Tuesday, November 13, 2007

ভালোবাসতে বাসতে ফতুর করে দেবো

রানা আজ জিজ্ঞাসা করলো কবে বিয়ে করবো আমি। কেন করেছে জানিনা, তবে উত্তর দিতে যতটা দেরী হবার কথা ততটা হলো না। বললাম, বিয়ে নিয়ে ভাবিনা অতো। অনেক জোড়াজুড়ি করায় বললাম, আসলে বিয়ে টিয়ে নিয়ে সত্যিই আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। বিয়ে করে হবে টা কি? আমার অনেক কাজ অসমাপ্ত হয়ে পড়ে আছে। সেগুলো সমাপ্ত করতে করতে বুড়োও হয়ে যেতে পারি। ও দাঁত কেলিয়ে হাসে, বলে, রাতে একা লাগে না? আমি না হেসে পারিনা, বলি- লাগেতো। আর কতদিন এভাবে কাটবে? ঘাড়ে হাত দিয়ে ও চোখ পিটপিট করে। ধুরররর মিয়া, ঐ ব্যাপার? আরে তাতে কি হইছে, যেদিন বেশি একা লাগবে সেদিন সুমনের ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে কাউকে না হয় জবাই করলাম :))

আচ্ছা, আমি কি আদৌ বড় হয়েছি? একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে তার গায়ের অদ্ভুত গন্ধ আর নব্য বুকের স্পর্শ নেয়া এবং অপর এক বিচ্ছিন্ন ঘটনায় টুকরো চুম্বন ছাড়া আমি বড়ত্বের কি প্রামাণ্যচিত্র জীবনের জন্য তুলে রেখেছি! অপর সব দিকের চেয়ে এই সাইডটা আমার আগাগোড়া ভাঙ্গাচুড়া। মাঝে মাঝে খুব কাটখোট্টা মনে হয় নিজেকে। যে যা চেয়েছে তাতো কখনোই দিতে পারিনি, বরঞ্চ বহুক্ষেত্রে খুব কষ্ট দিয়েছি। এসবক্ষেত্রে আমি নিজেও অনুতপ্ত হয়ে ভেতরে ভেতরে খুব পুড়েছি। দগ্ধ হচ্ছি রাতের পর রাত। এটা আমার রাতকে করাতের মতো ধারালো করে রেখেছে। মনটা অজস্রবার ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, তবু, ...কিচ্ছু করার নেই। কিচ্ছু না।

বিয়ের ক্ষেত্রে চাঁটগায়ের ছেলেদের একটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। তা হলো, তারা পাত্রী হিসাবে চাঁটগায়ের মেয়েদেরই পেতে চায়। আমি নিজেও এই চলিত ট্র্যাডিশনের উপর কয়েকটা পরীক্ষা চালিয়েছি। যতবার চালিয়েছি ততবারই ঐ একই ফল। এর কারণ চাঁটগায়ের মেয়েরা সুন্দর? না। এটা সেটা না। চাঁটগায়ের মেয়েরা এভারেজ সুন্দর। আমার কাছে চাঁটগায়ের মেয়েদের যে ব্যাপারগুলো ভালো লাগে তা হলো:

-তারা শান্তশিষ্ট। ধীরস্থির।
-বিয়ের পর তারা সংসারের বাইরে বাড়তি সময় ব্যয় করে না। পুরোপুরি সংসারী হয়ে যায়।
-তারা শ্রদ্ধাশীল।
-তারা অতিথিপরায়ন।
-তারা অহংকারী নয়।
-তারা গভীর মায়াশীল।
-তারা সন্তানদের প্রতি অধিক যত্নবান।
-তারা যৌথ পরিবার নিয়ে চলতি সময়ের প্রগতির উন্নয়ন ভাবনা মনেতে লালন করে না।
-তারা ধার্মিক।
-তারা এভারেজ শিক্ষিত।
-তারা খুব পরিশ্রমী। খুব কম সংসারে কাজের লোক থাকে। নিজেদের সংসার নিজেদের হাতে তারা দেখবাল করে।
-সর্বোপরি তারা মাদার তেরেসা হবার স্বপ্ন কমই দেখে। খুব সাধারণ জীবন যাপন করে থাকে তারা। পৃথিবী নয়, তাদের কাছে মূলত তাদের সংসারই সব।

আমি ঢাকার ছেলে নাকি চট্টগ্রামের সেটা নিয়ে মাঝে মাঝে সমস্যা হয়। তবে আমি চট্টগ্রামের ছেলে বলতে যতোটা গর্ববোধ করি, অন্য এলাকার ছেলে বলতে ততটা হই না।
আমি চাঁটগাইয়া পোয়া।

সেদিন রাজিবকে উপদেশ দিয়েছিলাম (ওহ আমার ঈশ্বর, আমার উপদেশের ঠেলায় পুরো বন্ধু সার্কেল ত্যাক্তবিরক্ত। তাদের তুমি রক্ষা করো।) রাজিব নিয়ম মাপিক এখনো রাত জাগছে। আমার মেজাজ বিগড়ে যায়। শালা। বললাম, শুন যাদু সোনা- সব পাখির সংসার হয়না। কিভাবে বুঝবি কোন পাখি তোর জন্য আদর্শ? যে পাখি কম উড়বে, বুঝবি এ পাখিকে তুই খাচায় পুরে রাখতে পারবি। যে পাখি ছটফট করবে, বুঝবি এ ভবঘুরে। এরা মাদার তেরেসা হতে চায়। সো লীভ দেম। তোর চাই খাঁচায় ডিম পাড়ার মতোন পাখি। উড়ে উড়ে সংসার হয়না, তুমি বাড়ি গাড়ি আর একশ একতলায় ফ্ল্যাট কিনে এক মাদার তেরেসাকে (ক্ষমা করো মাদার তেরেসা, আমার সাহস দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে! একে তুমি বালকসুলভ দৃষ্টিতে দেখো) তার পূণ্য কাজে বাঁধা দিয়ে সম্পর্কের বন্ধনে বেঁধে উহার সহিত এক রাত এক শট দিয়ে সুখ স্বপ্ন দেখতে পারো বৈকি, কিন্তু বাকী তিনশত চৌষট্টি দিন দেখবে তুমি অন্ধকারে, অন্ধকারে...।

নাহ খুব ওল্ডিষ্ট আমি। রাজিব কি বুঝেছে আল্লায় মালুম। তবে যদি কখনো নিজের জন্য ভাবার ফুসরত পাই তো প্রমিজ করতাছি, বৌকে ভালোবাসতে বাসতে ফতুর করে ফেলবো। বৌ আমার আমি জানি, ভুলোমন আর কাঠখোট্টা এই আমাকে ভালোই দেখবাল করবে। আমাকে সংসারের মায়ায় বেঁধে রাখবে। যৌথ পরিবারটাকে নিজের মতো করে সাজাবে। আমাদের টুনটুনির মতোন বাচ্চাদুটোকে (!) পুরোপুরি সময় দিয়ে তাদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে বড় করে তুলবে। এমন বড়, যাতে তারা বড় হয়ে বলবে- আমি আব্বু আম্মুর ছেলে/মেয়ে। আমার খুব লোভ হয়, বৌকে কোনো চাঁদ জাগা রাতে পাশে বসিয়ে এই ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠে ভালোবাসার গান শোনাই। গভির অসময়ে তার কোলে মাথা রেখে সবুজের গন্ধ নেই। তাকে স্বপ্ন দেখাতে দেখাতে নিজের মাঝে বিলীন করি। বউ আমার মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বুকের ভেতরের 'কিছু করতে না পারার' আগুনটাকে নিভিয়ে আমাকে ইন্সপায়ার করবে, আমার উপর জোড় খাটিয়ে পৃথিবীকে রাঙাবে নতুন করে। কতো কি...। স্বপ্নতো স্বপ্নই! কেউতো আর বুড়ো বয়সে আমাকে বিয়ে করতে আসছে না! তবু স্বপ্ন দেখে যাই, কোনো বন্য অভিলাসে।

No comments: