নদিকে দু'ভাগ করে তিরতির করে ছুটে চলছে যলযান। চলছে ছুটে আমার যাবতীয় যতোসব স্থাবর অস্থাবর যন্ত্রণা। উদাসী হলেম আজ। নতুন করে। নদি আমার প্রিয়জন। এর কাছে আবদার চাইতে আমার জড় লাগেনা। যখন ইচ্ছে তখন এতে আমি কল্পনার বসতি গড়ি। ভাঙ্গি। চুড়ি। যেমন ইচ্ছে তেমন গড়ি। এ আমার একান্ত আপনজন। একে দুর্গত করলে আমার ইগো ফুটো হয়না।
গুটগুটে অন্ধকার, চারপাশ। লক্ষ লক্ষ তারা আকাশে। শতো শতো ছেঁড়া তারার ভেলকি ঝলক দেখিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। বহুদূরে মিটমিট করে জ্বলছে ঝাপসা লোকালয়। দুভাগ হবার আগে শুভ্র ফেনা তুলে জলকনা নদিকে আলোড়িত করছে অদ্ভুতুড়ে আবেগের ত্রাস সৃষ্টি করে। যেন বলছে কোনো অনাহুত, নদিকে, প্রিয়তমা নি:শেষ হয়ে যাচ্ছি দ্যাখো, নি:শেষ, এই তোমার পরে।
রাত সাড়ে বারো। লঞ্চের চারতলা ছাদে বসে আছি। একা। নি:স্ব। কনকনে শীত ঝরছে ইচ্ছেমতো। এক্স-হান্ড্রেড বেজে উঠে বিশ্রি রকম সুরে। জানি সে বাজবে। বাজবে। বাজবে। যতোক্ষন না ধরি। ভুলিনি, আজ তার জন্মদিন। কিছু কিছু জন্মদিন ভুলে যাওয়া সম্ভব না। মাঝে মাঝে অসম্ভব রকম অসহায় লাগে। আমি মানুষটা আদতে সুবিধের নই। অনেক অনেক ফাঁকিবাজি, রঙচঙ, কেরামতি, ফক্করবাজি, টক্করবাজি, লক্করবাজি, নক্করবাজি, যেন-তেন যত্তোসব ঝুটঝামেলায় ভরা আমার আমি। মানুষকে ঠকাইনা বড় গলায় ক্যামনে বলি? মানুষকে ঠকাচ্ছিতো।
আমার মটো বলে কিছু নেই। হোপলেস এই আমি জীবনের যতোসব রসকষে ডুবে ডুবে ভেসে যাই। স্থিতি কিংবা বসতি কিংবা সংসার, ধর্ম, কর্ম, নিজের জন্য টুকটাক ভাবনা... আমার দ্বারা হবেনা। এসব জেনেও একজন, শুধু অপেক্ষায় থাকে। তাকে এখন আর বুঝাই না। বলিনা- দ্যাখ রাতের সুপ্ত ছেঁড়া তারারাও হঠাৎ হঠাৎ ভেলকি দেখায়। আমি সেটাও পারিনা।
তারপরও তোর এই জন্মদিনে, তোকে কাঁদিয়ে ভাসালেও একটা কথা না বলার জন্য মনটা আপসোসে ভরে আছে...
সখি, তোর জন্যও কিছু ভালোবাসা ভরে আছে বেদুইইন এই আকাশে। তোকেও হঠাৎ হঠাৎ প্রচন্ডরকম ভালোবাসি।
: রাত ২:১৪ মিনিট, ১৪ ডিসেম্বর, ২০০৭ইং
: ডাইরীর পাতা থেকে।
Monday, December 17, 2007
Tuesday, December 11, 2007
নিয়ে চলো দূরে, আরো দূরে, বহুদূরে...
আজ 'মিথ্যা' কে বিক্রি করলাম। মিথ্যা বিক্রি করা খুব সহজ। শুধু একটু ড্যাম কেয়ার ভাব চেহারায় আনতে হয়। ভাবছি আমার টি-শার্টের পেছনে একটা কথা সেঁটে দেবো-i sell lie। বাসায় ফিরেছি ভোর ৬টায়। ৮ টায় ফের উঠে মামার সামনে গিয়ে বললাম- আই।এল.টি.এস এর জন্য টাকা লাগবে। কিছু টাকা ধার না দিলেই নয় (আহহহ কতো টাকা যে ধার নিলাম!)। তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা চালালেন (পুরা বোকা পাবলিক, আমার মিথ্যে ধরা খুব সহজ) তারপর টাকা দিয়ে টো টো জীবনধারন না করা নিয়ে টানা ১০ মিনিট বক্তৃতা দিলেন। কে শুনে কার কথা, আমি তখন মনে মনে সপ্তষীতে চলে গেছি। রানাকে নিয়ে 'জেনুইটি সিস্টেম' এ গেলাম। তারপর 'ঘাস ফড়িং' টাকে ফের রি-নিউ করলাম। হায় আমার ছেঁড়া স্বপ্ন। আমি তোকে বাঁচিয়ে রাখবো, যতদিন বেঁচে আছি।
খুব ক্লান্তি শরীর-মন জুড়ে। টানা ৩ রাত জেগে থাকার দরুন চিন্তা-ভাবনায় ঘুম ঢুকে গেছে। বলার মতো তেমন কিছুই ঘটে নাই এই কয়দিন। তারপরো এখন, এই ভর দুপুরে কিছু লিখবো বলে চোখের দু'পাতা জোর করে খুলে লিখছি। চোখ বন্ধ থাকলেও সমস্যা ছিলনা। টাইপ করতে আমার চোখ খোলা না রাখলেও চলে। কিন্তু চিন্তা-ভাবনাটাতো ঠিক থাকতে হবে। সেটা থাকছেনা।
গতরাত সারারাত মসজিদে ছিলাম। আশ্চার্য্য হবে যেই শুনবে। আমি মসজিদে ছিলাম, তাও সারারাত! যে আমি বৎসরে একবারও যাইকিনা সন্দেহ আছে সেই আমি...! হা হা হা। হেসে লাভ নাই। ভ্রু কুঁচকেও না। মসজিদে ছিলাম দায়ে পড়ে। ওখানেই আমরা ত্রানের সব জিনিসপত্র রেখেছি। ত্রান প্যাকেজিং হচ্ছে। ৫০০ পরিবারের ১ সপ্তাহের খাবার, এবং শীতের গরম কাপড়। এটা পুরো ১৫ জন যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে টাকা উঠিয়েছে তাদের ভোটাভোটিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকালই তিনজন সদস্যকে পটুয়াখালীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা ওখানে গিয়ে সবচে' ক্ষতিগ্রস্ত ৫০০ পরিবারের হাতে টোকেন দিয়ে আসবে। তারপর আমরা ১৩ তারিখ থেকে সেখানে বিলি করবো। সম্ভবত ১৬ তারিখ সবাই ঢাকায় ব্যাক করবো।
আমার প্ল্যান ছিলো অন্যরকম। আমি বলেছি এই ২ লাখ টাকা দিয়ে অন্তত ২০ টা পরিবার যারা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের এ-টু-জেড পুনর্বাসন করা হোক। ঘর তোলা থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছু। কিন্তু আমার প্ল্যানে ভোট পড়ে নাই বেশি। গণতান্ত্রিক নিয়মেই এগুচ্ছি আমরা। আমার একার সিদ্ধান্ততো আর সলিড না। যেটা সবার কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হবে সেটাই করা হবে। এতে আমার কিঞ্চিত পরিমান মনক্ষুন্নতা নেই।
আমার প্ল্যানটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে একটা কারনে। সেটা হলো, মানুষ এখন খুব বেশি ত্রাণ নির্ভর হয়ে গেছে। তারা কাজ-টাজ ছেড়ে ছুঁড়ে ত্রানের জন্য উন্মুখ হয়ে বসে থাকে। কাজ করে ৩০০ টাকা ইনকামের চেয়ে ঘরে বসে ২০০ টাকা উপার্জন অনেক নিরাপদ এবং এতে খাটনীও নেই! অভাবী এবং নিরক্ষর মানুষগুলো শুধু জানে তিনবেলা পেট পুরে খেলেই জীবন চলে যাবে। বেশ আছেতো তারা। তো কাজ করে কি হবে? আমাদের সরকারের উচিৎ তাদের প্রয়োজানুসারে কিছু কর্মসংস্থান করা। যাতে কাজ করে জীবন ধারন করার মানসিকতা অভাবী সর্বহারা মানুষগুলোর মন থেকে না হারিয়ে যায়। যারা ত্রান দিচ্ছে, ঘর বাড়ি উঠিয়ে দিচ্ছে তারা অন্তত পক্ষে যেন পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের দিয়েই যাবতীয় কাজ করায়। এতে ওদের পারিশ্রমিকও দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
মনটা ভিষন খারাপ। কেবল ধু ধু শূন্যতা অস্তিত্ব জুড়ে। বন্ধু বান্ধবরা এতোদিন আমায় পেলো বুঝি। বুঝিনা কিছু। বেশি বাড়াবাড়ি করলে নাকের ডগায় সোজা ঘুষি হাঁকিয়ে দেব। এদিকে নির্ঝরের খুব কষ্ট হচ্ছে। আন্টি 'ট্রোমা সেন্টারে' এখানো ভর্তি রয়েছেন। অপারেশন করা লাগবে। প্রথম দিন সারারাত ছিলাম, পরের দুইরাত থাকতে পারলাম না। আম্মাটাও মোটামুটি অসুস্থ্য। বোনের পরীক্ষা। সেমিষ্টার ফি। নতুন চাকরীর অন্বেষন। কতোশতো ঝুটঝামেলা। কিযে সমস্যা। কিযে সমস্যা। মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে খুব- সামওয়ান প্লিজ আমার মাঝে লীন হও। আমাকে একটু ইন্সপায়ার করো। আমাকে জাগিয়ে তোলো। আমাকে বাঁচিয়ে রাখো। আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলো। দূরে। আরো দূরে। বহুদূরে। অনেক দূরে...।
খুব ক্লান্তি শরীর-মন জুড়ে। টানা ৩ রাত জেগে থাকার দরুন চিন্তা-ভাবনায় ঘুম ঢুকে গেছে। বলার মতো তেমন কিছুই ঘটে নাই এই কয়দিন। তারপরো এখন, এই ভর দুপুরে কিছু লিখবো বলে চোখের দু'পাতা জোর করে খুলে লিখছি। চোখ বন্ধ থাকলেও সমস্যা ছিলনা। টাইপ করতে আমার চোখ খোলা না রাখলেও চলে। কিন্তু চিন্তা-ভাবনাটাতো ঠিক থাকতে হবে। সেটা থাকছেনা।
গতরাত সারারাত মসজিদে ছিলাম। আশ্চার্য্য হবে যেই শুনবে। আমি মসজিদে ছিলাম, তাও সারারাত! যে আমি বৎসরে একবারও যাইকিনা সন্দেহ আছে সেই আমি...! হা হা হা। হেসে লাভ নাই। ভ্রু কুঁচকেও না। মসজিদে ছিলাম দায়ে পড়ে। ওখানেই আমরা ত্রানের সব জিনিসপত্র রেখেছি। ত্রান প্যাকেজিং হচ্ছে। ৫০০ পরিবারের ১ সপ্তাহের খাবার, এবং শীতের গরম কাপড়। এটা পুরো ১৫ জন যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে টাকা উঠিয়েছে তাদের ভোটাভোটিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকালই তিনজন সদস্যকে পটুয়াখালীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা ওখানে গিয়ে সবচে' ক্ষতিগ্রস্ত ৫০০ পরিবারের হাতে টোকেন দিয়ে আসবে। তারপর আমরা ১৩ তারিখ থেকে সেখানে বিলি করবো। সম্ভবত ১৬ তারিখ সবাই ঢাকায় ব্যাক করবো।
আমার প্ল্যান ছিলো অন্যরকম। আমি বলেছি এই ২ লাখ টাকা দিয়ে অন্তত ২০ টা পরিবার যারা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের এ-টু-জেড পুনর্বাসন করা হোক। ঘর তোলা থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছু। কিন্তু আমার প্ল্যানে ভোট পড়ে নাই বেশি। গণতান্ত্রিক নিয়মেই এগুচ্ছি আমরা। আমার একার সিদ্ধান্ততো আর সলিড না। যেটা সবার কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হবে সেটাই করা হবে। এতে আমার কিঞ্চিত পরিমান মনক্ষুন্নতা নেই।
আমার প্ল্যানটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে একটা কারনে। সেটা হলো, মানুষ এখন খুব বেশি ত্রাণ নির্ভর হয়ে গেছে। তারা কাজ-টাজ ছেড়ে ছুঁড়ে ত্রানের জন্য উন্মুখ হয়ে বসে থাকে। কাজ করে ৩০০ টাকা ইনকামের চেয়ে ঘরে বসে ২০০ টাকা উপার্জন অনেক নিরাপদ এবং এতে খাটনীও নেই! অভাবী এবং নিরক্ষর মানুষগুলো শুধু জানে তিনবেলা পেট পুরে খেলেই জীবন চলে যাবে। বেশ আছেতো তারা। তো কাজ করে কি হবে? আমাদের সরকারের উচিৎ তাদের প্রয়োজানুসারে কিছু কর্মসংস্থান করা। যাতে কাজ করে জীবন ধারন করার মানসিকতা অভাবী সর্বহারা মানুষগুলোর মন থেকে না হারিয়ে যায়। যারা ত্রান দিচ্ছে, ঘর বাড়ি উঠিয়ে দিচ্ছে তারা অন্তত পক্ষে যেন পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের দিয়েই যাবতীয় কাজ করায়। এতে ওদের পারিশ্রমিকও দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
মনটা ভিষন খারাপ। কেবল ধু ধু শূন্যতা অস্তিত্ব জুড়ে। বন্ধু বান্ধবরা এতোদিন আমায় পেলো বুঝি। বুঝিনা কিছু। বেশি বাড়াবাড়ি করলে নাকের ডগায় সোজা ঘুষি হাঁকিয়ে দেব। এদিকে নির্ঝরের খুব কষ্ট হচ্ছে। আন্টি 'ট্রোমা সেন্টারে' এখানো ভর্তি রয়েছেন। অপারেশন করা লাগবে। প্রথম দিন সারারাত ছিলাম, পরের দুইরাত থাকতে পারলাম না। আম্মাটাও মোটামুটি অসুস্থ্য। বোনের পরীক্ষা। সেমিষ্টার ফি। নতুন চাকরীর অন্বেষন। কতোশতো ঝুটঝামেলা। কিযে সমস্যা। কিযে সমস্যা। মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে খুব- সামওয়ান প্লিজ আমার মাঝে লীন হও। আমাকে একটু ইন্সপায়ার করো। আমাকে জাগিয়ে তোলো। আমাকে বাঁচিয়ে রাখো। আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলো। দূরে। আরো দূরে। বহুদূরে। অনেক দূরে...।
Labels:
চলে যাচ্ছে দিন...,
ছেঁড়া মানুষের গল্প,
ভাঙ্গা-গড়া,
যন্ত্রণা,
স্বপ্ন সবুজ
Friday, December 7, 2007
প্রতিপক্ষহীন এই জীবন
তার এই অযাচিত উদ্ব্যেগটা আমার যে ভালো লাগছিলো না তা নয়। ভালো লাগছিলো, একই সাথে একটা ক্ষীন দু:খবোধ। এটা হবার কথা নয়। সময়ের প্যাঁচে মানুষ হারায়ে যায়... এটা ধ্রুব সত্য। একে নিয়ে দু:খবোধ করাটা ঠিক না। রিক্সায় বসেই ওকে দেখতে পেলাম। চোখে মুখে উদ্বেগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কতদিন পর গাজিপুর এলাম? সঠিক জানা নেই। তবে অনেক অনেক দিন পর এলাম। পথ ঘাটের কিছুই তেমন চিনি না। বিবর্ণ সবকিছু। মানুষগুলো কেমন তা ঈশ্বর ভালো জানেন। ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সাজবে। সাজেনি। এ মেয়ে কখনোই অতিরিক্ত প্রসাধন ব্যবহার করেনা। সাধারণ সালোয়ার কামিজ পরনে। গায়ে আকাশ রঙের ওরণা। অস্থির আর উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে এগিয়ে এলো। আমি তার চোখে কৈশোরকে জ্বলতে দেখলাম। হেসে বললো --এতো দেরী লাগে?
-- পথ ঘাটতো চিনি না। পরিচয় হও, আমার বন্ধু রানা।
শেষবার মাস চারেক আগে দেখা হয়েছিলো। তখন এরকম সুস্থির ভাব ছিলো না। সুখে আছে? দু:খবোধটা আরো শক্তপোক্ত অবস্থানে মোড় নেয়। অথচ দু:খবোধ করার কোনো মানে নেই। মানুষ সুখে থাকবেই। কথার ফাঁকে ফাঁকে ও মৃদু শব্দে হাসছিলো। অচেনা এই হাসিটা সম্পূর্ণ আনকোরা। আগে কখনো দেখিনি। মেয়েদের হাসিও তাহলে সময়ের সাথে পাল্টায়! হাঁটছি এলেবেলে কথাবার্তা বলতে বলতে। হঠাৎই, সেই আগের মতো করে আমার এক হাতে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে শুরু করেছে। মনে মনে ভিষন চমকে গেলেও কিছু বললাম না। হাত ছাড়িয়ে নিলাম কথার বাঁকে। যা চুকেবুকে গেছে তাকে জোর করে দৃশ্যপটে হাজির করাটা বোকামী। এ আমি জানি। এমনিতে অভিমান টবিমানের মতো লাল্লু মার্কা অনুভূতিজ্ঞান আমার ভোঁতা। তারপরেও কিছু ব্যাপার থেকে যায়। সেসব থেকে নিজেকে মুক্ত করা কঠিন। ঢাকায় এতোবার দেখা হয়েছে এমন কখনোই হয়নি। রানা পেছনে সরে যায়। গাছের পাতা নড়েছে। কোনো একটা কারণ অবশ্যই আছে। ধক করে ভ্রুটা কুঁচকে যায়। রানা হচ্ছে জীবন্ত বি.বি.সি। বন্ধু সার্কেলের কারো কিছু রানার জ্ঞাত হওয়া মানে সবার জ্ঞাত হওয়া। ঈশ্বর জানেন আমাকে নিয়ে ভবিষ্যতে কি ঘটাবে সে।
বড় চাচা'র বাড়ি যাচ্ছি ১২ থেকে ১৫ বছর বছর পর। এই একটা লোককে আমি চরম ঘৃনা করি। এক সময় দারুন প্রতাপ ছিলো। এখন তার কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই। মি. প্রতাপ মৃত্যুর প্রহর গুনছে আজ। তবু তার একটা বিষয় আমার ভালো লাগে, সেটা হলো লোকটা দারুন ঠোঁটকাটা। মুখের উপর শাট শাট কথা বলতে পারে। আমার ভেতর এ ধরনের লোকদের প্রতি একটা সফট কর্ণার আছে। তবু ভিলেনতো ভিলেনই। এ লোক আমার জীবনের অন্যতম এক ভিলেন। একে কিছু দেখানোর জন্য বহু কষ্ট করেছি। কিছুটা দেখিয়েছি, কিছুটা পারিনি। যখন বুঝতে শিখলাম যে, পৃথিবীতে কোনো কিছুই অবিনশ্বর নয় তখন হাল ছেড়ে দিলাম। স্বপ্ন ছিলো লোকটাকে নি:স্ব করে দেবার। পারলাম না। তার আগেই সে নি:স্ব হয়ে গেছে। একে নি:স্ব করার মতো কোনো কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই। কিছুদিন আগে কিছু জমি দখলে নিয়েছি বটে কিন্তু সেটা তার কাছ থেকে নয়, ফুফুর কাছ থেকে। এতেও লোকটা কম ক্ষ্যাপেনি। আমার জন্মদাতাকে ফোনে কয়েক লাইন শুনিয়ে দিয়েছে, কিন্তু আমিতো আমার জন্মদাতার মতো অতো সরল অংক নই। আমার বুদ্ধিজ্ঞান সুস্থির। যা করি ভেবেচিন্তে করি। ধীরে সুস্থ্যে ভাবি, ধীরে সুস্থ্যে করি। কোনো এক অদ্ভুত কারণে তারা আমাকে ফোন-টোন করেনা। সেটা নিয়ে আমি যে মাঝে মাঝে গবেষণা করিনা তাও না। আমার ঘৃনাটুকুর উত্তাপ তারা টের পায় বলেই আমাকে এড়িয়ে চলে, এ আমি ভালো জানি।
মানুষ বড় কালের স্মৃতিকে খুব একটা মনে রাখে না। মানুষের যতো ভাবনা চিন্তা তার শৈশোব কৈশোর নিয়েই। একটা শিশুকে কেউ চড় থাপ্পড় মারলে সে সেটা মনে রাখেনা। তার কাছে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু একটা শিশু যদি বুঝতে শেখে যে তার বাবা মা মানুষিকভাবে অত্যাচারিত; আত্মীয়রা তাদের নি:স্ব করার কুট চেষ্টা চালাচ্ছে, সে যখন বুঝতে পারে যে তার অগ্রজ নিজেকে উৎসর্গ করছে সংসার নামক ভাঙ্গা নৌকাকে টিকিয়ে রাখার জন্য তখন শতো চেষ্টা করেও তার মন থেকে চক্রান্তকারীদের প্রতি ঘৃনা মুছে ফেলতে পারেনা কেউ। আমি আজীবন ফুফু এবং বড় চাচাকে ঘৃনা করে এসেছি। ঘৃনা আমার বাপের পুরো গোষ্ঠির প্রতিই।
বড় চাচা'র সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি। হা হা হা হা হা, ইটস আ বিউটিফুল উইস। তিনি মরবেন, শিঘ্রির, ইহা চিরন্তন সত্য। তিনি মরলে আমার লাভ-ক্ষতিতে কোনো পরির্বতন ঘটবে না। তবু তিনি মরবেন ভেবে আমার আপসোস হচ্ছে। তার কারণ, এতে আমি আত্মতৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছি না। তারা সবাই যদি একে একে লেজ তুলে পালাতে শুরু করে তো কাকে দেখাবো এতো জ্বালা? প্রতিপক্ষহীন দাবা খেলায় কোনো মজা নেই।
ও আবার আমার হাত ধরেছে। আমি কথা বলার ছলে হাতটা মুক্ত করলাম, আবার। সামনে ছোট এক তলা বাড়ি। বাড়ির চারপাশে বড়ই গাছ, লিচু, পেপেঁ থেকে শুরু করে কয়েক পদের গাছ। গাজিপুরে গাছপালা ভালোই। তারপরেও চাটগাঁয়ের মানুষ এরা। গাছের প্রতি এদের বাড়তি আকর্ষন থাকবেই। গেট খুলে দিলেন বড় চাচী। আমি তাকিয়ে আছি, উনিও। তারপর বললেন- বড় লোকের ছেলে আসলি তাহলে?
কটাক্ষ করলেন, কিন্তু কিছু বললাম না। মৃদু হেসে বললাম- আসলাম।
তিনি বড় চাচার কাছে নিয়ে গেলেন। রুমটা খুব ঠান্ডা হয়ে আছে। চারপাশে ছড়িয়ে আছে অদ্ভুত এক গন্ধ। বিছানায় গরম চাদর দিয়ে ঢাকা একটা কঙ্কাল। চারদিকে চোখ বুলিয়ে কঙ্কালটার দিকে তাকালাম খুটিয়ে দেখবো বলে। আমি এর চোখে কিছু দেখতে চাই। বহু প্রত্যাশিত কিছু। দেখতে পেলাম না। তার বদলে মুখটায় বাসা বেধেছে অদ্ভুত এক শূণ্যতা। অদ্ভুত। কঙ্কালসার চোখে তার বোবা দৃষ্টি। কি ভাবছেন আমাকে দেখে, আমি রঙ্গ করতে এলাম নাকি প্রতিশোধ নিতে? কিছু টুকটাক খোঁজখবর যা না নিলেই নয়, নিলাম। দুই ছেলেই আলাদা থাকে। বড় ছেলে প্রবাসী। ছোট ছেলে দেখবাল করার প্রয়োজন অনুভব করেনা। মেয়েরাও দেখতে আসছেনা। এরা তাই প্রচন্ড একা। বুড়ো হলে সব মানুষ একা হয়না। একা হয় তারাই যারা মানুষকে একা করে। শুনলাম দিন ছয়েক আগে রাজ্যের আত্মীয়স্বজন এসে ভীড় করেছিলো। সে নাড়িতে টান পড়েছিলো বলে। মৃত্যুর সময় মৃত বাড়িতে থাকতে হয়। এটা এই সমাজের নিয়ম। মৃতের মৃত্যু নি:শ্বাসের পতনে এমন কি আছে যার জন্য পাবলিক উন্মুখ হয়ে থাকবে? ইশ্বর তা ভালো জানেন। কিছু কৌতুহল নিয়েও অনেকে আসে। অনেকে আসে অযথাই। অনেকে আসে লাভস্টোরীকে চমকপ্রদ করতে। এছাড়া কার কি ঠেলা পড়েছে এই স্বার্থপর কঙ্কালটাকে দেখার? এইযে এখন কাউকে দেখা যাচ্ছে না তারও কারণ আছে। সেটা হলো লোকটার মরার চান্স এখন কম। এই সমােজর মানুষরা ভাবে মৃত্যু কেবল আসে রাতেই। দিনের বেলায়ওযে মানুষের মৃত্যু হতে পারে এই চিন্তাটা এই সমাজের ৯০% মানুষ উপলব্ধি করেনা। তাদের মতে মৃ্ত্যু আসবে আধার রাতে। টুপ করে। সে মতে লোকটার মরার চান্স রাতে বেশি! 'রাতে বার বার নাকে আঙুল দিয়ে দেখি তিনি বেঁচে আছেন কিনা?' বড় চাচী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন। তিনি যে খুব একটা স্বামী পূজারী তাও না। তিনি স্বামীর সেবা করছেন দায়ে পড়ে। এই কঙ্কালটা ব্যতিত তার যে আর কোনো অবলম্বন নাই! এই কঙ্গালটা আজ মরে গেলেই কাল সবাই এসে সংসারটাকে ভেঙ্গেচুড়ে তাকে নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলায় ব্যস্ত হবে, তা এই বুদ্ধিমান মেয়ে মানুষটা ভালোই জানে। আমি তার কথা শুনে চুপ মেরে যাই। সময় বয়ে চলে। এখন মরে যাওয়া রোদ্রুরের খেলা চলছে বাইরে, তুখোড় সুন্দর বিকেল। অথচ সম্ভাব্য এই মৃতের ঘরে ওসব অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে। লোকটা কি জানে সে বাঁচবে না?
অবশেষে লোকটা পরাজিত হলো। কেঁদে উঠলেন হঠাতই। বাঁধা দিলাম না। সান্তনাও না। শুধু তাকিয়ে থাকলাম। এ অশ্রু মিথ্যে নয়। এ আকুতি, চোখের ভাষা মিথ্যে নয়। কোথাও পরাজয়ের গ্লানি নেই। সেখানে স্নেহ আর অনুশোষনা টলটল করছে। আমার হাত ধরে তিনি উষ্ণতা খুঁজতে থাকেন। আমি খুঁজতে দিলাম। 'তুই দেখতে ঠিক তোর দাদীর মত। তোর দাদী খুব সুন্দর ছিলেন। মানুষকে বড় ভালোবাসতেন। যখন রাগতেন তখন কান্ডজ্ঞান তার ঠিক থাকতো না। আমার ছেলে মেয়েরা তার কিছুই পায়নি। না গায়ের রঙ, না তার স্বভাব।' বড় চাচী দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। আকাশ কি পেয়েছে? প্রশ্ন করে রুনু। সে বসেছে বিছানায়, গুটিশুটি মেয়ে হয়ে। তাকিয়ে আছে অদ্ভুত এক দৃষ্টি সাথে নিয়ে। বড় চাচী ফের দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন- সব। আমি মুচকি হাসি। এরা তাহলে আমাকে ভালোও বলে!
বেরিয়ে এলাম শেষ বিকেলে। রানা খুব বোরড হয়ে গেছে বুঝতে পারলাম। রুনু আমাদের এগিয়ে দিতে এলো ষ্ট্যান্ড পর্যন্ত। শরীরে আলস্য এনে রিক্সায় ওঠলাম। রানার সাথে কৌশল বিনিময় করে সে বিদায় দিলো। আমি শেষবারের মতো তাকালাম। হুমমম। সে কিছু বললোনা। কিছু তার বলারও নেই। আমারওনা। রিক্সা চলতে শুরু করেছে। সে হয়তো দাঁড়িয়ে আছে। হয়তোবা না। এটা নিয়ে ভাবার প্রয়োজনবোধ করছিনা। সে সুখে আছে, ঢেড় ভালো আছে। চিরকাল সুখে থাকুক সে কামনা করি। আমার প্রতিটি একাকিত্বের জ্বালা আমি নিজের জন্য রেখেছি। এর ছোঁয়া অন্য কাউকে স্পর্শ করুক সেটা চাইনা। এদের কেউ কেউ হয়তো নিরবে খুব দরদ দেখায়। সেটা আমি কেয়ার করিনা। মানুষের সব ফাঁকিবাজি নি:শ্বাসের সামনে এলে বুঝা যায়। অন্য কোনো ভাবে জানা সম্ভব নয়। তাই কোন মানুষ কেমন সেটা আমি ভালো বুঝি।
-- ৫ ডিসেম্বর, ২০০৭ইং।
-- পথ ঘাটতো চিনি না। পরিচয় হও, আমার বন্ধু রানা।
শেষবার মাস চারেক আগে দেখা হয়েছিলো। তখন এরকম সুস্থির ভাব ছিলো না। সুখে আছে? দু:খবোধটা আরো শক্তপোক্ত অবস্থানে মোড় নেয়। অথচ দু:খবোধ করার কোনো মানে নেই। মানুষ সুখে থাকবেই। কথার ফাঁকে ফাঁকে ও মৃদু শব্দে হাসছিলো। অচেনা এই হাসিটা সম্পূর্ণ আনকোরা। আগে কখনো দেখিনি। মেয়েদের হাসিও তাহলে সময়ের সাথে পাল্টায়! হাঁটছি এলেবেলে কথাবার্তা বলতে বলতে। হঠাৎই, সেই আগের মতো করে আমার এক হাতে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে শুরু করেছে। মনে মনে ভিষন চমকে গেলেও কিছু বললাম না। হাত ছাড়িয়ে নিলাম কথার বাঁকে। যা চুকেবুকে গেছে তাকে জোর করে দৃশ্যপটে হাজির করাটা বোকামী। এ আমি জানি। এমনিতে অভিমান টবিমানের মতো লাল্লু মার্কা অনুভূতিজ্ঞান আমার ভোঁতা। তারপরেও কিছু ব্যাপার থেকে যায়। সেসব থেকে নিজেকে মুক্ত করা কঠিন। ঢাকায় এতোবার দেখা হয়েছে এমন কখনোই হয়নি। রানা পেছনে সরে যায়। গাছের পাতা নড়েছে। কোনো একটা কারণ অবশ্যই আছে। ধক করে ভ্রুটা কুঁচকে যায়। রানা হচ্ছে জীবন্ত বি.বি.সি। বন্ধু সার্কেলের কারো কিছু রানার জ্ঞাত হওয়া মানে সবার জ্ঞাত হওয়া। ঈশ্বর জানেন আমাকে নিয়ে ভবিষ্যতে কি ঘটাবে সে।
বড় চাচা'র বাড়ি যাচ্ছি ১২ থেকে ১৫ বছর বছর পর। এই একটা লোককে আমি চরম ঘৃনা করি। এক সময় দারুন প্রতাপ ছিলো। এখন তার কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই। মি. প্রতাপ মৃত্যুর প্রহর গুনছে আজ। তবু তার একটা বিষয় আমার ভালো লাগে, সেটা হলো লোকটা দারুন ঠোঁটকাটা। মুখের উপর শাট শাট কথা বলতে পারে। আমার ভেতর এ ধরনের লোকদের প্রতি একটা সফট কর্ণার আছে। তবু ভিলেনতো ভিলেনই। এ লোক আমার জীবনের অন্যতম এক ভিলেন। একে কিছু দেখানোর জন্য বহু কষ্ট করেছি। কিছুটা দেখিয়েছি, কিছুটা পারিনি। যখন বুঝতে শিখলাম যে, পৃথিবীতে কোনো কিছুই অবিনশ্বর নয় তখন হাল ছেড়ে দিলাম। স্বপ্ন ছিলো লোকটাকে নি:স্ব করে দেবার। পারলাম না। তার আগেই সে নি:স্ব হয়ে গেছে। একে নি:স্ব করার মতো কোনো কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই। কিছুদিন আগে কিছু জমি দখলে নিয়েছি বটে কিন্তু সেটা তার কাছ থেকে নয়, ফুফুর কাছ থেকে। এতেও লোকটা কম ক্ষ্যাপেনি। আমার জন্মদাতাকে ফোনে কয়েক লাইন শুনিয়ে দিয়েছে, কিন্তু আমিতো আমার জন্মদাতার মতো অতো সরল অংক নই। আমার বুদ্ধিজ্ঞান সুস্থির। যা করি ভেবেচিন্তে করি। ধীরে সুস্থ্যে ভাবি, ধীরে সুস্থ্যে করি। কোনো এক অদ্ভুত কারণে তারা আমাকে ফোন-টোন করেনা। সেটা নিয়ে আমি যে মাঝে মাঝে গবেষণা করিনা তাও না। আমার ঘৃনাটুকুর উত্তাপ তারা টের পায় বলেই আমাকে এড়িয়ে চলে, এ আমি ভালো জানি।
মানুষ বড় কালের স্মৃতিকে খুব একটা মনে রাখে না। মানুষের যতো ভাবনা চিন্তা তার শৈশোব কৈশোর নিয়েই। একটা শিশুকে কেউ চড় থাপ্পড় মারলে সে সেটা মনে রাখেনা। তার কাছে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু একটা শিশু যদি বুঝতে শেখে যে তার বাবা মা মানুষিকভাবে অত্যাচারিত; আত্মীয়রা তাদের নি:স্ব করার কুট চেষ্টা চালাচ্ছে, সে যখন বুঝতে পারে যে তার অগ্রজ নিজেকে উৎসর্গ করছে সংসার নামক ভাঙ্গা নৌকাকে টিকিয়ে রাখার জন্য তখন শতো চেষ্টা করেও তার মন থেকে চক্রান্তকারীদের প্রতি ঘৃনা মুছে ফেলতে পারেনা কেউ। আমি আজীবন ফুফু এবং বড় চাচাকে ঘৃনা করে এসেছি। ঘৃনা আমার বাপের পুরো গোষ্ঠির প্রতিই।
বড় চাচা'র সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি। হা হা হা হা হা, ইটস আ বিউটিফুল উইস। তিনি মরবেন, শিঘ্রির, ইহা চিরন্তন সত্য। তিনি মরলে আমার লাভ-ক্ষতিতে কোনো পরির্বতন ঘটবে না। তবু তিনি মরবেন ভেবে আমার আপসোস হচ্ছে। তার কারণ, এতে আমি আত্মতৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছি না। তারা সবাই যদি একে একে লেজ তুলে পালাতে শুরু করে তো কাকে দেখাবো এতো জ্বালা? প্রতিপক্ষহীন দাবা খেলায় কোনো মজা নেই।
ও আবার আমার হাত ধরেছে। আমি কথা বলার ছলে হাতটা মুক্ত করলাম, আবার। সামনে ছোট এক তলা বাড়ি। বাড়ির চারপাশে বড়ই গাছ, লিচু, পেপেঁ থেকে শুরু করে কয়েক পদের গাছ। গাজিপুরে গাছপালা ভালোই। তারপরেও চাটগাঁয়ের মানুষ এরা। গাছের প্রতি এদের বাড়তি আকর্ষন থাকবেই। গেট খুলে দিলেন বড় চাচী। আমি তাকিয়ে আছি, উনিও। তারপর বললেন- বড় লোকের ছেলে আসলি তাহলে?
কটাক্ষ করলেন, কিন্তু কিছু বললাম না। মৃদু হেসে বললাম- আসলাম।
তিনি বড় চাচার কাছে নিয়ে গেলেন। রুমটা খুব ঠান্ডা হয়ে আছে। চারপাশে ছড়িয়ে আছে অদ্ভুত এক গন্ধ। বিছানায় গরম চাদর দিয়ে ঢাকা একটা কঙ্কাল। চারদিকে চোখ বুলিয়ে কঙ্কালটার দিকে তাকালাম খুটিয়ে দেখবো বলে। আমি এর চোখে কিছু দেখতে চাই। বহু প্রত্যাশিত কিছু। দেখতে পেলাম না। তার বদলে মুখটায় বাসা বেধেছে অদ্ভুত এক শূণ্যতা। অদ্ভুত। কঙ্কালসার চোখে তার বোবা দৃষ্টি। কি ভাবছেন আমাকে দেখে, আমি রঙ্গ করতে এলাম নাকি প্রতিশোধ নিতে? কিছু টুকটাক খোঁজখবর যা না নিলেই নয়, নিলাম। দুই ছেলেই আলাদা থাকে। বড় ছেলে প্রবাসী। ছোট ছেলে দেখবাল করার প্রয়োজন অনুভব করেনা। মেয়েরাও দেখতে আসছেনা। এরা তাই প্রচন্ড একা। বুড়ো হলে সব মানুষ একা হয়না। একা হয় তারাই যারা মানুষকে একা করে। শুনলাম দিন ছয়েক আগে রাজ্যের আত্মীয়স্বজন এসে ভীড় করেছিলো। সে নাড়িতে টান পড়েছিলো বলে। মৃত্যুর সময় মৃত বাড়িতে থাকতে হয়। এটা এই সমাজের নিয়ম। মৃতের মৃত্যু নি:শ্বাসের পতনে এমন কি আছে যার জন্য পাবলিক উন্মুখ হয়ে থাকবে? ইশ্বর তা ভালো জানেন। কিছু কৌতুহল নিয়েও অনেকে আসে। অনেকে আসে অযথাই। অনেকে আসে লাভস্টোরীকে চমকপ্রদ করতে। এছাড়া কার কি ঠেলা পড়েছে এই স্বার্থপর কঙ্কালটাকে দেখার? এইযে এখন কাউকে দেখা যাচ্ছে না তারও কারণ আছে। সেটা হলো লোকটার মরার চান্স এখন কম। এই সমােজর মানুষরা ভাবে মৃত্যু কেবল আসে রাতেই। দিনের বেলায়ওযে মানুষের মৃত্যু হতে পারে এই চিন্তাটা এই সমাজের ৯০% মানুষ উপলব্ধি করেনা। তাদের মতে মৃ্ত্যু আসবে আধার রাতে। টুপ করে। সে মতে লোকটার মরার চান্স রাতে বেশি! 'রাতে বার বার নাকে আঙুল দিয়ে দেখি তিনি বেঁচে আছেন কিনা?' বড় চাচী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন। তিনি যে খুব একটা স্বামী পূজারী তাও না। তিনি স্বামীর সেবা করছেন দায়ে পড়ে। এই কঙ্কালটা ব্যতিত তার যে আর কোনো অবলম্বন নাই! এই কঙ্গালটা আজ মরে গেলেই কাল সবাই এসে সংসারটাকে ভেঙ্গেচুড়ে তাকে নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলায় ব্যস্ত হবে, তা এই বুদ্ধিমান মেয়ে মানুষটা ভালোই জানে। আমি তার কথা শুনে চুপ মেরে যাই। সময় বয়ে চলে। এখন মরে যাওয়া রোদ্রুরের খেলা চলছে বাইরে, তুখোড় সুন্দর বিকেল। অথচ সম্ভাব্য এই মৃতের ঘরে ওসব অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে। লোকটা কি জানে সে বাঁচবে না?
অবশেষে লোকটা পরাজিত হলো। কেঁদে উঠলেন হঠাতই। বাঁধা দিলাম না। সান্তনাও না। শুধু তাকিয়ে থাকলাম। এ অশ্রু মিথ্যে নয়। এ আকুতি, চোখের ভাষা মিথ্যে নয়। কোথাও পরাজয়ের গ্লানি নেই। সেখানে স্নেহ আর অনুশোষনা টলটল করছে। আমার হাত ধরে তিনি উষ্ণতা খুঁজতে থাকেন। আমি খুঁজতে দিলাম। 'তুই দেখতে ঠিক তোর দাদীর মত। তোর দাদী খুব সুন্দর ছিলেন। মানুষকে বড় ভালোবাসতেন। যখন রাগতেন তখন কান্ডজ্ঞান তার ঠিক থাকতো না। আমার ছেলে মেয়েরা তার কিছুই পায়নি। না গায়ের রঙ, না তার স্বভাব।' বড় চাচী দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। আকাশ কি পেয়েছে? প্রশ্ন করে রুনু। সে বসেছে বিছানায়, গুটিশুটি মেয়ে হয়ে। তাকিয়ে আছে অদ্ভুত এক দৃষ্টি সাথে নিয়ে। বড় চাচী ফের দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন- সব। আমি মুচকি হাসি। এরা তাহলে আমাকে ভালোও বলে!
বেরিয়ে এলাম শেষ বিকেলে। রানা খুব বোরড হয়ে গেছে বুঝতে পারলাম। রুনু আমাদের এগিয়ে দিতে এলো ষ্ট্যান্ড পর্যন্ত। শরীরে আলস্য এনে রিক্সায় ওঠলাম। রানার সাথে কৌশল বিনিময় করে সে বিদায় দিলো। আমি শেষবারের মতো তাকালাম। হুমমম। সে কিছু বললোনা। কিছু তার বলারও নেই। আমারওনা। রিক্সা চলতে শুরু করেছে। সে হয়তো দাঁড়িয়ে আছে। হয়তোবা না। এটা নিয়ে ভাবার প্রয়োজনবোধ করছিনা। সে সুখে আছে, ঢেড় ভালো আছে। চিরকাল সুখে থাকুক সে কামনা করি। আমার প্রতিটি একাকিত্বের জ্বালা আমি নিজের জন্য রেখেছি। এর ছোঁয়া অন্য কাউকে স্পর্শ করুক সেটা চাইনা। এদের কেউ কেউ হয়তো নিরবে খুব দরদ দেখায়। সেটা আমি কেয়ার করিনা। মানুষের সব ফাঁকিবাজি নি:শ্বাসের সামনে এলে বুঝা যায়। অন্য কোনো ভাবে জানা সম্ভব নয়। তাই কোন মানুষ কেমন সেটা আমি ভালো বুঝি।
-- ৫ ডিসেম্বর, ২০০৭ইং।
Labels:
চলে যাচ্ছে দিন...,
ছেঁড়া মানুষের গল্প,
না-মানুষ,
যন্ত্রণা
Monday, December 3, 2007
এক আকাশ, স্বপ্ন
মিথুন রাশির জাতকেরা কেমন হয়? আকাশ অবশ্য কখনো রাশি-টাশি নিয়ে অতো গভিরভাবে নাড়াচাড়ি করেনি। তবে নিজেকে দিয়ে সে যা বুঝে তা হলো- মিথুন রাশির জাতকেরা হয়- প্রচন্ড ঘাড়ট্যারা, আত্মভোলা এবং চাপা রোমান্টিক। অন্যকিছুও হতে পারে। তবে ওর ব্যাপারটা আলাদা। সে প্রিয় মানুষকে যেমন ভালোবাসতে পারে, তেমন ঘৃনা করতে পারেনা। ভালোবাসা সম্পর্কে তার যে ধ্যনধারনা সেটাও কিন্তু কমজোরী নয়। তার মতে, হাসনাহেনার সুভাশ ফুলে নাক ডুবিয়ে পাওয়া সম্ভব নয়। এ থেকে যতদূরে তুমি ছুটবে তত তুমি এর সুভাশ পাবে। আকাশ দূর থেকে সুভাশ নিতে ভালোবাসে। এ বয়সে অনেকেই এক-আধটু ভুলভাল করে থাকে। তবু, কারো জন্য উন্মুখ হয়ে অপেক্ষায় থাকা, দিবানিশি পরস্পর বিরোধী দুটো স্বত্ত্বার সাথে যুদ্ধ করা, নিজের সমস্ত ধ্যনধারনার ঘষামাজা করা... ভুলভালের মধ্যে পরেনা। যদিও আকাশ অপেক্ষাকে মনে-প্রাণে ঘৃনা করে। তারপরও সে কারো কারো জন্য হঠাৎ হঠাৎ অকারণে অপেক্ষা করে। কেন করে সে তা জানেনা।
মানুষের এক সহজাত প্রবৃত্তি হলো- যা সে পায়না তার জন্য সে ভিষন হায়-হুতাশ করে। যা সহজে পায় তা অবজ্ঞা ভরে দূরে সরিয়ে রাখে। আকাশ নিজেকে কম চেনেনা। তবু, মাঝে মাঝে তার নিজেরে নিদারুন করুন মনে হয়। প্রচন্ড অসহায় লাগে তখন। ভিষন একা আর ভিষন মুমূর্ষ মুহুর্ত্বে মানুষ প্রিয়জনের কাছে আশ্রয় চায়। সে চায়না। সে ভিষন মূর্খ পুজারী। সে ফুল দেখবে কিন্তু ছিঁড়বে না। সে ফুল নিজের করে চাইবে কিন্তু পাহারা দিবে না, গাছে পানি দেবে না।
মানুষই সম্ভবত একমাত্র জীব যে নিজেকে খুব দ্রুত বদলে ফেলতে পারে। আকাশ সেটা পারেনা। তার ধারনা মানুষ শুধুমাত্র তার বাইরের রূপটাই বদলাতে পারে, ভেতরটা নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে তার বেশ ধান্দা লাগে। যা সে জানছে কিংবা যা সে ভাবছে তার পুরোটাই মিথ্যে নয়তো? মানুষতো প্রতিটি সেকেন্ড মরছে। প্রতিটি সেকেন্ড মানুষ এক একটা নতুন মানুষরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। মানুষের ভেতরটাও বদলে যেতে পারে। মানুষের বাইরের পঁচন ভেতরে চলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আজকাল ওর চিন্তা-ভাবনারা বড্ড বেশি ঠোঁটকাটা হয়েছে। তবু তারা মানুষকে ভালোবাসে। কারণ মানুষকে তাদের যান্ত্রিক আর কৃত্রিম বলে মনে হয়না। প্রতিটি মানুষই রহস্যঘেরা এক আঁধার। ওদের ভেতরটা শতোমুখী ইচ্ছে, স্বপ্ন, ঘৃনা, ভালোবাসায় ঠাসা। কিছু মানুষ আদতেই একটু অন্যরকম হয়। তারপরও অন্যসব মানুষের মতইতো তারা। তারা মরছে। প্রতিটি সেকেন্ড। প্রতিটি সেকেন্ড তারা নতুন করে কিছু ভাবছে। প্রতিটি মুহুর্তে তারা স্বপ্ন দেখছে নতুন কিছু নিয়ে। প্রতিটি সেকেন্ড তারা নতুন করে ভাবনার ঘুড়ি উড়োচ্ছে। মানুষ তাই সাংঘাতিক এক রাহস্যিক বিষয়। একজন মানুষের সাথে অন্য এক মানুষের কোনো মিল মহব্বত থাকার কথা নয়। তবু অনেক কিছু মিলে যায়। সেটাতো অন্য সব ক্ষেত্রেও মিলবে। শামুককে তার শক্ত খোলস দেখে যেভাবে সনাক্ত করা যায় তেমন মানুষকেও চেনা কঠিন কিছু নয়। শামুকের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে ধীরালয়ে হেঁটে চলা, কোনো বিপদ দেখলে খোলশের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে ফেলা। তাই কোনো শামুক যদি মনে করে যে অমুক শামুকের সাথে তার বেশ মেলে সেটা কিন্তু যুক্তিহীন নয়। যুক্তিহীন হবে তখনই যখন কেউ বলবে- অমুক শামুককে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি, তখন। আকাশ অবশ্য এই ব্যাপারটা নিয়ে মনে মনে খুব হাসে। সে হয়তো কিছু মানুষকে হাড়ে হাড়েই চেনে। তার রহস্যঘেরা যন্ত্রণাময় জীবনে এ ব্যাপারটা একটা বিনোদন। পাখি যতই তুমি উড়ে বেড়াও, তোমায় আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। ইচ্ছে করলে তোমায় আমি উড়িয়ে দিতে পারি, ইচ্ছে করলে তোমায় খাঁচায় পুরতেও পারি... আকাশ মাঝে মাঝে খুব ভাবে উপেক্ষা সরিয়ে বুকে টেনে তাকে এসব শুনাতে। সে কয়েক সেকেন্ড। তারপর ভুলে যায়।
বর্ষা শেষ হয়েছে। বৃষ্টি নেই। বৃষ্টির টুপটাপটুপটাপ শব্দেরাও নেই। বেঁচে গেছি, আকাশ হাসে, একমনে। বৃষ্টির শব্দে তার বিয়ে করতে ইচ্ছে করে। এ ব্যাপারটা চিন্তা করলেই সে চুপসে যায়। তারপর নি:শব্দে হাঁটতে থাকে গন্তব্যহীন। বিয়ে করতে চাইলেতো আর করা যায়না। আকাশের নিজেরে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতা নাই। তবু আকাশ বিয়ে করবে, বুড়ো বয়সে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটার সময়। তার একটা ইচ্ছে আছে বিয়ের পর বুড়িকে প্রতিদিন একটি করে চিঠি লিখবে! কি লিখবে তাতে? আকাশ যেমন মানুষ- লিখবে, আজকে আলু-ভর্তা সবচে' ফালতু হয়েছে। এমন কান্না-কাটি রান্না করলে দেশান্তরে যাবো। কিংবা। কিংবা। কিংবা? হা হা হা। এমনই। আকাশের ভালোবাসা এবং স্বপ্নো তীরহিত মেঘের মতো। ও ছোঁয়া যায়, একটু অন্যরকম করে। সুপ্ত ভালোবাসাটাও কেড়ে নেয়া যায়... বিমূর্ত ভালোবেসে।
মানুষের এক সহজাত প্রবৃত্তি হলো- যা সে পায়না তার জন্য সে ভিষন হায়-হুতাশ করে। যা সহজে পায় তা অবজ্ঞা ভরে দূরে সরিয়ে রাখে। আকাশ নিজেকে কম চেনেনা। তবু, মাঝে মাঝে তার নিজেরে নিদারুন করুন মনে হয়। প্রচন্ড অসহায় লাগে তখন। ভিষন একা আর ভিষন মুমূর্ষ মুহুর্ত্বে মানুষ প্রিয়জনের কাছে আশ্রয় চায়। সে চায়না। সে ভিষন মূর্খ পুজারী। সে ফুল দেখবে কিন্তু ছিঁড়বে না। সে ফুল নিজের করে চাইবে কিন্তু পাহারা দিবে না, গাছে পানি দেবে না।
মানুষই সম্ভবত একমাত্র জীব যে নিজেকে খুব দ্রুত বদলে ফেলতে পারে। আকাশ সেটা পারেনা। তার ধারনা মানুষ শুধুমাত্র তার বাইরের রূপটাই বদলাতে পারে, ভেতরটা নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে তার বেশ ধান্দা লাগে। যা সে জানছে কিংবা যা সে ভাবছে তার পুরোটাই মিথ্যে নয়তো? মানুষতো প্রতিটি সেকেন্ড মরছে। প্রতিটি সেকেন্ড মানুষ এক একটা নতুন মানুষরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। মানুষের ভেতরটাও বদলে যেতে পারে। মানুষের বাইরের পঁচন ভেতরে চলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আজকাল ওর চিন্তা-ভাবনারা বড্ড বেশি ঠোঁটকাটা হয়েছে। তবু তারা মানুষকে ভালোবাসে। কারণ মানুষকে তাদের যান্ত্রিক আর কৃত্রিম বলে মনে হয়না। প্রতিটি মানুষই রহস্যঘেরা এক আঁধার। ওদের ভেতরটা শতোমুখী ইচ্ছে, স্বপ্ন, ঘৃনা, ভালোবাসায় ঠাসা। কিছু মানুষ আদতেই একটু অন্যরকম হয়। তারপরও অন্যসব মানুষের মতইতো তারা। তারা মরছে। প্রতিটি সেকেন্ড। প্রতিটি সেকেন্ড তারা নতুন করে কিছু ভাবছে। প্রতিটি মুহুর্তে তারা স্বপ্ন দেখছে নতুন কিছু নিয়ে। প্রতিটি সেকেন্ড তারা নতুন করে ভাবনার ঘুড়ি উড়োচ্ছে। মানুষ তাই সাংঘাতিক এক রাহস্যিক বিষয়। একজন মানুষের সাথে অন্য এক মানুষের কোনো মিল মহব্বত থাকার কথা নয়। তবু অনেক কিছু মিলে যায়। সেটাতো অন্য সব ক্ষেত্রেও মিলবে। শামুককে তার শক্ত খোলস দেখে যেভাবে সনাক্ত করা যায় তেমন মানুষকেও চেনা কঠিন কিছু নয়। শামুকের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে ধীরালয়ে হেঁটে চলা, কোনো বিপদ দেখলে খোলশের ভেতর নিজেকে গুটিয়ে ফেলা। তাই কোনো শামুক যদি মনে করে যে অমুক শামুকের সাথে তার বেশ মেলে সেটা কিন্তু যুক্তিহীন নয়। যুক্তিহীন হবে তখনই যখন কেউ বলবে- অমুক শামুককে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি, তখন। আকাশ অবশ্য এই ব্যাপারটা নিয়ে মনে মনে খুব হাসে। সে হয়তো কিছু মানুষকে হাড়ে হাড়েই চেনে। তার রহস্যঘেরা যন্ত্রণাময় জীবনে এ ব্যাপারটা একটা বিনোদন। পাখি যতই তুমি উড়ে বেড়াও, তোমায় আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। ইচ্ছে করলে তোমায় আমি উড়িয়ে দিতে পারি, ইচ্ছে করলে তোমায় খাঁচায় পুরতেও পারি... আকাশ মাঝে মাঝে খুব ভাবে উপেক্ষা সরিয়ে বুকে টেনে তাকে এসব শুনাতে। সে কয়েক সেকেন্ড। তারপর ভুলে যায়।
বর্ষা শেষ হয়েছে। বৃষ্টি নেই। বৃষ্টির টুপটাপটুপটাপ শব্দেরাও নেই। বেঁচে গেছি, আকাশ হাসে, একমনে। বৃষ্টির শব্দে তার বিয়ে করতে ইচ্ছে করে। এ ব্যাপারটা চিন্তা করলেই সে চুপসে যায়। তারপর নি:শব্দে হাঁটতে থাকে গন্তব্যহীন। বিয়ে করতে চাইলেতো আর করা যায়না। আকাশের নিজেরে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতা নাই। তবু আকাশ বিয়ে করবে, বুড়ো বয়সে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটার সময়। তার একটা ইচ্ছে আছে বিয়ের পর বুড়িকে প্রতিদিন একটি করে চিঠি লিখবে! কি লিখবে তাতে? আকাশ যেমন মানুষ- লিখবে, আজকে আলু-ভর্তা সবচে' ফালতু হয়েছে। এমন কান্না-কাটি রান্না করলে দেশান্তরে যাবো। কিংবা। কিংবা। কিংবা? হা হা হা। এমনই। আকাশের ভালোবাসা এবং স্বপ্নো তীরহিত মেঘের মতো। ও ছোঁয়া যায়, একটু অন্যরকম করে। সুপ্ত ভালোবাসাটাও কেড়ে নেয়া যায়... বিমূর্ত ভালোবেসে।
Labels:
আশা-নিরাশা,
ছেঁড়া মানুষের গল্প,
না-মানুষ,
মেঘবালিকা,
স্বপ্ন সবুজ
Sunday, December 2, 2007
ভুল
নেট দুনিয়ায় আমার সবচেয়ে বড় দুটো ভুলের মধ্যে একটি হলো- রাজিবকে ফেসবুকে এ্যাড করা এবং একজনের সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দেয়া।
Saturday, December 1, 2007
উপেক্ষা
উপেক্ষা
--নির্মলেন্দু গুণ
বিরহ চাই,
ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷
তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারি
সমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা প্রেম; যদি চাও
ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷
আমি কি ডরাই সখি,
ভালোবাসা ভিখারি বিরহে?
--নির্মলেন্দু গুণ
বিরহ চাই,
ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷
তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারি
সমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা প্রেম; যদি চাও
ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷
আমি কি ডরাই সখি,
ভালোবাসা ভিখারি বিরহে?
Labels:
চলে যাচ্ছে দিন...,
ছেঁড়া মানুষের গল্প,
মেঘবালিকা,
যন্ত্রণা
Friday, November 30, 2007
মৃত রাতের অসুস্থ্যতা
মশা এরোসোলকে থোড়াই কেয়ার করে। এ ছিটিয়ে কোনো ফায়দা হয়না। কিছু মশা অবশ্য ডিগবাজি খেয়ে এরোসোলের উপকারীতা জাহির করার চেষ্টা করে, কিন্তু ঐ পর্যন্তই। ডিগবাজি খাওয়া মশারা এমনিই মরে, এরোসোল ছিটালেই কি, না ছিটালে কি। আমার সাথে কমজোরী মশাদের কিছুটা মিল আছে। আমার উথান কি, আবার পতনই বা কি? আমিতো পতিত হয়েই আছি। পাহাড়াদারদের হুইশেল শুনতে পাচ্ছি। মৃত রাত। শরীরের সব স্নায়ু আরাম চাচ্ছে, মাথার প্রতিটি অনু-পরমানু ঘুম চাচ্ছে, কিন্তু ঘুম আসছে না। এ আমার দোষ না। এ এক ব্যামো। এ ব্যামোর কোনো চিকিৎসা নেই।
নিরাময়হীন ব্যামো নিয়ে সুখে আছি। সারাদিন কেটেছে ব্যস্ততায়। সকালেতো ঘুম থেকে উঠতে পারিনা। একজন ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলো। সাথে অবশ্য ফ্রি কিছু টিপস। ও আমার দ্বারা হবেনা। সাউন্ড হেলথ এবং মাইন্ড নিয়ে দিব্বি সুস্থ্য সবল একজন মানুষ আমি। আমার আবার বাড়তি কিছু করার প্রয়োজন কি? উঠেই পিসিটা অন করলাম। গান বাজছে- 'এই নীল মনিহার'। ভালো একটা গান। ঠিক নয়টায় আমরা পল্লবী বাসষ্ট্যান্ডে মিলিত হলাম। আজকে আমার সহকারী বাংলা কলেজের এক ছোট ভাই। ছেলেটা দারুন। কথা বলে টনটন এবং অবশ্য খুব সুন্দর সৎ ছেলে। আই লাইক হীম। ঘটনার মতো ঘটনা ঘটেছে অনেক। ওসব বলতে ইচ্ছে করছে না। নিজের কথা বলি। হরিবল। সবইতো নিজের কথা! শুরু করি তবে পরের কথা। বড় চাচা ইন্তেকাল ফরমাইবেন শিঘ্রির। ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আমায় বারবার ফোন করা হচ্ছে। বারবার বলেছি- আসছি। যাওয়া হচ্ছেনা। বুঝতে পারছিনা যাবো কি যাবো না। বউ থাকলে ভালো হতো। জোর করে অলস এই আমাকে ঐ বাড়িতে পাঠাতো। কাছেইতো। গাজীপুর অতো দূর না। কিন্তু আমি ঐ ব্যাটাকে প্রচুর ঘৃনা করি। প্রচুর। মরুক। উহু এখন অনুভূতিটা অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। আর যাইহোক, জ্ঞাতী গুষ্ঠিতো। রক্তের টান এই তবে! বুকটা একটু কাঁপলো কি? ধুররররর ওসবে আমি বিশ্বাস করিনা।
আম্মা ভালো নেই। সে আমি ভালো বুঝি। অপারেশন কবে করাবো? জবাব জানা নাই। সবাই নিশ্চুপ। কিন্তু আম্মা যেটা ভাবছে সেটা কখনোই হবেনা। সে আমি জানি। আমি আমার নিয়তি পরির্বতন করতে পারি। এসব ভাবতে গেলে সব জট পাকিয়ে যায়। ইসসস বউ থাকলে ভালো হতো। বউ আমাকে পিটুনি দিয়ে ঠিক করে দিতো। আম্মার ছেলে বানিয়ে ছাড়তোই ছাড়তো। কিইবা আর করার। বউ নেই। তাই সংসার দরদী হতে পারছিনে।
সে-যাইহোক, বেশি ভাবের কথা বলা শুরু হয়ে গেছে। ওসব বাদ। নতুন কিছু চিন্তা করা যাক। ভাবনারা অমনই, তুমি ওকে পাশে বসিয়ে আদর করবে, সে উঠবে তোমার কোলে। কোলে উঠিয়ে আদর করবে, ও উঠে যাবে তোমার ঘাড়ে, তারপর তোমার মাথায় উঠে হিসু করে দিবে। ভাবনারা অমনই। ভাবতে আমার ঘৃনা লাগেনা। আমি ভাবতে থাকি। কতো কিছু। এইযে ঘুম আসছেনা কেন সেটা নিয়েও ভাবছি। এতো শক্ত হৃদয় নিয়ে কিকরে বেঁচে আছি সেটা নিয়েও ভাবছি। সমানে ভাবছি ফালতু কিছু মানুষ নিয়ে মাঝে মাঝে কেনো ভাবি, সেটা নিয়েও। হুররর আমি কি ভাবের কারখানা নাকি? অতো ভাবনা ভেবে আমারই বা কি লাভ! উহু ভুল বললাম। লাভ আছে বৈকি এবং আমার সাথে যে পাড়ার নুনু পাগলার দারুন মিল সে খবরও আমি রাখি। হা হা হা হা হা হা।
ও-য়েল। বেশি আনন্দ করা ভালো না। বেশি চিনি দিয়ে চা বানালে সেটা ভালো লাগেনা। চায়ের সাথে থাকবে, পরিমান মতো চিনি, দুধ আর লিকার। যেকোন একটার উপস্থিতি বেড়ে গেলেই বাঁধবে বিপত্তি। আমার লাইফে অবশ্য বিপত্তিটাই বেশি। কখনো ভালোবাসা উথলে যায়, কখনো ঘৃনা। কখনো প্রাপ্তি সীমাহীন, কখনো অপ্রাপ্তি। কখনো বসন্ত, কখনো ধু ধু শূণ্যতা। ধুররর শালা মর তুই কলাগাছে ফাঁস দিয়ে। সবচেয়ে সিক্রেট একটা কথা বলি তোকে- আমি মানুষটা অবশ্যই খারাপ না। কিন্তু আবার ভালোও নই। আছেনা কিছু অসুস্থ্য মানুষ, পৃথিবীতে, যারা যতোসব অসুস্থ্য কথা ভাবে- আমি ঠিক তেমন একজন মানুষ। হুমমমম আমি অসুস্থ্য একজন মানুষ। আমার মতো মানুষের পৃথিবীতে না থাকাই বেটার। প্রশ্ন করিস না অসুস্থ্যটা আবার কেমনতর অসুস্থ্যতা। করে ফেলেছিস?! ঠি...ক আছে, তোকে বলতে পারি, কারণ তোকে আমি ভালো পাই। অসুস্থ্যতা বুঝতে হলে- আমার সামনে তোকে বসতে হবে। মুখোমুখি। আমার হাত ধরতে হবে। উহু এ হাতের পর নিরাপত্তা খুঁজিস না। ঐ জিনিসটা হৃদযন্ত্রের কাছাকাছি কোথাও তুলে রাখা আছে। এবার আমার চোখে তাকিয়ে তোকে বিশ্ব দেখতে হবে। আ-মা-র বিশ্ব। তোর মতো করে। আমার শ্বাস তোকে উপলব্ধি করতে হবে। আমার সবুজ তোকে অনুভব করতে হবে। আমার ভালো লাগা, তোর আঁচলে বাঁধতে হবে। তোর চোখের ঘন মায়ায় আলো রেখে আমায় ভালোবাসতে হবে... গভির ভাবে... কিছুটা আমার মতো করে... কিছুটা তোর মতো করে...।
চিৎকার-১ : 'তুই' শব্দের সাথে কোন জীবিত মানুষের সম্পর্ক নেই।
চিৎকার-২ : যন্ত্রণাটা লেখা হয়েছে ২৯ নভেম্বরের মৃত রাতে।
নিরাময়হীন ব্যামো নিয়ে সুখে আছি। সারাদিন কেটেছে ব্যস্ততায়। সকালেতো ঘুম থেকে উঠতে পারিনা। একজন ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলো। সাথে অবশ্য ফ্রি কিছু টিপস। ও আমার দ্বারা হবেনা। সাউন্ড হেলথ এবং মাইন্ড নিয়ে দিব্বি সুস্থ্য সবল একজন মানুষ আমি। আমার আবার বাড়তি কিছু করার প্রয়োজন কি? উঠেই পিসিটা অন করলাম। গান বাজছে- 'এই নীল মনিহার'। ভালো একটা গান। ঠিক নয়টায় আমরা পল্লবী বাসষ্ট্যান্ডে মিলিত হলাম। আজকে আমার সহকারী বাংলা কলেজের এক ছোট ভাই। ছেলেটা দারুন। কথা বলে টনটন এবং অবশ্য খুব সুন্দর সৎ ছেলে। আই লাইক হীম। ঘটনার মতো ঘটনা ঘটেছে অনেক। ওসব বলতে ইচ্ছে করছে না। নিজের কথা বলি। হরিবল। সবইতো নিজের কথা! শুরু করি তবে পরের কথা। বড় চাচা ইন্তেকাল ফরমাইবেন শিঘ্রির। ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আমায় বারবার ফোন করা হচ্ছে। বারবার বলেছি- আসছি। যাওয়া হচ্ছেনা। বুঝতে পারছিনা যাবো কি যাবো না। বউ থাকলে ভালো হতো। জোর করে অলস এই আমাকে ঐ বাড়িতে পাঠাতো। কাছেইতো। গাজীপুর অতো দূর না। কিন্তু আমি ঐ ব্যাটাকে প্রচুর ঘৃনা করি। প্রচুর। মরুক। উহু এখন অনুভূতিটা অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। আর যাইহোক, জ্ঞাতী গুষ্ঠিতো। রক্তের টান এই তবে! বুকটা একটু কাঁপলো কি? ধুররররর ওসবে আমি বিশ্বাস করিনা।
আম্মা ভালো নেই। সে আমি ভালো বুঝি। অপারেশন কবে করাবো? জবাব জানা নাই। সবাই নিশ্চুপ। কিন্তু আম্মা যেটা ভাবছে সেটা কখনোই হবেনা। সে আমি জানি। আমি আমার নিয়তি পরির্বতন করতে পারি। এসব ভাবতে গেলে সব জট পাকিয়ে যায়। ইসসস বউ থাকলে ভালো হতো। বউ আমাকে পিটুনি দিয়ে ঠিক করে দিতো। আম্মার ছেলে বানিয়ে ছাড়তোই ছাড়তো। কিইবা আর করার। বউ নেই। তাই সংসার দরদী হতে পারছিনে।
সে-যাইহোক, বেশি ভাবের কথা বলা শুরু হয়ে গেছে। ওসব বাদ। নতুন কিছু চিন্তা করা যাক। ভাবনারা অমনই, তুমি ওকে পাশে বসিয়ে আদর করবে, সে উঠবে তোমার কোলে। কোলে উঠিয়ে আদর করবে, ও উঠে যাবে তোমার ঘাড়ে, তারপর তোমার মাথায় উঠে হিসু করে দিবে। ভাবনারা অমনই। ভাবতে আমার ঘৃনা লাগেনা। আমি ভাবতে থাকি। কতো কিছু। এইযে ঘুম আসছেনা কেন সেটা নিয়েও ভাবছি। এতো শক্ত হৃদয় নিয়ে কিকরে বেঁচে আছি সেটা নিয়েও ভাবছি। সমানে ভাবছি ফালতু কিছু মানুষ নিয়ে মাঝে মাঝে কেনো ভাবি, সেটা নিয়েও। হুররর আমি কি ভাবের কারখানা নাকি? অতো ভাবনা ভেবে আমারই বা কি লাভ! উহু ভুল বললাম। লাভ আছে বৈকি এবং আমার সাথে যে পাড়ার নুনু পাগলার দারুন মিল সে খবরও আমি রাখি। হা হা হা হা হা হা।
ও-য়েল। বেশি আনন্দ করা ভালো না। বেশি চিনি দিয়ে চা বানালে সেটা ভালো লাগেনা। চায়ের সাথে থাকবে, পরিমান মতো চিনি, দুধ আর লিকার। যেকোন একটার উপস্থিতি বেড়ে গেলেই বাঁধবে বিপত্তি। আমার লাইফে অবশ্য বিপত্তিটাই বেশি। কখনো ভালোবাসা উথলে যায়, কখনো ঘৃনা। কখনো প্রাপ্তি সীমাহীন, কখনো অপ্রাপ্তি। কখনো বসন্ত, কখনো ধু ধু শূণ্যতা। ধুররর শালা মর তুই কলাগাছে ফাঁস দিয়ে। সবচেয়ে সিক্রেট একটা কথা বলি তোকে- আমি মানুষটা অবশ্যই খারাপ না। কিন্তু আবার ভালোও নই। আছেনা কিছু অসুস্থ্য মানুষ, পৃথিবীতে, যারা যতোসব অসুস্থ্য কথা ভাবে- আমি ঠিক তেমন একজন মানুষ। হুমমমম আমি অসুস্থ্য একজন মানুষ। আমার মতো মানুষের পৃথিবীতে না থাকাই বেটার। প্রশ্ন করিস না অসুস্থ্যটা আবার কেমনতর অসুস্থ্যতা। করে ফেলেছিস?! ঠি...ক আছে, তোকে বলতে পারি, কারণ তোকে আমি ভালো পাই। অসুস্থ্যতা বুঝতে হলে- আমার সামনে তোকে বসতে হবে। মুখোমুখি। আমার হাত ধরতে হবে। উহু এ হাতের পর নিরাপত্তা খুঁজিস না। ঐ জিনিসটা হৃদযন্ত্রের কাছাকাছি কোথাও তুলে রাখা আছে। এবার আমার চোখে তাকিয়ে তোকে বিশ্ব দেখতে হবে। আ-মা-র বিশ্ব। তোর মতো করে। আমার শ্বাস তোকে উপলব্ধি করতে হবে। আমার সবুজ তোকে অনুভব করতে হবে। আমার ভালো লাগা, তোর আঁচলে বাঁধতে হবে। তোর চোখের ঘন মায়ায় আলো রেখে আমায় ভালোবাসতে হবে... গভির ভাবে... কিছুটা আমার মতো করে... কিছুটা তোর মতো করে...।
চিৎকার-১ : 'তুই' শব্দের সাথে কোন জীবিত মানুষের সম্পর্ক নেই।
চিৎকার-২ : যন্ত্রণাটা লেখা হয়েছে ২৯ নভেম্বরের মৃত রাতে।
Labels:
চলে যাচ্ছে দিন...,
ছেঁড়া মানুষের গল্প,
মেঘবালিকা,
যন্ত্রণা,
স্বপ্ন সবুজ
Subscribe to:
Posts (Atom)