডে, হ্যাপী বেড ডে!

No comments: